চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ধুনির পুল এলাকায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ছয় কোটি টাকায় তিনতলা ভবন করেছিল সিটি করপোরেশন। এই ভবনের নিচতলায় রয়েছে মাছ-মাংসের দোকান। দ্বিতীয় তলায় বসার কথা সবজি বিক্রেতাদের। কিন্তু সবজি বিক্রেতারা সেখানে না বসে পাশের সড়ক ও ফুটপাতেই ব্যবসা করছেন।

সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে শাহাদাত হোসেন চকবাজার কাঁচাবাজারটি চালুর উদ্যোগ নেন। এ জন্য চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি ফুটপাতে দোকান করা ৬৫ দোকানিকে কাঁচাবাজারের দোতলায় পুনর্বাসন করেন। এ জন্য তাঁদের কোনো দোকানভাড়া দিতে হচ্ছিল না। শুধু বাজারের ইজারাদারের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছিল। ফুটপাতে থাকার সময়ও এই অর্থ দিতে হতো। এরপরও দোকানিরা বাজারে থাকেননি। দুই-তিন মাস না যেতেই আবার ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা শুরু করেন সবজি বিক্রেতারা। গত শুক্রবার ফুটপাত ও সড়কে দোকান দেখে ক্ষুব্ধ হন মেয়র শাহাদাত হোসেন।

মেয়র নিজেই চকবাজার কাঁচাবাজার চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। মেয়র কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন। পুনর্বাসনও করেছেন। এরপরও কেউ যদি সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে। কাউকে সড়ক ও ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসতে দেওয়া হবে না।মো.

জিল্লুর রহমান,  ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

পুনর্বাসনের পরও ফুটপাত ও সড়ক দখল করে পুনরায় বাজার বসানোর কারণে দোকানিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। এ সময় মেয়র তাঁদের উদ্দেশে বলেন, কাঁচাবাজার ভবনে দোকান দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেন রাস্তার পাশে দোকান বসানো হয়েছে? কার অনুমতি নিয়ে এসব দোকান বসানো হয় জানতে চান তিনি। দোকানগুলোর ময়লা-আবর্জনা পাশের চাক্তাই খালে ফেলার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

দোকানগুলো ওই দিনই উচ্ছেদ করার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন মেয়র।

বাজার ভবন এখনো ফাঁকা

চকবাজার কাঁচাবাজার তিনতলা ভবনের নিচতলায় মাছ-মাংসের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। বর্তমানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকলেও সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর দোতলা সবজি দোকানের জন্য নির্ধারিত।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সবগুলো দোকানেই পণ্য নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। তাঁদের সংখ্যা ৬৫। কিন্তু এখন তা পাঁচে এসে ঠেকেছে।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের মূল প্রবেশফটকের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার পর সামনের অংশে পাঁচটি সবজির দোকান। এর মধ্যে মাত্র দুটি দোকান খুলেছে। একটিতে টুকটাক বিক্রি হলেও অন্যটি ক্রেতাশূন্য। অন্য দোকানগুলোতে বিক্রেতাদের দেখা যায়নি। মালামাল প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল। বাজার হলেও তেমন কোনো লোকজন ছিলেন না। সামনের অংশে দোকান থাকলেও পেছনের এবং বাঁ পাশের সারি ছিল ফাঁকা।

এদিকে ধুনির পুলের আশপাশে আগের মতো ভাসমান দোকান নেই। তবে ভ্যানে করে শাক বিক্রি করছিলেন কয়েকজন। আর কিছু দূরে চার-পাঁচটি মাছের দোকান ছিল।
বিকেল চারটার দিকে আবার গিয়ে দেখা যায়, ভবনে আগের পাঁচজন বিক্রেতাই আছেন। অন্যদিকে রাস্তা ও ফুটপাতেই বসেছেন বাকি বিক্রেতারা।

বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভবন করার পরও বাজার ফাঁকা থাকার জন্য সিটি করপোরেশনের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা। দোকান নেওয়া তিন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখানে গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই।বাজার জমছে না যে কারণে

বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভবন করার পরও বাজার ফাঁকা থাকার জন্য সিটি করপোরেশনের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা। দোকান নেওয়া তিন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখানে গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই। গাড়ি রাখার পরিবর্তে সেখানে মাছ-মাংসের দোকান দেওয়া হয়েছে। আবার সবজির দোকানগুলো রাখা হয়েছে দোতলায়। কিন্তু সড়ক ও ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরে বসে ভাসমান দোকান। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে ঠিকই আবার দোকানগুলো বসে যায়। এসব কারণে সবজির বাজার আর জমেনি।

আগে ফুটপাতে দোকান করতেন, এখন দোতলায় দুটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন মোহাম্মদ মোস্তফা। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও পাঁচ ভাই। গত ১ জানুয়ারি মেয়রের পুনর্বাসনের পর থেকে এখানে দোকান করছেন তিনি। সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজ ও আদা বিক্রি করেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশনের তৈরি করা ভবনে বিক্রেতারা না বসলেও সড়ক দখল করে ঠিকই বসেছেন অনেকে। গতকাল বিকেল চারটায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ক ন কর চকব জ র র জন য কর ছ ন সবজ র ও সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।

পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।

কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।

আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগে

পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগে

বিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ