হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন দেশের সংগীতাঙ্গনের তিনজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী—কনা, ন্যান্সি ও সালমা। বিষয়টি শুরু হয় কনার সংসার ভাঙার খবরে, কিন্তু এরপর একে একে দুটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তৈরি হয় গুঞ্জন— কে কাকে খোঁচা দিলেন? আর কে দিলেন সহানুভূতির বার্তা?

কনার আবেগঘন ঘোষণা। বুধবার (২৫ জুন) রাতে ফেসবুক পেজে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে দীর্ঘ ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটার কথা জানান দিলশাদ নাহার কনা। তিনি লেখেন, “আমি আপনাদের ভালোবাসার কনা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবই আল্লাহর ইচ্ছা। ঠিক তেমনি যেকোনো বিচ্ছেদও হয় তাঁরই ইশারায়। আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী এবং প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, দীর্ঘ ছয় বছরের বিবাহিত জীবনের পর আমি এবং গোলাম মোহাম্মাদ ইফতেখার গহিন গত ১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করেছি।”

এই স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়তেই সহানুভূতি ও সমবেদনার ঢেউ ওঠে ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে। কিন্তু এরপরই আলোচনার মোড় ঘুরে যায়। কনার স্ট্যাটাসের কিছুক্ষণ পরেই নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, “জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, বিচ্ছেদ— এর সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়… বাণীতে শেয়াল রানী!”

ন্যান্সি কারও নাম উল্লেখ না করলেও স্ট্যাটাসের সময় এবং বক্তব্য দেখে অনেকেই ধরে নেন, এটি কনার উদ্দেশে ব্যঙ্গাত্মক খোঁচা। পোস্টটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারও চোখে এটি ঠাট্টা, আবার কারও মতে এটি অপ্রয়োজনীয় বিদ্রূপ।
এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী চমক হিসেবে আসে সালমার স্ট্যাটাস। তিনি নাম উল্লেখ না করলেও তার লেখায় স্পষ্টতই একটি সহানুভূতির সুর এবং শিল্পীসমাজে ঐক্যের আহ্বান পাওয়া যায়। তিনি লেখেন, “মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কঠিন সময়ে শিল্পীর পাশে থাকাটা জরুরি। আমাদের ট্যাগ কিন্তু আমরা শিল্পী। সেখানে আমাদের কর্তব্য সবাই একসাথে মিলে থাকাটা। দুই দিনের দুনিয়া কে কখন আছি আবার নেই। যার যার কষ্ট তার তার। সবাই মিলে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।”

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, সালমা পরোক্ষভাবে কনার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ন্যান্সির খোঁচার প্রতি সমালোচনামূলক ইঙ্গিত করেছেন। 

তিনজন প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর পরপর পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে আলোচনা ও কিছুটা বিভাজনেরও। তবে একথা স্পষ্ট— শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের কষ্টের মুহূর্তে সমবেদনা ও সংবেদনশীল হওয়া উচিত। কে কাকে খোঁচা দিলেন, আর কে পাশে দাঁড়ালেন তা সময়ই বলবে।

ঢাকা/রাহাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ