কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল ভাঙচুর
Published: 26th, June 2025 GMT
কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে নির্মিত ম্যুরাল ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
নগরীর রাজবাড়ি এলাকার কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে অবস্থিত ওই ম্যুরালটি ভাঙচুরের ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মহলসহ সচেতন নাগরিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ম্যুরাল ভাঙার ছবি ছড়িয়ে পড়লে দ্রুতই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীরা ঘটনাটিকে ‘ইতিহাস ও আত্মমর্যাদার উপর হামলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, “বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে রফিকুল ইসলামের অবদান জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে। তার স্মরণে স্থাপিত একটি ম্যুরাল ভেঙে ফেলা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত ম্যুরালটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানাচ্ছি।”
জেলা প্রশাসন জানায়, ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে শহীদ মিনার ও রফিকুল ইসলামের ম্যুরালটি নির্মাণ করা হয়। পাশেই ছিল তার পৈত্রিক বাড়ি। প্রতি বছর শিক্ষার্থীরা সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজটির শিক্ষকরা মুখ খুলতে নারাজ থাকলেও জেলা প্রশাসক মো.
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলাম জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানকে চিঠি লিখে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তার এ উদ্যোগ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর অনুমোদন পায় এবং ২০০০ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে আসছে।
এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালে তার সংগঠন একুশে পদকে ভূষিত হয়।
রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসের এই মহান সৈনিকের স্মৃতিতে নির্মিত ম্যুরাল ভেঙে ফেলার ঘটনায় কুমিল্লার সাধারণ মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা/রুবেল/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।