খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দখল পাল্টা দখলে অস্থিরতা
Published: 27th, June 2025 GMT
দখল পাল্টা দখলে অস্থির খুলনার প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। অনুমোদিত ট্রাস্টি না হয়েও নিজেকে বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন মিজানুর রহমান। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ‘মব’ তৈরি করে উপাচার্য অধ্যাপক সেখ মো. এনায়েতুল বাবরকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন তিনি। তবে ঘটনার প্রতিবাদে তালা দেন শিক্ষার্থীদের অন্য অংশ। গত তিন দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুমোদনের পরের বছর শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। শুরুতে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ১৮ জন। চেয়ারম্যান খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর খালেক আত্মগোপনে চলে যান। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন সিরাজুল হক চৌধুরী।
সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান হওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন সিরাজুল হক। তিনি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ‘মব’ তৈরি করে ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোক্তা সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারকে কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার অফিস আদেশ দেন।
এর পর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় মিজানুর রহমানকে ট্রাস্টি সদস্য করেন সিরাজুল। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে আজিজুল হক ও সৈয়দ হাফিজুর রহমানকে ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন।
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে যৌথমূলধনি কোম্পানি থেকে নিবন্ধন প্রয়োজন। নতুন তিনজনের ক্ষেত্রে এর কিছুই করা হয়নি। এ ব্যাপারে সিরাজুল হক বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডে আমি ছাড়া সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের। বোর্ডে বিএনপির লোক বাড়নোর জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার পরামর্শে নতুন তিনজন যুক্ত করা হয়।’ তদন্ত কমিটি অনিয়ম না পাওয়ায় ট্রাস্টির তিন সদস্যকে কার্যক্রমে ফেরানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ২১ মে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা ডেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান। হাফিজুর রহমানকে করা হয় সদস্য সচিব। এর পর থেকে সিরাজুল হককে সরিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন মিজানুর। অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে অন্য ট্রাস্টিদের পক্ষে টানতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ট্রাস্টি সদস্য তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ও পবিত্র কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে বিএনপির সমাবেশে হামলার মামলায়। অথচ এ মামলায় ১৫৬ আসামির বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তা।
মিজানুরের সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে সিরাজুল হক বলেন, ‘এক কোটি টাকা বাড়তি বিল প্রদান নিয়ে তাদের দ্বন্দ্বের শুরু। আমার সই জাল করে ২১ মে সভা ডাকা হলেও বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত হননি। মিজানুর রহমান ট্রাস্টির বোর্ডের বৈধ সদস্য নন, তিনি কীভাবে চেয়ারম্যান হন? রাজনৈতিক মদদে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল হচ্ছে; বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছি না।’ বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বেশির ভাগ সদস্য ফ্যাসিস্টের দোসর। তাদের অনুরোধে আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। শিগগির দোসরদের দুর্নীতি প্রকাশ করা হবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘ইউজিসি আমাদের ট্রাস্টি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। ফলে যৌথমূলধনি কোম্পানির নিবন্ধন জরুরি নয়।’
এদিকে, গত ১৯ জুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে রাত ১১টা পর্যন্ত দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে সেনা সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার দু’দিন পর উপাচার্য অধ্যাপক সেখ মো.
গত ২৫ জুন সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাহিদা খানম। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান নিজেদের চেয়ারম্যান-সদস্য সচিব ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলে রেখেছেন। চাপ দিয়ে বিজ্ঞাপন, ভর্তি-সংক্রান্ত মার্কেটিংয়ের কাজসহ বিভিন্ন সভার নামে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছেন। হেয় করতেই প্রক্টর শাকিল আহমেদ ও পরিচালক লিয়াজোঁ শেখ মারুফুর রহমানের উস্কানিতে কতিপয় শিক্ষার্থী আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।’
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে একই অভিযোগ দিয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ছিটকে পড়া সিরাজুল হক চৌধুরী।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা সমকালকে বলেন, ‘মিজানুরকে আমি চিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কী সব ঝামেলা চলছে বলে শুনেছি। এসবে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তা ছাড়া কোনো বিষয় নিয়ে এখনও কেউই আমার কাছে আসেননি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল ম জ ন র রহম ন স র জ ল হক ব এনপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আশুগঞ্জে বিস্ফোরক মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল ইসলামকে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
শুক্রবার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার বাসা থেকে নগদ ৭ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার কবিরুল ইসলাম আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকার মৃত আবু তাহেরের ছেলে। তিনি আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলেন।
আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. খাইরুল আলম বলেন, কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।