ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপন কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অন্তত ১৮ দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। তিন বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ধরনা দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। এখনো এর সুরাহা হয়নি। এ বছরের শেষের দিকে টার্মিনালটি চালু হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপনের কাজ বেবিচক তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করাতে চাইছে। তবে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের ভাষ্য, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। বিটিআরসিও বলছে, আইন অনুযায়ী অপারেটরদের বাইরে অন্য কারও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে অ্যামটব তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের বেতার যোগাযোগ ও তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিধি অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ বেতার যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করতে পারবে না।

এরই মধ্যে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। গত জানুয়ারিতে বেবিচক জানিয়েছিল, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ টার্মিনাল চালু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপনের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮টি চিঠি চালাচালি হয়েছে। এসব চিঠি চালাচালি হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বেবিচকের মধ্যে।

মোবাইল অপারেটরদের ভাষ্য, কাজটি অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিটিআরসিরও একই কথা। বেবিচক তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করাতে চাইছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করে। সে সময় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৪ সালের অক্টোবর–নভেম্বরের মধ্যে টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে। এরপর গত বছরের জুনে তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের এই তৃতীয় টার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ফাইভ–জি প্রযুক্তি চালুর চ্যালেঞ্জ দেন। সে সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য চিঠির পর চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর পাঁচবার চিঠি চালাচালি হয়েছে অ্যামটব ও বেবিচকের মধ্যে। এ ছাড়া গত ৭ মে বেবিচক, অ্যামটব ও বিটিআরসির একটি বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠকের পর ২৯ মে বেবিচককে একটি চিঠি দিয়েছে অ্যামটব। তাতে অ্যামটব লিখেছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা নিশ্চিত না করে তৃতীয় টার্মিনাল চালু করা হবে বিপর্যয়মূলক। অপারেটররা জানিয়েছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা স্থাপনে অন্তত ২১ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।

মোবাইল অপারেটর সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপনের কাজ তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করানোর আগ্রহ দেখিয়েছে বেবিচক। পাশাপাশি অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব ভাগাভাগির প্রসঙ্গও তোলে তারা।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.

) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, বেবিচক বিটিআরসির কাছে এসেছিল। তারা জানতে চেয়েছিল, তৃতীয় কেউ অবকাঠামো করে দিলে সেখান থেকে অপারেটররা কাজ করতে পারে কি না। তবে আইন অনুযায়ী অপারেটরদের বাইরে অন্য কারও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুযোগ নেই। বিটিআরসি তা জানিয়ে দিয়েছে। এখন বাকিটা বেবিচকের সিদ্ধান্ত।

চিঠিতে অ্যামটব আরও বলেছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেবিচক যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।

এ ব্যাপারে অ্যামটব তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের বেতার যোগাযোগ ও তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিধি অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ বেতার যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করতে পারবে না। পাশাপাশি বিটিআরসির বরাদ্দ করা বেতার ফ্রিকোয়েন্সির বাইরে অন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যাবে না। এ বিধানের লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ মোবাইল অপারেটররাই এই নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেতার যোগাযোগ ও বরাদ্দ করা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কাজের সুযোগ নেই।

চিঠিতে অ্যামটব আরও বলেছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেবিচক যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালে তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানান। প্রতিবেদনের জন্য তাঁর বক্তব্য প্রয়োজন জানানো হলে তিনি আর সাড়া দেননি। বেবিচকের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেও প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

অপারেটররা বলছেন, মেট্রোরেল থেকে শুরু করে সরকারের যত ধরনের অবকাঠামো হয়েছে, সেখানে সরকারি বিধি অনুযায়ী চার অপারেটর নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করেছে। পাশাপাশি সরকারকে তারা রাজস্ব ভাগাভাগির অংশসহ সব ধরনের শুল্ক, মূসকসহ নানা ফি দিয়ে আসছে। তাই অন্য কোনো পক্ষকে রাজস্বের ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দরের টার্মিনালের মতো স্থানে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা অত্যাবশ্যক। এ জন্য টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করে সেবা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল সেবা দিতে তিন ধরনের লাইসেন্সির (এনটিটিএন, টাওয়ার কো, সেলুলার) অংশগ্রহণ লাগে। যেহেতু স্পেকট্রাম বা নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের সুযোগ নেই, তাই চারটি অপারেটরের সবার জন্য আলাদা অবকাঠামো ছাড়া কার্যকর সেবা সম্ভব নয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র অবক ঠ ম ব ট আরস র অন য ক অন য য় ধরন র বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফের আইটেম কন্যা সামান্থা?

জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু। আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ সিনেমার আইটেম গানে প্রথমবার কোমর দুলিয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গানটির একটি লিরিক্যাল ভিডিও ইউটিউবে মুক্তি পায়। ‘ও আন্তাভা, ও ও আন্তাভা’ শিরোনামের এই গান মুহূর্তের মধ্যেই আলোচনায় চলে আসে। সামান্থার এই আইটেম গান বিশ্বের সেরা ১০০ মিউজিক ভিডিওর তালিকায় সবার উপরে জায়গা করে নেয়। দর্শকপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছিল যে, ৮-৮০ বছর বয়সি মানুষও এই গানে নেচেছেন।

এরপর ‘পুষ্পা টু’ সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এতেও একটি আইটেম গান রাখা হয়। এ গানেও তাকে পারফর্ম করার প্রস্তাব দিলে তা ফিরিয়ে দেন। কেবল ‘পুষ্পা টু’ নয়, তাছাড়াও বেশ কটি সিনেমার আইটেম গানে নাচতে প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গ্রহণ করেননি এই অভিনেত্রী। এবার জানা গেল, ফের আইটেম গানে দেখা যাবে সামান্থাকে। 

সিয়াসাত ডটকম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তিন বছর পর, সামান্থা আবারো একটি আইটেম গানে ঝড় তুলতে প্রস্তুত বলে জানা যাচ্ছে। রাম চরণের পরবর্তী সিনেমা ‘পেদ্দি’। সম্ভবত স্পোর্টস-ড্রামা ঘরানার এ সিনেমার আইটেম গানে পারফর্ম করতে দেখা যেতে পারে সামান্থা রুথ প্রভুকে। 

আরো পড়ুন:

আলিয়া-দীপিকা-রাশমিকাকে টপকে শীর্ষে সামান্থা

প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে প্রচারে অংশ নেবেন সামান্থা?

এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে দীর্ঘ দিন পর ‘রাঙ্গাস্থালাম’ তারকাদের একসঙ্গে দেখা যাবে। ‘পেদ্দি’ সিনেমার আইটেম গানে সামান্থার পারফর্মের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সিনেমা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, নির্মাতারা সামান্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

আশির দশকে অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে ‘পেদ্দি’ সিনেমার কাহিনি। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন রাম চরণ। শক্তিশালী এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য খেলাধুলার মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের একত্রিত করেন তিনি। এতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্রীদেবী কন্যা জাহ্নবী কাপুর।

তাছাড়াও সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন শিবা রাজকুমার, জগপতি বাবু, দিব্যেন্দু শর্মা প্রমুখ। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করছেন এ. আর. রহমান। এরই মধ্যে সিনেমাটির চারটি গানের শুটিং শেষ করেছেন নির্মাতারা। এখন হায়দরাবাদে জোর গতিতে শুটিং চলছে। খুব শিগগির সেখানে যোগ দেবেন জাহ্নবী কাপুর।

২৫০-৩০০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘পেদ্দি’ সিনেমা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ২৭ মার্চ সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা। 

সামান্থা রুথ প্রভু অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজ ‘সিটাডেল: হানি বানি’। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত মার্কিন সিরিজের হিন্দি রিমেক এটি। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার এ সিরিজ পরিচালনা করেন রাজ ও ডিকে। এতে সামান্থার বিপরীতে অভিনয় করেন বরুণ ধাওয়ান।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ