রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য গত ২৯ মে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস)। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায় দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডির ক্রিসেন্ট রোডের একটি বাড়ি। ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. হাসানের ছেলে এই বাড়িতে থাকেন। বাড়ির তৃতীয় তলায় ছেলের বাসার ড্রয়িং রুম দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ধানমন্ডির গ্রীন লাইফ হাসপাতালের ঠিক পাশেই ক্রিসেন্ট রোড। রাস্তা ধরে দুই–তিন মিনিট ভেতরে এগোলেই ডান হাতে একটি গলি। গলির শেষ প্রান্তে ‘১৩১/১, এ’ নম্বর বাড়ি। এই বাড়ির তিনতলায় বাংলাদেশ বেকার সমাজের (বাবেস) কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে দেখা যায়, বাড়ির মূল প্রবেশপথের বাঁ পাশের দেয়ালে টাঙানো ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজের (বাবেস)’ সভাপতি মো.

হাসানের ছবিসংবলিত একটি বড় ব্যানার। ভেতরে ঢুকতেই ওপরে ওঠার সরু সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেল আরেকটি ছোট ব্যানার। এই ব্যানারে রয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী এবং সভাপতি হাসান চৌধুরী দুজনেরই ছবি।

ব্যানারে সাঁটানো বাসার দরজায় কড়া নাড়তেই বের হয়ে আসেন নাদিয়া খানম নামের এক নারী। দলটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি নিজেকে দলটির সভাপতি মো. হাসানের পুত্রবধূ পরিচয় দেন। বাসাটিতে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চলে কি না, জিজ্ঞাসা করতেই দরজা খুলে ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

ভেতরে প্রবেশের পর দেখা যায়, একটি বড় ড্রয়িং রুমের মেঝের এক পাশে একটি বিছানা। বিছানার পাশেই রয়েছে একটি টেবিল আর দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার। টেবিলের ওপরের দিকে ছোট ছোট আরও দুটি দলীয় ব্যানার। ড্রয়িং রুমের অপর পাশে আরও দুটি থাকার কক্ষ ও একটি রান্নাঘর আছে। তবে শুধু ড্রয়িং রুমেই দলের কার্যক্রম চলে। বাকি কক্ষ দুটিতে দলটির সভাপতি মো. হাসানের ছেলে ও পুত্রবধূ থাকেন।

বাসায় দলের কার্যক্রমের বিষয়ে নাদিয়া খানম জানান, এটি মূলত তাঁদের বাসা। স্বামীর সঙ্গে কয়েক বছর ধরে সেখানে থাকছেন। দলের সভাপতি মো. হাসান তাঁর শ্বশুর। তবে তিনি ওই বাসায় থাকেন না। মাঝে মাঝে লোকজনের সঙ্গে বাসাটিতে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম সেখানে হয় না।

পরে যোগাযোগ করা হলে দলটির সভাপতি মো. হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ বেকার সমাজ রাজনীতি করে আসছে। আমি কয়েকবার বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি ২০২২ সালে। নিবন্ধন না পাওয়ায় এবার আবার আবেদন করেছি। দেশের বেকার সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণে আমাদের দল কাজ করছে।’

ছেলের বাসাকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে মো. হাসান বলেন, ‘বড় কয়েকটি দল ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো দলেরই সেভাবে কার্যালয় নেই। বাসাটিতে আমরা অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছি। পাশের কক্ষে ছেলে ও পুত্রবধূ থাকে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১০ মার্চ আগ্রহী নতুন দলের কাছ থেকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে নির্বাচন কমিশন। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করে। পরে এনসিপিসহ কিছু দলের অনুরোধে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়। এই সময়সীমা গত রোববার শেষ হয়।

শেষ দুই মাসে আবেদন জমা পড়ে ৮২টি। এর মধ্যে রোববার শেষ দিনেই আবেদন জমা পড়ে ৪২টি। নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৭টি দল। দুই দফায় নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়া দলগুলোর নামের তালিকা সোমবার প্রকাশ করেছে কমিশন।

আবাসন কোম্পানির অফিস ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির কার্যালয়আবাসন কোম্পানির অফিসকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দলট র স দল র ক

এছাড়াও পড়ুন:

যাচাই ছাড়াই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাসনাতের বক্তব্য মানহানিকর: দুদক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেইসবুকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘ঘুষ দাবি’ করা নিয়ে যে পোস্ট দিয়েছেন সেটিকে ‘যাচাই-বাছাইহীন’ ও মানহানিকর বলে বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাত ৯টায় এনসিপি নেতার এ পোস্টের প্রতিবাদ জানিয়ে দুদক বলেছে, কমিশনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংস্থাটিকে দোষারোপ করায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

প্রতারণার বিষয়ে আগে থেকে দুদক সতর্কবার্তা দিয়ে আসছে তুলে ধরে কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক আরো বলেছে,  “এ বিষয়ে সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।”

প্রতারণার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে এতে বলা হয়েছে, এর আগে এমন প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

“এরূপ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করে যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।”

এর আগে হাসনাত তার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তার ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয় আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকা পয়সার অভাব থাকার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।” 

এ পোস্টের সঙ্গে তিনি ওই চিকিৎসকের রেকর্ড করা ফোনালাপের তিনটি অডিও ভিডিও আকারে পোস্ট করেন।

হাসনাত তার ফেইসবুক পোস্টে আরও লেখেন, “দুদকের সর্বনিম্ন রেট না কি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চায়, টাকা দিবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের উপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করাদের কাছে থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে।”

“দুদকের এইসব কাজকারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই, কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।”

হাসনাত আরো লেখেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের উপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?”

“ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে, আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?”

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ