লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন হবে কবে
Published: 25th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা লক্ষ্মীপুর। প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রতিবছর এখান থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন—চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চাকরির উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, আজও লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি রুটে কোনো উন্নত মানের এসি বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নির্ভরযোগ্য নন-এসি পরিবহন ব্যবস্থাও একেবারে সীমিত। এটি কেবল দুঃখজনক নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীনতা এবং নীতিগত অবহেলার একটি বড় উদাহরণ।
বর্তমানে এই রুটে যে বাসগুলো চলাচল করছে, সেগুলোর অধিকাংশই পুরোনো ও অপ্রতিসম যানবাহন। এসব বাসে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের ন্যূনতম সুযোগও নেই। আসনবিন্যাসের দুরবস্থা, গরমে হাঁসফাঁস পরিবেশ, যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থেমে যাত্রী তোলা কিংবা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছানো—এসবই যেন এই রুটের যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী। নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ যাত্রীর জন্য এই যাত্রা একধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি মূলত পাকা এবং বেশির ভাগ অংশে চার লেনে সম্প্রসারিত। কুমিল্লা হয়ে ঢাকা পৌঁছানো যায় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে। এমন সড়কপথে উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালু না হওয়া নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। আশপাশের জেলা যেমন—ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা ময়মনসিংহে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, গ্রিনলাইনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানিগুলোর এসি ও আধুনিক বাস চলাচল করে। অথচ লক্ষ্মীপুর এখনো এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে।
প্রশ্ন জাগে—এই রুটে কি যাত্রী কম? বাস্তবতা হলো, লক্ষ্মীপুর একটি প্রবাসীপ্রধান জেলা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মরত। তাঁরা ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে ঢাকায় নামেন এবং সেখান থেকে লক্ষ্মীপুরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ঢাকায় লক্ষ্মীপুর জেলার হাজারো শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। অর্থাৎ, যাত্রীস্রোত আছে, চাহিদাও প্রবল। অভাব শুধু আধুনিক পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগের।
বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, তারা এই রুটে উন্নত বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর অসহযোগিতার কারণে উদ্যোগগুলো বারবার আটকে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত লোকাল বাস মালিকদের একটি চক্র নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই নতুন ও উন্নত সার্ভিসকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে চায়।
আরও দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। শুধু সড়ক নির্মাণই নয়, তা কতটা জনবান্ধবভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাও উন্নয়নের একটি বড় সূচক।
লক্ষ্মীপুরবাসী আর কত দিন এই অব্যবস্থার সঙ্গে আপস করে চলবে? সম্ভাবনাময় একটি জেলার মানুষকে দিনের পর দিন কেন কষ্টকর ভ্রমণের মুখোমুখি হতে হবে? এখনই সময়—এই রুটে উন্নত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। দেরি হলে শুধু জনগণ নয়, পিছিয়ে পড়বে পুরো একটি অঞ্চল—তার সম্ভাবনা, অর্থনীতি ও উন্নয়নের স্বপ্ন।
মো.
শিহাব উদ্দিন
চর লরেন্স, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র পর বহন এই র ট র একট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন হবে কবে
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা লক্ষ্মীপুর। প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রতিবছর এখান থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন—চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চাকরির উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, আজও লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি রুটে কোনো উন্নত মানের এসি বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নির্ভরযোগ্য নন-এসি পরিবহন ব্যবস্থাও একেবারে সীমিত। এটি কেবল দুঃখজনক নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীনতা এবং নীতিগত অবহেলার একটি বড় উদাহরণ।
বর্তমানে এই রুটে যে বাসগুলো চলাচল করছে, সেগুলোর অধিকাংশই পুরোনো ও অপ্রতিসম যানবাহন। এসব বাসে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের ন্যূনতম সুযোগও নেই। আসনবিন্যাসের দুরবস্থা, গরমে হাঁসফাঁস পরিবেশ, যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থেমে যাত্রী তোলা কিংবা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছানো—এসবই যেন এই রুটের যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী। নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ যাত্রীর জন্য এই যাত্রা একধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি মূলত পাকা এবং বেশির ভাগ অংশে চার লেনে সম্প্রসারিত। কুমিল্লা হয়ে ঢাকা পৌঁছানো যায় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে। এমন সড়কপথে উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালু না হওয়া নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। আশপাশের জেলা যেমন—ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা ময়মনসিংহে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, গ্রিনলাইনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানিগুলোর এসি ও আধুনিক বাস চলাচল করে। অথচ লক্ষ্মীপুর এখনো এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে।
প্রশ্ন জাগে—এই রুটে কি যাত্রী কম? বাস্তবতা হলো, লক্ষ্মীপুর একটি প্রবাসীপ্রধান জেলা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মরত। তাঁরা ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে ঢাকায় নামেন এবং সেখান থেকে লক্ষ্মীপুরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ঢাকায় লক্ষ্মীপুর জেলার হাজারো শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। অর্থাৎ, যাত্রীস্রোত আছে, চাহিদাও প্রবল। অভাব শুধু আধুনিক পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগের।
বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, তারা এই রুটে উন্নত বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর অসহযোগিতার কারণে উদ্যোগগুলো বারবার আটকে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত লোকাল বাস মালিকদের একটি চক্র নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই নতুন ও উন্নত সার্ভিসকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে চায়।
আরও দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। শুধু সড়ক নির্মাণই নয়, তা কতটা জনবান্ধবভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাও উন্নয়নের একটি বড় সূচক।
লক্ষ্মীপুরবাসী আর কত দিন এই অব্যবস্থার সঙ্গে আপস করে চলবে? সম্ভাবনাময় একটি জেলার মানুষকে দিনের পর দিন কেন কষ্টকর ভ্রমণের মুখোমুখি হতে হবে? এখনই সময়—এই রুটে উন্নত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। দেরি হলে শুধু জনগণ নয়, পিছিয়ে পড়বে পুরো একটি অঞ্চল—তার সম্ভাবনা, অর্থনীতি ও উন্নয়নের স্বপ্ন।
মো. শিহাব উদ্দিন
চর লরেন্স, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর