শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনে জটিলতা
Published: 26th, June 2025 GMT
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপন কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অন্তত ১৮ দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। তিন বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ধরনা দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। এখনো এর সুরাহা হয়নি। এ বছরের শেষের দিকে টার্মিনালটি চালু হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপনের কাজ বেবিচক তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করাতে চাইছে। তবে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের ভাষ্য, এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। বিটিআরসিও বলছে, আইন অনুযায়ী অপারেটরদের বাইরে অন্য কারও মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে অ্যামটব তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের বেতার যোগাযোগ ও তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিধি অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ বেতার যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করতে পারবে না।এরই মধ্যে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। গত জানুয়ারিতে বেবিচক জানিয়েছিল, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ টার্মিনাল চালু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্কের অবকাঠামো স্থাপনের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮টি চিঠি চালাচালি হয়েছে। এসব চিঠি চালাচালি হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বেবিচকের মধ্যে।
মোবাইল অপারেটরদের ভাষ্য, কাজটি অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিটিআরসিরও একই কথা। বেবিচক তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করাতে চাইছে।২০২৩ সালের অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করে। সে সময় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৪ সালের অক্টোবর–নভেম্বরের মধ্যে টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে। এরপর গত বছরের জুনে তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের এই তৃতীয় টার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ফাইভ–জি প্রযুক্তি চালুর চ্যালেঞ্জ দেন। সে সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য চিঠির পর চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর পাঁচবার চিঠি চালাচালি হয়েছে অ্যামটব ও বেবিচকের মধ্যে। এ ছাড়া গত ৭ মে বেবিচক, অ্যামটব ও বিটিআরসির একটি বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠকের পর ২৯ মে বেবিচককে একটি চিঠি দিয়েছে অ্যামটব। তাতে অ্যামটব লিখেছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা নিশ্চিত না করে তৃতীয় টার্মিনাল চালু করা হবে বিপর্যয়মূলক। অপারেটররা জানিয়েছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা স্থাপনে অন্তত ২১ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
মোবাইল অপারেটর সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপনের কাজ তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে করানোর আগ্রহ দেখিয়েছে বেবিচক। পাশাপাশি অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব ভাগাভাগির প্রসঙ্গও তোলে তারা।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
এ ব্যাপারে অ্যামটব তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনের বেতার যোগাযোগ ও তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা বিধি অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ বেতার যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করতে পারবে না। পাশাপাশি বিটিআরসির বরাদ্দ করা বেতার ফ্রিকোয়েন্সির বাইরে অন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যাবে না। এ বিধানের লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ মোবাইল অপারেটররাই এই নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেতার যোগাযোগ ও বরাদ্দ করা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কাজের সুযোগ নেই।
চিঠিতে অ্যামটব আরও বলেছে, তৃতীয় টার্মিনালে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য বেবিচক যে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে, তা বাস্তবসম্মত নয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন পাঠালে তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানান। প্রতিবেদনের জন্য তাঁর বক্তব্য প্রয়োজন জানানো হলে তিনি আর সাড়া দেননি। বেবিচকের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেও প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
অপারেটররা বলছেন, মেট্রোরেল থেকে শুরু করে সরকারের যত ধরনের অবকাঠামো হয়েছে, সেখানে সরকারি বিধি অনুযায়ী চার অপারেটর নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করেছে। পাশাপাশি সরকারকে তারা রাজস্ব ভাগাভাগির অংশসহ সব ধরনের শুল্ক, মূসকসহ নানা ফি দিয়ে আসছে। তাই অন্য কোনো পক্ষকে রাজস্বের ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দরের টার্মিনালের মতো স্থানে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সেবা অত্যাবশ্যক। এ জন্য টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা করে সেবা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল সেবা দিতে তিন ধরনের লাইসেন্সির (এনটিটিএন, টাওয়ার কো, সেলুলার) অংশগ্রহণ লাগে। যেহেতু স্পেকট্রাম বা নেটওয়ার্ক শেয়ারিংয়ের সুযোগ নেই, তাই চারটি অপারেটরের সবার জন্য আলাদা অবকাঠামো ছাড়া কার্যকর সেবা সম্ভব নয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র অবক ঠ ম ব ট আরস র অন য ক অন য য় ধরন র বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)