এআইয়ের দেওয়া সব তথ্য বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ, সতর্ক করলেন স্বয়ং স্যাম অল্টম্যান
Published: 28th, June 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর মানুষের বাড়তে থাকা নির্ভরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকি বহন করে, অথচ মানুষ সেগুলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে।
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের নিজস্ব পডকাস্ট সিরিজের প্রথম পর্বে অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির ওপর মানুষের আস্থা অনেক বেশি। বিষয়টি আকর্ষণীয় হলেও এআই অনেক সময় এমন তথ্য দেখায়, যার বাস্তবে কোনো ভিত্তি নেই। আর তাই এআই প্রযুক্তির দেওয়া সব তথ্য বিশ্বাস করা বিপজ্জনক হতে পারে। কখনো কখনো বাস্তব অস্তিত্ব না থাকলেও সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় চ্যাটজিপিটি, যা আদতে সম্পূর্ণ মনগড়া।
আরও পড়ুনসব মানুষের চোখের মণি স্ক্যান করতে চান স্যাম অল্টম্যান, কেন১৯ অক্টোবর ২০২৪নিজের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্যাম অল্টম্যান জানান, সম্প্রতি তিনি বাবা হয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন কাজে চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় তিনি সন্তানের ঘুমের রুটিন তৈরি, ডায়াপারের কারণে হওয়া র্যাশ সমস্যার সমাধান জানার পাশাপাশি প্রায় সব কাজেই চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়েছেন। তবে চ্যাটজিপিটির দেওয়া সব তথ্য নিখুঁত বলে মনে হয়নি তাঁর। এ বিষয়ে স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘এআই ব্যবহার বাড়লেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা মানুষের হাতেই থাকা উচিত। আমরা একটি শক্তিশালী প্রযুক্তির সূচনায় রয়েছি। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তবে আস্থা ও নির্ভরতার গতির সঙ্গে প্রযুক্তির বাস্তব সক্ষমতা তাল মেলাতে পারবে না।’
আরও পড়ুন২০২৫ সালের প্রযুক্তি–দুনিয়া কেমন হবে, জানালেন বিল গেটস ও স্যাম অল্টম্যান০৮ জানুয়ারি ২০২৫পডকাস্টে এআই প্রযুক্তিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপননির্ভর রাজস্ব মডেল চালুর সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন অল্টম্যান। তিনি জানান, ওপেনএআই চ্যাটজিপিটিতে ‘পারসিসটেন্ট মেমোরি’ বা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতির মতো একাধিক সুবিধা যুক্ত করার চিন্তা করছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর আস্থা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সূত্র: নিউজ ১৮
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।
সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’
‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’
ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর
পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’
তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’