সরকারের নিরপেক্ষতার পর্দার পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা অগণতান্ত্রিক শক্তির পরাজয় ঘটেছে
Published: 25th, June 2025 GMT
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পদে পদে বাধাগ্রস্ত করতে যাওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে দলনিরপেক্ষ নয়, সেই বয়ান চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই সরকারের নিরপেক্ষতার পর্দার পেছনে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অগণতান্ত্রিক শক্তির পরাজয় ঘটেছে। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বিনা ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ভেস্তে গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে মেয়র পদে বসে নগর পরিচালনার পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শক্রমে অবৈধ তাপসের (দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস) বিরুদ্ধে পাওয়া রায়টি একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য, আইনের শাসনের চূড়ান্ত বিজয়ের একটি প্রমাণ হিসেবে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত (আন্দোলন করার) নেওয়া হয়েছিল।
প্রশাসক হওয়ার প্রস্তাব অপমানজনক
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অত্যন্ত আপত্তিকর কিছু কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ইশরাক বলেন, ‘আসিফ বলেছেন, ইশরাক হোসেন অত্যন্ত দম্ভ ভরে ও অহংকারের সঙ্গে সরকার কর্তৃক প্রশাসক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।’ ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন বৈধ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের জন্য এই প্রস্তাব অপমানজনক।
ইশরাক বলেন, ‘আসিফ বলেছে বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ঢাকার হাজার হাজার ভোটারকে চরম অপমান করা হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে আন্দোলন করা ঢাকার এই জনগোষ্ঠীকে একটি বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নাগরিক থেকে পশুর মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটার জন্য তাঁকে অবশ্যই নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
হামলায় ‘উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠরা’
গতকাল নগর ভবনে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারধরের ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে দায়ী করছেন ইশরাক হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গতকাল হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ হিসেবে সুপরিচিত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নেতৃত্বে। এরা কেউ কেউ নিজেদের বিএনপি ঘরানার পরিচয় দিলেও তারা দলের কোনো পদে নেই। তাদের মূল হোতা গতকাল আন্দোলনকারীদের হত্যাচেষ্টা করা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গোলাম কিবরিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত আছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাম কিবরিয়া ১৯৯৪ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বৃহত্তর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছাত্রজীবনে তিনি বিএনপিপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের অন্তত ১০টি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন কিবরিয়া।
ছাত্রদলের সাবেক এই নেতাকেও ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন ইশরাক। এ বিষয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ব্যানারে ছিল না ‘মাননীয় মেয়র’
শপথ না নিয়েই নিজেকে মেয়র দাবি করা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন গত ১৬, ১৭ ও ১৮ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের একটি মিলনায়তনে করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে কয়েকটি সভা করেছেন। ওই সব সভায় টাঙানো ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের পাশে ‘মাননীয় মেয়র’ ও ‘নির্বাচিত মেয়র’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন লেখা ছিল। তবে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ ইশরাক হোসেনের নামের পাশে ‘মাননীয় মেয়র’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেনের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক কাউন্সিলর বাদল সরদার ও মকবুল হোসেন এবং ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তাঁদের মধ্যে বাদল সরদার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের অনুগত হিসেবে নগর ভবনে পরিচিত ছিলেন। এ জন্য তাঁকে সেরা কাউন্সিলর হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল বলেও নগর ভবনে আলোচনা ছিল। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে বিএনপিপন্থী অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নগর ভবনে প্রবেশে বাধা দেওয়া হলেও বাদল সরদার কীভাবে সংবাদ সম্মেলনে পাশে বসেছেন, এমন প্রশ্নও ইশরাকের কাছে করেছিলেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু তিনি এর জবাব দেননি।
নগর ভবনে ইশরাক–সমর্থকদের অবস্থান
এদিকে আজও নগর ভবনের নিচতলায় ইশরাক–সমর্থকেরা অবস্থান নিয়েছিলেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন। তাঁদের বেশির ভাগই ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির তিনজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগর ভবনে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারও অনাকাক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটে কি না, তা নিয়ে বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
নগর ভবনে ইশরাক–সমর্থকদের ধারাবাহিক মহড়া চলতে থাকবে কি না—সে প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে ইশরাকের কাছে করেছিলেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু তিনি জবাব না দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন কর মকর ত নগর ভবন প রস ত ব সরক র র উপদ ষ ট ক বর য় ত র পর র জন য কর ছ ন গতক ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।
পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।
কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।
আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগেপরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগেবিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে