বরগুনায় ঘরে ঘরে মিলছে এডিসের লার্ভা, অবস্থা ভয়াবহ
Published: 25th, June 2025 GMT
বরগুনায় ঘরে ঘরে মিলছে এডিস মশার লার্ভা। জমে থাকা বৃষ্টির পানি ও সংরক্ষণ করা বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হচ্ছে এডিসের লার্ভা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন না হলে শুধুমাত্র মশক নিধনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ শুধু কঠিন কাজই নয়, এটি পুরোপুরি অসম্ভব। এদিকে জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন বলছে, যে বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের আনা হবে আইনের আওতায়।
আইইডিসিআরের তথ্য বলছে, দেশে এ বছর ডেঙ্গু শনাক্ত সাত হাজারের মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি শুধুমাত্র বরগুনায়। ৩০ মৃত্যুর ২১ জনই এ জেলার বাসিন্দা। এরইমধ্যে বরগুনাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ অবস্থা পিছনের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
ডেঙ্গু মহামারীর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, শীত মৌসুমে সুপেয় পানির সংকট কাটাতে বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলায় ঘরে ঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে বৃষ্টির পানি। আর এসব পানিতেই তৈরি হয়েছে এডিস মশার লার্ভা। ভয়াবহ এই অবস্থার মধ্যে পড়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মশার উৎপাতে ঘর ছাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বরগুনা সদরের আমতলারপাড় এলাকার বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র জয়ধর বলেন, “মশার উৎপাতে ঘর ছাড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। মশারির বাইরে বের হলেই মশার কামড়। কয়েলেও কাজ হচ্ছে না।”
একই এলাকার বাসিন্দা আবু সালেহ মুসা বলেন, “বসত ঘরে মশার পরিমাণ এত বৃদ্ধি পেয়েছে মনে হয় ঘরটা মশাদের আমরা ভাড়া থাকি। পৌর প্রশাসকরা ডেঙ্গু নিধনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি। মশা নিধনে বরাদ্দ আছে শুনেছি। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখিনি।”
একই অবস্থা দক্ষিণ মনসাতলী এলাকার বাসিন্দাদের। এই এলাকার বাসিন্দা মৃদুল, জাহিদ, কলি, সানি রাসেলসহ একাধীক স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি ঘরে ঘরে মশার বাসস্থান হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে ডেঙ্গু রোগী।
মনসাতলী এলাকার মো.
এদিকে এডিসের লার্ভা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি না থাকলেও মাঠে দেখা গেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তাদের দাবি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি ও লার্ভা নিধনে কাজ করছেন তারা।
বরগুনা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এর উপ যুব প্রধান মো. সজিব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রতিটি ঘরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর সব ঘরেই এডিসের লার্ভা পেয়েছি আমরা। অসচেতন উপায়ে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা তাদের সচেতন করছি, পাশাপাশি এডিসের লার্ভা নিধন করছি।”
উপকূলীয় এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ অনুসন্ধান শেষে আইইডিসিআরের অনুসন্ধানকারী দলনেতা ডা. তারিকুল ইসলাম লিমন বলেন, “সুপেয় পানির সংকট দূর করতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে প্রাণ হারাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। আমরা অনুসন্ধান শেষ করেছি। এখন একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের পরিকল্পনা করছি।”
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফাত্তাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, “বাসিন্দাদের সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবকরাও সহায়তা করছেন। পৌর প্রশাসকদের সমন্বয়ে জোরদার করা হবে মশক নিধন কার্যক্রম।”
বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “অনেক বড় এলাকা। আমরা চিহ্নিত করে পরিকল্পিতভাবে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। একটু সময় লাগছে কিন্তু সমাধান হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে, আমাদের সহায়তা করতে হবে।”
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, “মানুষকে সচেতন করতে আমরা সর্বোচ্চটুকু করেছি। এখন যদি পানি সংরক্ষণে সচেতন না হয় তবে আমরা কঠোর হবো। এরপর যে বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর লার্ভা পাবো তাদের আইনের আওতায় আনব।”
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। এ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৩৭ জন। এখনো যতি বরগুনাবাসী সচেতন না হন তাহলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক র ব স ন দ এড স র ল র ভ অবস থ বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।
পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।
কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।
আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগেপরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগেবিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে