দেশে দেশে ঘুরে পড়াশোনা শেখে তিনবোন
Published: 26th, June 2025 GMT
‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র, নানানভাবে নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র’—কবি সুনির্মল বসুর এই কবিতা যেন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে ডায়ানা ব্লিঙ্ক ও স্কট ব্লিঙ্ক দম্পতির তিন মেয়ের জীবনে। মার্কিন এই দম্পতির তিন মেয়ে—লুসিল (১২), এডিথ (১১) ও হ্যাজেল (৯)। আড়াই বছর ধরে পথই তাদের ‘স্কুল’।
প্রতিদিনের ইঁদুরদৌড়ের জীবন ছেড়ে ২০২২ সালের জুলাইয়ে মেয়েদের নিয়ে পথে নামেন ডায়ানা-স্কট দম্পতি। তাঁরা তাঁদের এই যাত্রার নাম দেন ‘ওয়ার্ল্ড স্কুলিং’। উদ্দেশ্য—বই থেকে পড়ে নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শেখা।
৪১ বছরের ডায়ানা বলেন, তাঁর মেয়েরা এখন বইয়ে পড়ার বদলে স্পেনের দক্ষিণে ফ্লামেঙ্কো নাচ শিখছে, অ্যাথেন্সে অ্যাক্রোপলিস দেখে গ্রিক পুরাণ পড়ছে, আবার মন্টেনেগ্রোর উপকূলে গিয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে হাতে-কলমে অংশ নিচ্ছে।
পরিবারটি প্রথম বছরে ২২টি দেশ ঘুরে ফেলেছে। আর সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪০টি দেশ ভ্রমণ করেছে, যার মধ্যে মরক্কো, আইসল্যান্ড, গ্রিস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া উল্লেখযোগ্য।
এই দম্পতি ও তাঁদের সন্তানদের এই ভ্রমণ শুধু এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছুটে চলা নয় বরং উরুগুয়েতে বসে তাঁরা বানিয়েছেন স্থানীয় খাবার চিবিতো, থাইল্যান্ডে শিখেছেন প্যাড থাই ও ম্যাঙ্গো স্টিকি রাইস তৈরি করা। পর্তুগালের সিঙ্করায় তিন মাসের আবাসে ‘বাউন্ডলেস লাইফ’ নামের বিশ্ব স্কুলিং হাবে মেয়েরা পেয়েছে সমবয়সী সঙ্গী; সকাল ৮টা ৪৫ থেকে বেলা ৩টা ৩০ পর্যন্ত তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠ নিয়েছে, তারপর অংশ নিয়েছে নানা কার্যক্রমে।
৪৭ বছরের স্কট একটি সফটওয়্যার কোম্পানির পরিচালক ছিলেন, এখন চাকরি ছেড়ে পুরোদমে পর্যটক। ডায়ানা অকপট বলেন, স্কট আর তিনি যখন তাঁদের পরিবার গড়ার কথা ভাবছিলেন, তখন সন্তানদের সঙ্গে পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর এই জীবন তাঁদের কল্পনায়ও ছিল না।
ডায়ানা বলেন, ‘কখনোই ভাবিনি যে আমি একজন হোমস্কুলিং করা মা হয়ে উঠব, কারণ, এভাবে শিক্ষাদানের কোনো অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। কিন্তু মেয়েরা জন্মানোর পর বুঝলাম, প্রচলিত স্কুল ব্যবস্থা আমাদের প্রত্যাশা মেটাতে পারছে না।’
অধিকাংশ অভিভাবকের মতো ডায়ানাও কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে লকডাউনের সময় বাধ্য হয়ে সন্তানদের হোমস্কুলিং করিয়েছেন। তবে ভ্রমণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর আজীবন ভ্রমণপিপাসু ডায়ানা ও স্কট দুজনই প্রবলভাবে নতুন অভিযানে বেরিয়ে পড়ার তাগিদ অনুভব করেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁদের নতুন এ জীবন।
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর-সংলগ্ন মিরপুর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুরের দিকে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এরপর বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আছেন র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। তাঁরা শক্ত অবস্থানে আছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনের মিরপুর সড়কে দুটি এক্সকাভেটর দেখা যায়।
পরে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে এক্সকাভেটর ঢোকানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিপেটা করে।
কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের অন্তত এক সদস্য আহত হন।
আরও পড়ুনএক্সকাভেটর নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ৪ ঘণ্টা আগেপরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের আবার ছত্রভঙ্গ করে দেয় সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা এবং তাঁদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিউমার্কেট থেকে মিরপুরমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনরায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার, ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন৫ ঘণ্টা আগেবিক্ষোভকারীরা পুরোপুরি সরে না যাওয়ায়, বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে দফায় দফায় ৩২ নম্বর সড়কে আসার চেষ্টা করায় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়। এখন এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোমতে কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেব না।’
গত ফেব্রুয়ারিতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ২ ঘণ্টা আগে