বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা
Published: 26th, June 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে নির্মিত ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ম্যুরাল ভাঙার ছবি ভাইরাল হলে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ম্যুরালটি পুনঃস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কুমিল্লা নগরীর রাজবাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের অধীন সরকারি জায়গায় কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এর আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে একটি শহীদ মিনার এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। ওই শহীদ মিনার ও ম্যুরালের পাশেই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পৈত্রিক বাড়ি। কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন। বুধবার সকাল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা দেয় তীব্র সমালোচনা। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা মুখ খুলেননি।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে রূপ দিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। তার স্মরণে স্থাপিত ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাই জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ম্যুরালটি পুনস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।’
বুধবার রাত ৮টার দিকে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.
১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ভাষাকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। রফিক তাঁর সহযোদ্ধা আবদুস সালামকে নিয়ে ‘এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনের আদায়ের চেষ্টা শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ গৌরবময় অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাদের সংগঠন একুশে পদক লাভ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর সকালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে মারা যান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম য র ল ভ ঙ গ র অভ য গ
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।