সেই অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েই আবার খেপে উঠলেন শামার জোসেফ
Published: 26th, June 2025 GMT
শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ানদের পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বলতে তাদের বিপক্ষে বোলিংটা উপভোগ করেন। ছোট টেস্ট ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট ৫ ইনিংসে বোলিং করেছেন।
তাতে দুইবার ৫ উইকেট আর একবার নিয়েছেন ৪ উইকেট, ৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের ৩৩ উইকেটের ১৭টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর পরিসংখ্যানের কথা রাখুন তো! শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললে কিছু একটা হবে হবে বলে মনে হয়। ওটাই তো আসল!
এর বড় কারণ ১৮ মাস আগের ব্রিসবেন টেস্ট। ভাঙা আঙুল নিয়ে বোলিং করে ৬৮ রানে নেন ৭ উইকেট। এভাবেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর ব্রিজটাউনে কাল আবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন শামার জোসেফ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালও তিনি উপহার দিয়েছেন ব্লকবাষ্টার পারফরম্যান্স। স্যাম কনস্টাস, উসমান খাজা, ক্যামেরন গ্রিনকে ফিরিয়েছেন। এরপর বো ওয়েবস্টারকে যেভাবে (মিডল স্টাম্পে পড়া বল বেরিয়ে গিয়ে অফ স্টাম্প ভেঙেছে) বোল্ড করেছেন, তার মূল্য কয়েকটি উইকেটের সমান। নিজেই দিন শেষে বলেছেন—এটি তাঁর করা ক্যারিয়ারের সেরা বলের একটি।
জোসেফ কাদের আউট করেছেন, আরেকবার চোখ বোলান। ১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলতে যাওয়া এই দলটাতে চোটের কারণে নেই স্টিভ স্মিথ। বাদ পড়েছেন একসময় যাকে পরবর্তী স্মিথ হিসেবে ধরা হতো সেই মারনাস লাবুশেন।
স্মিথ-লাবুশেনহীন দলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান কনস্টাস, খাজা ও গ্রিনের সঙ্গে তিনি অলরাউন্ডার ওয়েবস্টারকে ফিরিয়েছেন। মানে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা তিনি গড়তেই দেননি। সে কারণেই তো প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে দলটি গুটিয়ে গেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন ম্যাচে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। কৃতিত্ব জেইডেন সিলসও পাবেন অনেকটা। ৫ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে জশ ইংলিশ, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্সের উইকেট আছে।
শুরু থেকেই কাল অস্ট্রেলিয়া দিশেহারা পথিক ছিল। দলে ফেরা কনস্টাসকে শুরুতেই বোকা বানান কনস্টাস। কয়েকটি আউট সুইং করার পর একটি বল ভেতরে ঢুকতেই এলবিডব্লুর শিকার হন এই ওপেনার। শামার জোসেফ তাঁকে কীভাবে আউট করেছেন তিনি বলেছেন এভাবে, ‘আমি মনে করি ওকে ঠিকঠাকভাবে ফাঁদে ফেলেছিলাম। কয়েকটা আউট সুইং দিয়ে শুরু করি, তারপর হঠাৎ বলটা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিই।’
গ্রিন তো উইকেটে বেশিক্ষণ থাকবেন না এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন নম্বর তিন কাল করেছেন ৩ রান। এরপর ইংলিশকে আউট করেন সিলস। ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে খাজা ও হেড ৮৯ রানের জুটি গড়ে টেনে তোলেন। ৪৭ রানে খাজা আউট হলে পরের ৬৯ রানে ৭ উইকেট হারায় দলটি। দলে পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন হেড। তাঁকে আউট করেছেন জাস্টিন গ্রিভস।
ব্রিজটাউনে যে যন্ত্রণা অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে, সেটি পাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দলটি ৫৭ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে এখনো পিছিয়ে ১২৩ রানে। মিচেল স্টার্ক দুটি, হ্যাজলউড ও কামিন্স একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঅস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৬.
৫ ওভারে ১৮০ (হেড ৫৯, খাজা ৪৭; সিলস ৫/৬০, শামার জোসেফ ৪/৪৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৫৭/৪ (কিং ২৩*, কার্টি ২০; স্টার্ক ২/৩৫, কামিন্স ১/৮)।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কনস ট স কর ছ ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’