‘ব্যবসাকে রাজনীতিকীকরণ করা চলবে না। এটা পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট না, এটা বিএনপির সিদ্ধান্ত। যেসব ব্যবসায়িক সংগঠন আছে, রাজনীতিকীকরণ করা চলবে না। তবে ফ্যাসিস্টদের দোসরমুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিস্টদের রেখে আগামী দিনে কোনো সংগঠন চালানো যাবে না। এরপরে কে নেতা হবে, সেটা ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত, এখানে কোনো দলীয়করণের সুযোগ নেই।’

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকার জালালাবাদ গ্যাস অডিটরিয়ামে ‘সিলেট বিজনেস ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সিলেট বিভাগের চার জেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্টদের মতো ওই সংগঠন দখল করার ব্যবসাতে নামি নাই। ফ্যাসিস্টরা যা করেছে, ব্যবসায়ী সংগঠন দখল, এখানে বিএনপি নাই। কিন্তু দোসরমুক্ত করে ফেলবেন আপনারা। এই দোসররা ধ্বংস করেছে অর্থনীতিকে, লুটপাট করেছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যবসাকে কেড়ে নিয়েছে, ব্যবসাকে মনোপলাইজ করেছে তাদের নিজস্ব স্বার্থের জন্য। ব্যবসায়িক নীতিমালা পরিবর্তন করেছে, সরকারের নীতিমালা পরিবর্তন করেছে, আইনের শাসনের তোয়াক্কা করে নাই। সেই জায়গায় আর যাওয়া যাবে না।’

ব্যবসাকে গণতন্ত্রায়ণ করতে বিএনপি কাজ করবে বলে জানিয়েছেন আমীর খসরু। সবার কাছে একটা ব্যবসাবান্ধব দেশ গড়ার জন্য এবং বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য যে পরিবেশ দরকার, সেটা নিশ্চিত করতে বিএনপির নানামুখী পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ব্যবসার সঙ্গে একটা রাজনৈতিক সরকারের ঘনিষ্ঠ সংযোগ থাকে। মন্ত্রণালয় হচ্ছে দেশকে সেবা করার জন্য। মন্ত্রণালয় দেশের মানুষকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য নয়। দেশের পরিবেশ, ব্যবসায়ীদের অবস্থান জেনে–শুনে–বুঝে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এতে করে সবার জন্য ব্যবসার একটা সুস্থ পরিবেশ থাকবে। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী দিনে নীতমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যবসাবান্ধব দেশ যদি গড়তে হয়, তাহলে সরকারের নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশকে ‘ওভাররেগুলেটেড’ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘এত রেগুলেশন, কেউ কাজ করতে পারছে না এখানে। প্রতিটি জায়গায় বাধা, ব্যুরোক্রেটিক বাধা, নইলে ব্যাংকের টাকা নাই, নইলে আপনার সরকারের নীতিমালায় বাধা, অথবা ব্যবসার পরিবেশের বাধা। সুতরাং আগামী দিনের বাংলাদেশে আমরা যে পরিবর্তনের কথা বলছি, আমূল পরিবর্তন, ছোটখাটো কোনো পরিবর্তন নয়। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ব্যবসায়ীরা যদি কাজ করতে না পারে, অর্থনীতি যদি ফাংশন না করে, ইন্ডাস্ট্রি যদি কাজ করতে না পারে, তাহলে তো কেউ পারবে না। তাহলে শ্রমিকেরও কোনো অবস্থান থাকবে না, রপ্তানিরও কোনো অবস্থান থাকবে না, মার্কেটে যে চাহিদা, সে চাহিদা মেটার জন্য কেউ থাকবে না।’

অর্থনীতিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার আগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৬ ছিল জানিয়ে বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, এই প্রবৃদ্ধি কিন্তু এখনো বাংলাদেশে অর্জন হয়নি। যে ধারা বিএনপি স্থাপন করেছিল, তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে আজ ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকত। কিন্তু সেটা গত ১৭ বছরে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

সেটাকে পুনরুদ্ধারের তাগিদ দিয়ে আমীর খসরু বলেন, অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হলে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তারেক রহমান সাহেবের স্বপ্ন, বাংলাদেশকে আবার বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না থাকলে বাকি কিছু হবে না। আপনার নিরাপত্তাও শক্তিশালী হবে না, আপনার সমাজ শক্তিশালী হবে না, আপনার রাজনৈতিক অবস্থানও শক্তিশালী হবে না। সুতরাং অর্থনীতি হচ্ছে সবকিছুর মূলে।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে শুরুর দিকে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হবে সেসবের ফিরিস্তিও তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা প্রথম ১৮০ দিনের প্রোগ্রাম দেব, ১০০ দিনের প্রোগ্রাম দেব। আপনারা জানেন, আমরা ১৮ মাসে ১ কোটি লোকের চাকরির ওয়াদা করেছি। এটা কিন্তু অনেক বড় টার্গেট। কিন্তু আমরা টার্গেটটা দিয়ে বসে নাই, এই টার্গেট পূরণ করার জন্য কোথায় কোথায় চাকরি হবে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জিডিপির ৫ শতাংশ করে স্বাস্থ্য খাতে, শিক্ষা খাতে আমরা ব্যয় করব। এত বড় সাহস নিয়ে কেউ কোনোদিন প্রোগ্রাম করেনি।’

মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেএমই) সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক। এ ছাড়া সভায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বক্তব্য দেন। পরে তাঁদের বক্তব্যের আলোকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমাপনী বক্তব্য দেন।

সভায় সিলেট বিভাগের চার জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র ব এনপ র স র জন ত ক অবস থ ন সরক র র ব যবস ক র জন য র পর ব পর ব শ স গঠন আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ