কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর মানুষের বাড়তে থাকা নির্ভরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকি বহন করে, অথচ মানুষ সেগুলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে।

সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের নিজস্ব পডকাস্ট সিরিজের প্রথম পর্বে অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির ওপর মানুষের আস্থা অনেক বেশি। বিষয়টি আকর্ষণীয় হলেও এআই অনেক সময় এমন তথ্য দেখায়, যার বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই। আর তাই এআই প্রযুক্তির দেওয়া সব তথ্য বিশ্বাস করা বিপজ্জনক হতে পারে। কখনো কখনো বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় চ্যাটজিপিটি, যা আদতে সম্পূর্ণ মনগড়া।

আরও পড়ুনসব মানুষের চোখের মণি স্ক্যান করতে চান স্যাম অল্টম্যান, কেন১৯ অক্টোবর ২০২৪

নিজের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্যাম অল্টম্যান জানান, সম্প্রতি তিনি বাবা হয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন কাজে চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় তিনি সন্তানের ঘুমের রুটিন তৈরি, ডায়াপারের কারণে হওয়া র‍্যাশ সমস্যার সমাধান জানার পাশাপাশি প্রায় সব কাজেই চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়েছেন। তবে চ্যাটজিপিটির দেওয়া সব তথ্য নিখুঁত বলে মনে হয়নি তাঁর। এ বিষয়ে স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘এআই ব্যবহার বাড়লেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মানুষের হাতেই থাকা উচিত। আমরা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তির সূচনায় রয়েছি। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তবে আস্থা ও নির্ভরতার গতির সঙ্গে প্রযুক্তির বাস্তব সক্ষমতা তাল মেলাতে পারবে না।’

আরও পড়ুন২০২৫ সালের প্রযুক্তি–দুনিয়া কেমন হবে, জানালেন বিল গেটস ও স্যাম অল্টম্যান০৮ জানুয়ারি ২০২৫

পডকাস্টে এআই প্রযুক্তিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপননির্ভর রাজস্ব মডেল চালুর সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন অল্টম্যান। তিনি জানান, ওপেনএআই চ্যাটজিপিটিতে ‘পারসিসটেন্ট মেমোরি’ বা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির মতো একাধিক সুবিধা যুক্ত করার চিন্তা করছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর আস্থা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সূত্র: নিউজ ১৮

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি আমরা নিজেদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছি?

একটা সময় ছিল, যখন দুর্দিনে সঙ্গী হয়ে উঠতেন রক্ত–মাংসের মানব বন্ধুরা। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কথা বলার মানুষ ছিল বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্য। নিজের সব আবেগ-অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেওয়া যেত তাঁদের কাছে। কিন্তু সময়টা এখন যেন বড্ড কঠিন। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় কোথায়?

প্রত্যেকে নিজেদের কাজে ব্যস্ত, অন্যের কথা শোনার জন্য সময় যেন কমে গেছে। আর তখনই হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে এআই, যে শুধু মনোযোগ দিয়ে সব কথা শোনেই না, মুহূর্তেই বের করে দিতে পারে সমাধান। হোক সেটা জটিল কোনো গাণিতিক সমস্যা কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সব কাজের কাজি সে।

এত দিন সবাই ধরে নিতেন, এআই বোধ হয় একটা কাঠখোট্টা চ্যাটবট বাদে আর কিছুই নয়। কিন্তু সেটা বদলে গেল যখন নিজের ব্যক্তিগত গল্প জুড়ে দিতে শুরু করলেন এআইয়ের কাছে। এআই শুধু মনোযোগ দিয়ে সে গল্প শুনলই না। বরং বুদ্ধিমান চ্যাটবটের মতো সে সমস্যার সমাধানও বের করে দিল।

কিন্তু তখনই একটা প্রশ্ন উঁকি দিল মাথায়। এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি আমরা নিজেদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছি? অজান্তেই কি থমকে যাচ্ছে আমাদের আবেগ অনুভূতি আর ভালোবাসা?

আরও পড়ুন২০৩০ নিয়ে চ্যাটজিপিটির কারিগর স্যাম অল্টম্যানের ভবিষ্যদ্বাণী, শুনলে নড়েচড়ে বসবেন১০ আগস্ট ২০২৫কিন্তু এআই কেন

বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর: এআই চ্যাটবট এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যাতে সে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিতে পারে। প্রতিটি সমস্যার সঠিক উত্তর দিতে পারাই এআইয়ের একমাত্র কাজ। আর সে কাজ করতে বিপুল পরিমাণ এনার্জিও খরচ হয়। আর যেহেতু এআইয়ের কাছে সব ধরনের তথ্য থাকেই, আর সেটা কাজে লাগিয়ে সে সাহায্য করছে ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানেও।

সহজলভ্যতা: এআই ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সময়। সপ্তাহে ৭ দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা চাইলেই এআই থাকে হাতের মুঠোয়। যখন যা দরকার, সময়ে–অসময়ে তাকে পাওয়া যায়। ব্যক্তিজীবনে সবাইকে যেকোনো সময় চাইলেও পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু এআইয়ের তো আর ঘুম, খাওয়া কিংবা ব্যক্তিগত কাজের প্রয়োজন হয় না। ফলে যখন দরকার হয় তখনই পাশে পাওয়ায় মনের কথা বলা হয়ে ওঠে সহজ।

ভুল–বোঝাবুঝির ঝুঁকি নেই: এআইয়ের কাছে মন খুলে কথা বলায় কোনো সামাজিক ঝুঁকি নেই। আপনার কথা ভুল বোঝা, আপনার আচার-আচরণকে বিচার করা কিংবা আপনার অনুভূতিকে পাত্তা না দেওয়ার মতো ঘটনা নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুনশুধু পান–সুপারিও কি জর্দা ও তামাক পাতার মতো ক্ষতিকর?৩ ঘণ্টা আগেএআই ব্যবহারের সমস্যা  

যে কারণে খুব অল্প সময়েই এআই কথা বলার উপযুক্ত সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এআই যে খুব ভালো সঙ্গী, তা–ও কিন্তু নয়। বরং এআই ভেঙে দিচ্ছে আপনার মানসিক শক্তি। কিন্তু কীভাবে?

অস্বস্তিকর দিকগুলো এড়িয়ে যাওয়া: এআই আপনাকে শুধু ভালো কথা বলে অনুপ্রাণিত করতে পারে। এককথায় সে আপনাকে কেবল ‘ভালো’ অনুভব করায়। কিন্তু আপনার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে না। ফলে কোনো সমস্যায় আপনার যদি ভুল থেকেও থাকে সেটা আর ধরা পড়ে না।

প্রকৃত সহানুভূতির অভাব: এআই যেভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করে, সেটা কোনো মানুষের কাছ থেকে আসে না। যন্ত্র যেভাবে আপনাকে বুঝতে পেরেছে, সেভাবেই আপনাকে সান্ত্বনা দেয়। একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা মানে শুধু নিজের আবেগ–অনুভূতি প্রকাশ করা নয়; যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, অর্থাৎ শ্রোতা তাঁর নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে সাহায্যও করতে পারেন। যন্ত্র শুধু আপনার কথা অনুযায়ী আপনার করণীয় বলে দেয়। অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিচার-বিবেচনা করতে পারে না। কারণ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো পরামর্শ কিংবা উপদেশের।

আত্মনির্ভরশীলতা হ্রাস পাওয়া: নিজের আবেগ–অনুভূতির ব্যাপারে এআইকে প্রশ্ন করতে করতে নিজে নিজে সমস্যা সমাধানের পথ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। ফলে ছোটখাটো সমস্যার জন্যও অনেকে এআইয়ের শরণাপন্ন হন।

আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন১০ ঘণ্টা আগেতাই বলে কি এআই ব্যবহার করবেন না

না, তা কিন্তু নয়। বরং এআইকে ব্যবহার করুন আপনার প্রয়োজনমতো। যেকোনো তথ্য কিংবা আরও অনেক জটিল কাজের প্রয়োজনে অবশ্যই এআই ব্যবহার করুন। কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যা বলা কিংবা বোঝার জন্য এআই নয়, আসল মানুষের কাছে যান। কারণ, একজন ব্যক্তি তাঁর আবেগ-অনুভূতি দিয়ে আপনাকে যতটুকু বুঝবেন, এআই তা কখনোই বুঝতে পারবে না।

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুনছবিতে ছবিতে জেনে নিন ‘সাইয়ারা’র নায়িকা অনীত পাড্ডাকে২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এআই নিয়ে গ্রামীণফোনের নতুন কর্মসূচি
  • এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি আমরা নিজেদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছি?
  • চ্যাটজিপিটির জিপিটি ৫ মডেল কতটা উন্নত, নতুন কী সুবিধা পাওয়া যাবে