প্রস্তুতি নিলেও ২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলন করছেন না চেয়ারম্যান জি এম কাদেরবিরোধী অংশের নেতারা। কৌশলগত কারণে তাঁরা সম্মেলন আয়োজন থেকে সরে এসেছেন। তবে ওই অংশের প্রধান দুই নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে দলের চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাপার দুই কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ কয়েক দিন ধরে জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে আজ বুধবার সম্মেলনের নতুন তারিখের ঘোষণা চেয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিল তারা।

আজ এক বিবৃতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে দলের প্রতিষ্ঠাতা পল্লিবন্ধুর (এইচ এম এরশাদ) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।’

এর আগে দলের প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৮ জুন বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ জুন মিলনায়তন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। এর বিরোধিতা করে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটা অংশ আগের ঘোষিত তারিখেই সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়। এরপর আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদে প্যানেল দেওয়ার কথাও জানান।

এখন তাঁরা সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। এ বিষয়ে জি এম কাদেরের পক্ষের নেতাদের ভাষ্য, সম্মেলন করার জন্য সরকার বা প্রশাসনের দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তাঁরা (আনিস–হাওলাদার) পিছু হটেছেন।

যদিও আনিস-হাওলাদারের অনুসারীদের দাবি, বর্তমান সময়টা অস্থির, বিশেষ করে জাতীয় পার্টির জন্য। এই সময়ে তাঁরা ঘটা করে সম্মেলন করতে গেলে জাতীয় পার্টির বিপক্ষ শক্তি সুযোগ নিতে চাইবে। তাঁরা সে সুযোগ দিতে চান না।

কৌশলগত কারণে পিছু হটা

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জি এম কাদেরবিরোধী জ্যেষ্ঠ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা ২৮ জুন সম্মেলন করবেন না, বরং সম্মেলন আয়োজনের জন্য চেয়ারম্যানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবেন। কারণ, এভাবে সম্মেলন করলে তাঁদের ওপর দল ভাঙার দায় পড়বে। এ দায় তাঁরা নিতে চাইছেন না। তাঁরা সম্মেলনের নতুন তারিখ আদায়ে দলের ভেতর থেকে চাপ অব্যাহত রাখাটা কৌশল নিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, জি এম কাদের যদি গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেয়, সে ক্ষেত্রে এ দায় তাঁর ওপর বর্তাবে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দল ভাঙার দায়িত্বটা নিতে চাই না। আমরা সম্মেলন করে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চাই।’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ চাচ্ছে, সম্মেলনে কাউন্সিলররা গণতান্ত্রিকভাবে দলের নেতৃত্ব ঠিক করুন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত তারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এতে দলে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়।

যদিও আজ বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জি এম কাদের ওই নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, যাঁরা জাতীয় পার্টি নিয়ে এত দিন বেচাকেনার রাজনীতি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আর রাজনীতি করবেন না।

কঠোর হতে পারেন জি এম কাদের

কয়েক দিন ধরে জি এম কাদের একেবারেই নীরব রয়েছেন। তিনি আজ দুপুরে দলের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সারা দেশের নেতারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, সভায় জেলা ও মহানগরের নেতারা ছাড়াও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মো.

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার, ইমরান হোসেন, লিয়াকত হোসেন, শেরীফা কাদের, শরিফুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আশরাফুজ্জামান, এস এম ইয়াসির ও ইকবাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।

এই সভা জি এম কাদেরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে বলে করা হচ্ছে। এই সভার পর দলের কারও কারও ধারণা, জি এম কাদের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (২) এম এ রাজ্জাক খানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র র র র জন দ র এক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা। তিনি জ্ঞান, কৌশলগত যুদ্ধ, সভ্যতা, আইন ও ন্যায়বিচার, শক্তি, শিল্প ও কারুশিল্পের দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এথেনা শুধুমাত্র যুদ্ধের দেবী ছিলেন না, তিনি যুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত দিকটি উপস্থাপন করতেন। তিনি সাধারণত বীরদের অনুপ্রাণিত করতেন এবং ন্যায়সঙ্গত লড়াইয়ে সহায়তা করতেন।তিনি বয়ন, সেলাই এবং অন্যান্য কারুশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

এথেনা গ্রিসের বিভিন্ন শহর, বিশেষ করে এথেন্স শহরের রক্ষাকর্ত্রী ও পৃষ্ঠপোষক দেবী হিসেবে পূজিত হতেন। তিনি পার্সিয়াস, হেরাক্লিস, ওডিসিউস এবং জেসনের মতো বিখ্যাত গ্রিক বীরদেরকে তাদের অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন।তিনি একজন কুমারী দেবী ছিলেন এবং তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। 

আরো পড়ুন:

পশ্চিমা সভ্যতার ‘দোলনা’ বলা হয় যে শহরকে

শীতে চুল ‘ডিপ কন্ডিশনিং’ করার উপায়

জন্ম ও পৌরাণিক কাহিনী

এথেনার জন্মকাহিনী বেশ চমকপ্রদ। প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, তিনি দেবরাজ জিউস এবং জ্ঞান ও কৌশলের টাইটানিস মেটিসের কন্যা। জিউস ভবিষ্যদ্বাণী জানতে পারেন যে, মেটিসের সন্তান তাকে সিংহাসনচ্যুত করবে, তাই তিনি মেটিসকে গিলে ফেলেন। এর কিছুদিন পর জিউসের প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তিনি হেফেস্টাসকে (অগ্নি ও কর্মকার শিল্পের দেবতা) তার মাথা কুড়াল দিয়ে কেটে দিতে বলেন। মাথা কাটার পর, এথেনা সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক এবং বর্ম পরিহিত অবস্থায় জিউসের মাথা থেকে বেরিয়ে আসেন। 

এথেন্স শহরের নামকরণ এথেনার নামানুসারে করা হয়েছিল। শহরটির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এথেনা এবং সমুদ্রের দেবতা পসেইডনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। পসেইডন তার ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে আঘাত করে একটি নোনা জলের ঝর্ণা তৈরি করেন। অন্যদিকে, এথেনা একটি জলপাই গাছ তৈরি করেন, যা খাদ্য, তেল, কাঠ এবং ছায়া প্রদান করত। শহরের লোকেরা এথেনার উপহারকে বেশি উপযোগী মনে করে এবং এথেনাকে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেছে নেয়। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে অবস্থিত বিখ্যাত পার্থেনন মন্দিরটি তার সম্মানে নির্মিত হয়েছিল। 

এথেনার প্রধান প্রতীকগুলির মধ্যে রয়েছে পেঁচা। যা জ্ঞানের প্রতীক। জলপাই গাছ হলো শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।ঢাল তার যোদ্ধার পরিচয় বহন করে। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য