সম্মেলন নয়, কৌশলের লড়াই জাতীয় পার্টির দুই পক্ষে
Published: 25th, June 2025 GMT
প্রস্তুতি নিলেও ২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলন করছেন না চেয়ারম্যান জি এম কাদেরবিরোধী অংশের নেতারা। কৌশলগত কারণে তাঁরা সম্মেলন আয়োজন থেকে সরে এসেছেন। তবে ওই অংশের প্রধান দুই নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে দলের চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপার দুই কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ কয়েক দিন ধরে জাতীয় পার্টির সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে আজ বুধবার সম্মেলনের নতুন তারিখের ঘোষণা চেয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিল তারা।
আজ এক বিবৃতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই, চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে দলের প্রতিষ্ঠাতা পল্লিবন্ধুর (এইচ এম এরশাদ) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।’
এর আগে দলের প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৮ জুন বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৬ জুন মিলনায়তন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। এর বিরোধিতা করে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটা অংশ আগের ঘোষিত তারিখেই সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়। এরপর আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদে প্যানেল দেওয়ার কথাও জানান।
এখন তাঁরা সেই অবস্থান থেকে সরে এসে ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। এ বিষয়ে জি এম কাদেরের পক্ষের নেতাদের ভাষ্য, সম্মেলন করার জন্য সরকার বা প্রশাসনের দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তাঁরা (আনিস–হাওলাদার) পিছু হটেছেন।
যদিও আনিস-হাওলাদারের অনুসারীদের দাবি, বর্তমান সময়টা অস্থির, বিশেষ করে জাতীয় পার্টির জন্য। এই সময়ে তাঁরা ঘটা করে সম্মেলন করতে গেলে জাতীয় পার্টির বিপক্ষ শক্তি সুযোগ নিতে চাইবে। তাঁরা সে সুযোগ দিতে চান না।
কৌশলগত কারণে পিছু হটা
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জি এম কাদেরবিরোধী জ্যেষ্ঠ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা ২৮ জুন সম্মেলন করবেন না, বরং সম্মেলন আয়োজনের জন্য চেয়ারম্যানের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবেন। কারণ, এভাবে সম্মেলন করলে তাঁদের ওপর দল ভাঙার দায় পড়বে। এ দায় তাঁরা নিতে চাইছেন না। তাঁরা সম্মেলনের নতুন তারিখ আদায়ে দলের ভেতর থেকে চাপ অব্যাহত রাখাটা কৌশল নিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, জি এম কাদের যদি গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নেয়, সে ক্ষেত্রে এ দায় তাঁর ওপর বর্তাবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দল ভাঙার দায়িত্বটা নিতে চাই না। আমরা সম্মেলন করে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চাই।’
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ চাচ্ছে, সম্মেলনে কাউন্সিলররা গণতান্ত্রিকভাবে দলের নেতৃত্ব ঠিক করুন। এর মধ্য দিয়ে কার্যত তারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। এতে দলে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়।
যদিও আজ বনানীতে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জি এম কাদের ওই নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, যাঁরা জাতীয় পার্টি নিয়ে এত দিন বেচাকেনার রাজনীতি করেছেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আর রাজনীতি করবেন না।
কঠোর হতে পারেন জি এম কাদের
কয়েক দিন ধরে জি এম কাদের একেবারেই নীরব রয়েছেন। তিনি আজ দুপুরে দলের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় সারা দেশের নেতারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সভায় জেলা ও মহানগরের নেতারা ছাড়াও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মো.
এই সভা জি এম কাদেরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে বলে করা হচ্ছে। এই সভার পর দলের কারও কারও ধারণা, জি এম কাদের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদারসহ কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (২) এম এ রাজ্জাক খানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হকউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম ক দ র র র র জন দ র এক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্ক শাস্তি, মোদির ভারতের সামনে সহজ কোনো পথ নাই
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভাবমূর্তি যেভাবে বাজারে প্রচার করতে পারেন, সেটা খুব কম নেতাই পারেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নিজেকে শক্তিশালী ও আরও আত্মপ্রত্যয়ী ভারতের নির্মাতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করে এসেছেন। আর যখন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, তখন তিনি পূর্বসূরিদের দোষারোপ করেছেন। এক প্রজন্মের ভোটাররা বিশ্বাস করেছেন, বিশ্বমঞ্চে ভারতের মর্যাদা যে বেড়েছে, তার পেছনে রয়েছেন মোদি।
কিন্তু এরপরই দৃশ্যপটে ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে এসেছেন। তিনি প্রচলিত নিয়মকানুন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে অত্যন্ত সিদ্ধ। গত বুধবার তিনি বিশ্বের চতুর্থ অর্থনীতি ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যের ওপর অবিশ্বাস্যভাবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এটা কার্যকর হলে ভারতকে যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হবে।
দুই ব্যক্তির মধ্যে আগের যে মধুর সম্পর্ক, সেই বিবেচনায় এই ঘোষণাকে চমকজাগানিয়া বলেই মনে হয়। মোদি ও ট্রাম্প দুজনেই আদর্শগত মিলের দিক থেকে জনতুষ্টিবাদী নেতা। এর আগে তাঁরা একে অপরের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং এ বছরের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর, বিশ্বনেতাদের মধ্যে মোদিই ছিলেন প্রথম দিককার একজন, যিনি হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই ট্রাম্পকে তিনি ‘মহৎ বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু ঝামেলা টগবগ করে ফুটতে শুরু করল জুলাইয়ের শেষ দিকে। সে সময়ে ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন, গত বুধবার সেটা দ্বিগুণ করেন। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল কিনছে, সেটাকেই লক্ষ্যবস্তু করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইউক্রেনের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা রাশিয়ার নাকের ডগায় ঝুলছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে আসছে। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়, সেটা গত সপ্তাহেই দেখা গেল। এই শুল্ক ভারতের কাছে বার্তা দিচ্ছে যে যদিও দেশটির প্রভাব ও অর্থনীতির আকার বেড়েছে, কিন্তু কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে দেশটি ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।নতুন শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বাড়তি এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বা ব্যবসা সুরক্ষিত করবে, বিষয়টা এমনটা নয়। কিন্তু বাড়তি এই শুল্ক সেই দেশকে শাস্তি দেওয়া হবে, যে দেশটি এখন নিজেদের মোট আমদানির ৩৬ শতাংশ জ্বালানি তেলে রাশিয়া থেকে আমদানি করে। অথচ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে সেটি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। সস্তায় কেনা এই তেলের বেশির ভাগটা দেশের ভেতরকার চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়। ভারতকে তার প্রয়োজনীয় তেলের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। আর দ্রুত অন্য কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ বা সস্তাও হবে না।
হতে পারে এ কারণেই ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপ করা শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং এটিকে ‘অন্যায়, অবিচার ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু এখানে এটাও মনে হতে পারে যে পশ্চিমা দেশগুলো ভণ্ডামি করছে। ভারত খুব দ্রুত উল্লেখ করেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো রাশিয়ার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যবসা করে চলেছে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনাকে এর আগে সমর্থন করেছিল তার কারণ হলো, এতে বিশ্বে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা গিয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে কি না, তার জন্য এখন দিল্লি সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে। একই সময়ে আবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মস্কোতে রয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, পুতিন এই বছরের শেষ দিকে ভারত সফর করবেন। মোদি সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের আসন্ন দিনগুলোতে রাশিয়া সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু মোদি সরকার যে প্রতিক্রিয়া জানাক না কেন, একটি ব্যাপার এখানে স্পষ্ট। ট্রাম্পের সঙ্গে যে ‘বন্ধুত্বের’ কথা মোদি ভেবেছিলেন, সেটি চূড়ান্ত বিচারে অকার্যকর ও হালকা সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক মোদির অতি উচ্ছ্বাস আর ট্রাম্পের নিষ্ঠুর স্বার্থপরতা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সেই ব্রোম্যান্সের (ভাইয়ে ভাইয়ে মধুর সম্পর্ক) দিন শেষ। বৈশ্বিক স্বার্থের শীতল অঙ্কের কাছে ব্যক্তিগত রসায়ন কখনোই ছাপিয়ে যেতে পারে না।
রাশিয়ার তেলের বিষয়টিকে এক পাশে সরিয়ে রাখলেও বাণিজ্য, শুল্ক ও ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। ট্রাম্প চান, আমেরিকায় উৎপাদনশিল্প ফিরিয়ে আনতে। আর মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি আংশিকভাবে আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করার আহ্বান। মোদির এই পথ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন।
পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্পের আকস্মিক ও কৌশলগত ঝোঁক ভারত গভীরভাবে অসন্তুষ্ট। জুনে ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান এবং সম্প্রতি তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে তেল অনুসন্ধানের একটি চুক্তির ঘোষণাও দিয়েছেন। এ ছাড়া মে মাসে চার দিনের সংঘর্ষের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়, তার কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প। এটিও ভারতের জন্য অনেকটা বিরক্তির জন্ম দেয়।
এসব ঘটনার কোনোটিই এমন একটি দেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না, যে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ত লড়াই করে চলেছে এবং যে দেশটির কর্মকর্তারা দুই দশক ধরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে উন্নত করার জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন। ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেই সম্পর্কের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের কথাবার্তা ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীকেও আহত করেছে। ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন এবং মোদিকে অভিযুক্ত করেছেন যে তিনি ‘বিশৃঙ্খলা থেকে মুনাফা’ করছেন। ‘বন্ধুত্বের প্রতীককে’ জনলজ্জা ও জবরদস্তির হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিবিদেরা সাধারণত নীরবে এবং দৃশ্যপটের আড়ালের কূটনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত।
কয়েক দিন চুপ থাকার পর বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করা হবে না। কিন্তু তার সামনে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। যদি তিনি কোনো বিষয়ে আপস করেন, তাহলে দেশে তাঁর ভাবমূর্তি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। কিন্তু যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে উত্তেজনা আরও তীব্র হবে। তাতে উতোর–চাপানে থাকা ভারতের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে। কেননা, যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভারতের অর্থনীতি আরও নিবিড়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের ৮৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। ২৭ আগস্ট থেকে যে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে তা যদি কার্যকর হয়, তাহলে এর অনেকটাই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। দেশের ভেতরে মোদির রাজনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে। বিরোধী দলগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে এবং শুল্ককে ‘অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেল’ ও ‘ভারতকে অন্যায় বাণিজ্যচুক্তিতে’ বাধ্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজেদের চাপ আরও বাড়িয়েছে।
ভারতের জন্য শিক্ষা হলো, উষ্ণ আলিঙ্গন নয়, কঠোর স্বার্থ দিয়েই নীতি পরিচালিত হতে হবে। ট্রাম্পের কাছে কোনো সম্পর্কই পবিত্র নয়, চুক্তির শিল্পটাই তার কাছে সবকিছু। মোদি হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি ট্রাম্পকে মুগ্ধ করতে পারবেন; ট্রাম্প প্রশংসা পছন্দ করলেও শেষ পর্যন্ত সেটাই যথেষ্ট নয়।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে আসছে। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়, সেটা গত সপ্তাহেই দেখা গেল। এই শুল্ক ভারতের কাছে বার্তা দিচ্ছে যে যদিও দেশটির প্রভাব ও অর্থনীতির আকার বেড়েছে, কিন্তু কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে দেশটি ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সলিল ত্রিপাঠী, নিউইয়র্কে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক
দ্য টাইম ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে