বরগুনার গ্রামাঞ্চলের ৭৬ ভাগ বাড়িতে এডিসের লার্ভা
Published: 26th, June 2025 GMT
দেশে গতকাল বুধবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩২৬ জনের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব রোগীর মধ্যে ৬৫ জন বা ২০ শতাংশই বরগুনার। দক্ষিণের এই জেলা এখন ডেঙ্গুর বড় বিস্তারের এলাকা। সেখানে ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণ কয়েক সপ্তাহ ধরে। হঠাৎ এখানে ডেঙ্গুর এত সংক্রমণ কেন, তা নিয়ে এখন জোর আলোচনা আছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) চলতি মাসেই বরগুনায় এডিস মশার লার্ভা জরিপ করে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর সেই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা পৌরসভার ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। গতকালের অনুষ্ঠানে বলা হয়, সুপেয় পানির সংকটের কারণে বরগুনা জেলায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্রচলন আছে। আর এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয় জমিয়ে রাখা পরিষ্কার পানিতে। এসব পানির আধারই হলো এডিসের বিস্তারের বড় ক্ষেত্র। বাড়িতে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের পানি ঢেকে রাখা হয় কাপড় দিয়ে। এটার চর্চা গ্রামে বেশি। আর এসব কাপড়ে ব্যাপক মাত্রায় লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
ঢাকায় গত বছর পর্যন্ত সেরোটাইপ-২–এর উপস্থিতি বেশি ছিল। এ বছরের উপাত্তটা এখনো হাতে আসেনি। বরগুনায় আমরা ৪৩ নমুনা পরীক্ষা করে সেরোটাইপ-৩–এর প্রাধান্য বেশি পেয়েছি। ডা.তারিকুল ইসলাম, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব জরিপের দলের প্রধান, আইইডিসিআর
আইইডিসিআরের মেডিকেল সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রত্না দাশ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিয়ম হলো পানি দুই দিনের বেশি জমিয়ে না রাখা। কিন্তু বরগুনায় যেহেতু পানির সংকট আছে, তাই জমিয়ে রাখা পানি অর্ধেক ব্যবহার করলেও সেটি তাঁরা ফেলে দেন না। ব্যবহৃত পানির সঙ্গে নতুন পানি ধরে রাখেন। এসব পানি রাখার পাত্রগুলোকে ঢেকেও রাখা হয় না। ফলে এসব পানি ধরে রাখার পাত্রে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নেয় সহজে। যার কারণে ডেঙ্গু এখানে মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
জরিপ দল বরগুনার ১৮৪টি ঘর থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ১৩৮টি বরগুনা পৌরসভায় ও বাকি ৪৬টি সদর উপজেলায়। এর মধ্যে পৌর এলাকার ৪৩টি বাড়িতে এবং গ্রামের ৩৫টি বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। অর্থাৎ শহরের ৩১ ভাগ এবং গ্রামের ৭৬ ভাগ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। যদি বিআই ২০ বা এর বেশি হয়, তবে সেখানে এডিসের লার্ভার উচ্চ উপস্থিতি আছে বলে ধরা হয়। বরগুনা পৌরসভায় নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিআই যথাক্রমে ১৫৩ ও ১৩৩। আর গ্রামাঞ্চলে বিআই হলো ১৬৩।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনার গ্রামে এডিসের বিস্তার রীতিমতো ভীতিকর। তবে এ পরিস্থিতি যে শুধু বরগুনার গ্রামে, তা এখন বলা যায় না। দেশের অন্যত্রও যদি জরিপ করা হয়, তবে এমন বা এর কাছাকাছি চিত্র পাওয়া যেতে পারে।
আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত বাড়ছে, সে হারে হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক, নার্স নিশ্চিত করা কঠিন। তাই ডেঙ্গুর উৎসে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। তাদের গবেষণায় চিকুনগুনিয়া বা জিকার কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এক পরিবার বাস করে এমন বাড়িতে এডিসের লার্ভা বেশি। এ ধরনের ৪৮টি বাড়ির মধ্যে ২৪টিতেই মশার লার্ভা মিলেছে।
ডেঙ্গুর চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে। সেগুলো হলো ১, ২, ৩ ও ৪। গত বছর এবং এর আগেও দেশে সেরোটাইপ–২ এ আক্রান্তের হার ছিল সবচেয়ে বেশি। যদিও গত বছরের শেষ দিকে সেরোটাইপ–৩ এর কিছু উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল।
আইইডিসিআরের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব জরিপের দলের প্রধান ডা. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় গত বছর পর্যন্ত সেরোটাইপ-২ এর উপস্থিতি বেশি ছিল। এ বছরের উপাত্তটা এখনো হাতে আসেনি। বরগুনায় আমরা ৪৩ নমুনা পরীক্ষা করে সেরোটাইপ-৩ প্রাধান্য বেশি পেয়েছি।’
যখন নতুন কোনো সেরোটাইপের প্রাধান্য তৈরি হয়, তখন ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি হয়। শুধু রোগের বিস্তার নয়, রোগীর অবস্থাও জটিল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, বরগুনায় নতুন একটি সেরোটাইপের প্রাধান্য ওই অঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও সজাগ হওয়া দরকার।
বরগুনায় যে এবারই শুধু ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে, তা নয়। গত বছর ঢাকা মহানগরী বাদ দিয়ে দেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছিল এ জেলায়। গত বছর সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এড স র ল র ভ র উপস থ ত বরগ ন র বরগ ন য় গত বছর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বরগুনায় ডেঙ্গুর ‘ডেন–৩’ ধরন শনাক্ত, আক্রান্ত ৪৬%
বরগুনায় ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ ডেন-৩ ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত। সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর ধরন ডেন-২। বাকি ১৪ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন অন্য ধরন ডেন-২-৩। ৪৩টি অনুমান জিনোম পরীক্ষা করে এই তথ্য মিলেছে।
ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনায় জুনের ১৬-২২ তারিখ পর্যন্ত সার্ভে পরিচালনা করা হয়। বরগুনায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরগুনা সদরে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, এরপর পাথরঘাটায়। কম রোগী ছিল আমতলী আর বেতাগী।
আইইডিসিআরের বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গুর চিত্র কতটা ভয়াবহ এখনও বলা যাচ্ছে। আরো সময় লাগবে।