হঠাৎ করেই  ছয় বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টেনে নিজের বিচ্ছেদের কথা জানালেন জনপ্রিয় গায়িকা দিলশাদ নাহার কনা। সেই সঙ্গে গিয়েছেন আবেগভরা বার্তায়। 

কনার এই স্ট্যাটাসের ঠিক এক ঘণ্টা পর, রাত ১২টার দিকে সামাজিক মাধ্যম গরম হয়ে ওঠে আরেকটি পোস্টে। সেখানে আরেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি লেখেন, জন্ম মৃত্যু বিয়ে বিচ্ছেদ, এর সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়-বাণীতে শেয়াল রানী।

সেই এক বাক্যেই নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। কনার স্ট্যাটাসের সঙ্গে শব্দ মিল এবং “শেয়াল রানী” ট্যাগ-সব মিলিয়ে অনেকেই ধরে নেন, এটি কনাকে উদ্দেশ করেই লেখা। বিতর্ক আরও তীব্র হয় যখন পুরনো প্রেক্ষাপট সামনে আসে-গত বছর ন্যান্সির দেওয়া একটি শেয়ালের ছবিসংবলিত পোস্ট, যা নিয়েও তখন কনাকে ঘিরে ইঙ্গিত ছিল বলে গুঞ্জন।

যেখানে এক নারী তার জীবন ভেঙে যাওয়ার সংবাদে সবার সহমর্মিতা কামনা করছিলেন, সেখানে অন্য একজন নারীর এমন তির্যক মন্তব্য দেখে অনেকেই হতাশ হন। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শিল্পীদের পাশে থাকার কথা জানালেন অরেক সংগীতশিল্পী সালমা আক্তার।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সালমা লিখেছেন, ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কঠিন সময় শিল্পীর পাশে থাকাটা জরুরি। আমাদের ট্যাগ কিন্তু আমরা শিল্পী। সেখানে আমাদের কর্তব্য সবাই একসাথে মিলে থাকাটা। দুই দিনের দুনিয়া কে কখন আছি আবার নেই। যার যার কষ্ট তার তার। সবাই মিলে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।’

২০০০ সাল থেকে কনা গান গেয়ে আসছেন, ন্যান্সির অভিষেক ২০০৫-এ। অন্যদিকে সালমা ২০০৬ ক্লোজআপ- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ-এর (দ্বিতীয়) বিজয়ী হয়ে সংগীত জীবন শুরু করেন। তিনজনই দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ