ফরিদপুরে সংগঠনের একাংশের বাধার মুখে আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মেলন পণ্ড হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পৌর অডিটরিয়ামে এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।

সম্মেলন শুরুর আগে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি শুরু হলে ওই এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ ওই অডিটরিয়ামের গেট আটকে দেয়। ফলে সেখানে কেউ ঢুকতে পারেনি। পরে উভয় পক্ষ ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।

ফরিদপুর আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, শ্রম অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সংগঠনের সম্মেলন ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ জন্য ২৩ জুন পৌরসভায় টাকা পরিশোধ করে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পৌর অডিটরিয়ামে হলরুমটি ভাড়া নেওয়া হয়।

অন্যদিকে ২৬ জুন ফরিদপুর আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি আরিফ হাসানও একই মিলনায়তনে ‘প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ’ আয়োজনের অনুমতি চান। জানানো হয়, এ সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ।

ফরিদপুর আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান শেখ জানান, এ বিরোধ এড়ানোর জন্য গত শুক্রবার রাতে তিনি নায়াব ইউসুফের সঙ্গে দেখা করেন। নায়াব সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবদুল মান্নানকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি হননি। সম্মেলনে শ্রমিকেরা জড়ো হলে আরিফ হাসানসহ কয়েকজন সম্মেলনস্থলে বাধা দিতে আসেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা সম্মেলন করে নির্বাচন দিতে চেয়েছিলাম; কিন্তু আমাদের তা করতে দেওয়া হলো না।’ এ আয়োজনে তাঁর অন্তত ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে আরিফ হাসান বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (আবদুল মান্নান) অধিকাংশ শ্রমিক নেতাকে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ে সম্মেলন করে পকেট কমিটি করতে চেয়েছিল। ওরা আওয়ামীপন্থী আর আমরা বিএনপিপন্থী। ১৫ বছর ওরা লুটপাট করে খেয়েছে। নতুন করে আবার লুটপাট করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ জন্য সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে আমরা তাঁদের প্রতিহত করেছি।’

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদ উজ্জামান বলেন, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ