কোটি টাকার বাজার ভবন প্রায় খালি, সবজি বিক্রেতারা বসেন সড়ক–ফুটপাতে
Published: 26th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ধুনির পুল এলাকায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ছয় কোটি টাকায় তিনতলা ভবন করেছিল সিটি করপোরেশন। এই ভবনের নিচতলায় রয়েছে মাছ-মাংসের দোকান। দ্বিতীয় তলায় বসার কথা সবজি বিক্রেতাদের। কিন্তু সবজি বিক্রেতারা সেখানে না বসে পাশের সড়ক ও ফুটপাতেই ব্যবসা করছেন।
সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে শাহাদাত হোসেন চকবাজার কাঁচাবাজারটি চালুর উদ্যোগ নেন। এ জন্য চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি ফুটপাতে দোকান করা ৬৫ দোকানিকে কাঁচাবাজারের দোতলায় পুনর্বাসন করেন। এ জন্য তাঁদের কোনো দোকানভাড়া দিতে হচ্ছিল না। শুধু বাজারের ইজারাদারের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছিল। ফুটপাতে থাকার সময়ও এই অর্থ দিতে হতো। এরপরও দোকানিরা বাজারে থাকেননি। দুই-তিন মাস না যেতেই আবার ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা শুরু করেন সবজি বিক্রেতারা। গত শুক্রবার ফুটপাত ও সড়কে দোকান দেখে ক্ষুব্ধ হন মেয়র শাহাদাত হোসেন।
মেয়র নিজেই চকবাজার কাঁচাবাজার চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। মেয়র কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন। পুনর্বাসনও করেছেন। এরপরও কেউ যদি সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ করা হবে। কাউকে সড়ক ও ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসতে দেওয়া হবে না।মো.জিল্লুর রহমান, ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
পুনর্বাসনের পরও ফুটপাত ও সড়ক দখল করে পুনরায় বাজার বসানোর কারণে দোকানিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। এ সময় মেয়র তাঁদের উদ্দেশে বলেন, কাঁচাবাজার ভবনে দোকান দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেন রাস্তার পাশে দোকান বসানো হয়েছে? কার অনুমতি নিয়ে এসব দোকান বসানো হয় জানতে চান তিনি। দোকানগুলোর ময়লা-আবর্জনা পাশের চাক্তাই খালে ফেলার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
দোকানগুলো ওই দিনই উচ্ছেদ করার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন মেয়র।
বাজার ভবন এখনো ফাঁকাচকবাজার কাঁচাবাজার তিনতলা ভবনের নিচতলায় মাছ-মাংসের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। বর্তমানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকলেও সিটি করপোরেশনের সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর দোতলা সবজি দোকানের জন্য নির্ধারিত।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সবগুলো দোকানেই পণ্য নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। তাঁদের সংখ্যা ৬৫। কিন্তু এখন তা পাঁচে এসে ঠেকেছে।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের মূল প্রবেশফটকের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার পর সামনের অংশে পাঁচটি সবজির দোকান। এর মধ্যে মাত্র দুটি দোকান খুলেছে। একটিতে টুকটাক বিক্রি হলেও অন্যটি ক্রেতাশূন্য। অন্য দোকানগুলোতে বিক্রেতাদের দেখা যায়নি। মালামাল প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল। বাজার হলেও তেমন কোনো লোকজন ছিলেন না। সামনের অংশে দোকান থাকলেও পেছনের এবং বাঁ পাশের সারি ছিল ফাঁকা।
এদিকে ধুনির পুলের আশপাশে আগের মতো ভাসমান দোকান নেই। তবে ভ্যানে করে শাক বিক্রি করছিলেন কয়েকজন। আর কিছু দূরে চার-পাঁচটি মাছের দোকান ছিল।
বিকেল চারটার দিকে আবার গিয়ে দেখা যায়, ভবনে আগের পাঁচজন বিক্রেতাই আছেন। অন্যদিকে রাস্তা ও ফুটপাতেই বসেছেন বাকি বিক্রেতারা।
বিপুল অর্থ ব্যয়ে ভবন করার পরও বাজার ফাঁকা থাকার জন্য সিটি করপোরেশনের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা। দোকান নেওয়া তিন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখানে গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই। গাড়ি রাখার পরিবর্তে সেখানে মাছ-মাংসের দোকান দেওয়া হয়েছে। আবার সবজির দোকানগুলো রাখা হয়েছে দোতলায়। কিন্তু সড়ক ও ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরে বসে ভাসমান দোকান। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে ঠিকই আবার দোকানগুলো বসে যায়। এসব কারণে সবজির বাজার আর জমেনি।
আগে ফুটপাতে দোকান করতেন, এখন দোতলায় দুটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন মোহাম্মদ মোস্তফা। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও পাঁচ ভাই। গত ১ জানুয়ারি মেয়রের পুনর্বাসনের পর থেকে এখানে দোকান করছেন তিনি। সবজির পাশাপাশি পেঁয়াজ ও আদা বিক্রি করেন তাঁরা।
সিটি করপোরেশনের তৈরি করা ভবনে বিক্রেতারা না বসলেও সড়ক দখল করে ঠিকই বসেছেন অনেকে। গতকাল বিকেল চারটায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ক ন কর চকব জ র র জন য কর ছ ন সবজ র ও সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা চাই
রাজশাহীর তানোরের গোকুল-মথুরা খেলার মাঠ সেখানকার শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ। এই মাঠ কেবল একটি খেলার জায়গা নয়, এটি এলাকার সংস্কৃতি, সামাজিক মেলবন্ধন এবং বহু প্রজন্মের স্মৃতির ধারক। অথচ এই শতবর্ষী মাঠের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা দখল করে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরকারের আরএস ও এসএ দুটি খতিয়ানেই এই মাঠ খেলার মাঠ হিসেবে উল্লেখ আছে। ২০০০ সালের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও স্থানীয় একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কীভাবে কৌশলে মাঠটি নিজেদের নামে খারিজ করে নিতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মাঠসংলগ্ন গোকুল-মথুরা দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১৯৯৯ সালের ৪ আগস্ট একটি দান দলিলের মাধ্যমে ৬ শতাংশ ও ওই বছরের ৮ আগস্ট একইভাবে দান দলিলের মাধ্যমে ৩৪ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে। এর আগেই ১৯৮৩ সালের ৫ জুন গোকুল-মথুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একইভাবে একটি প্রতারণামূলক দান দলিলের মাধ্যমে ৬৬ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে। এই তিনটি দলিলের মাধ্যমে অতি গোপনে মাঠের সব জমি গ্রাস করা হয়েছে। এখানে ভূমি অফিসের যোগসাজশ থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মাঠে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে স্থানীয় লোকজন সরব হন। মানববন্ধন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান—সবকিছুই করা হয়েছে। আদালতে মামলাও করা হয়েছে এবং আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরপরও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। যদিও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা ভবন নির্মাণ করলে ভবনের খানিকটা মাঠের ভেতরে পড়বে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোমবার সকালে মাদ্রাসা ভবনের নির্মাণের উদ্বোধন করতে যান। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। ঠিকাদারের লোকজন মাটি খননের চেষ্টা করলে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা খননযন্ত্রের সামনে শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজ স্থগিত ঘোষণা করে। বিকেলের দিকে ঠিকাদার লোকজন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে যান।
আমরা আশা করব, শতবর্ষী মাঠটি রক্ষায় প্রশাসন আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে। মাঠের জমি দখল নিয়ে আগে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। মাঠটির সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটিই কাম্য।