মেজবান, চুই গোস্ত, ব্যাম্বু চিকেন ঢাকাতেই পাবেন
Published: 29th, June 2025 GMT
ঢাকায় খাদ্য-বাণিজ্যের অনেকটাই এখন ফাস্ট ফুড বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে। রমরমা ব্যবসা। পাড়ার মোড় থেকে কানাগলি, এমনকি বড় রাস্তার মোড়—সবখানেই সহজপ্রাপ্য বার্গার, সসেজ, হটডগ, স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। গত দুই দশকে মূলত ইন্টারনেটের কল্যাণে আর জেন-জিদের মজে যাওয়ায় ঢাকার অলিগলিতে ফাস্ট ফুডের এত ছড়াছড়ি। ফাস্ট ফুড ঢাকার খাদ্যসংস্কৃতির খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে।
তবে এর মধ্যেও রয়েছে ব্যতিক্রম। একদল স্বপ্নসারথি ঢাকায় দেশের বৈচিত্র্যময় খাদ্যসম্ভারকে ধরে রেখেছেন। কেউ বিক্রি করছেন খুলনার চুইঝাল, কেউ চট্টগ্রামের মেজবানের মাংস, রাজশাহীর কলাই রুটিও বিক্রি হচ্ছে এই ঢাকাতেই। পার্বত্য এলাকার বৈচিত্র্যময় খাদ্যসম্ভার নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশেষায়িত ‘ফুড হাভ’। তাই ঢাকায় বসে ছুটির দিনে দেশের বৈচিত্র্যময় খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন।
ফুড হাভ: কাজীপাড়ামিরপুরের কাজীপাড়া একটি ঘিঞ্জি এলাকা। পানীয় জলের সমস্যা প্রকট এখানে। রয়েছে মশার উৎপাত। কিন্তু কাজীপাড়ার আরেকটি পরিচয় আছে। সেটি হচ্ছে, কাজীপাড়ায় দেশের প্রায় সব অঞ্চলের সবজি ও মাছ টাটকা পাওয়া যায়। আপনার যদি প্রাতর্ভ্রমণের অভ্যাস থাকে, তাহলে ফ্রিজে রাখা ছাড়াই প্রতিদিনের সবজি প্রতিদিনের পাতে পাবেন মধ্য ঢাকার এই পাড়ায়।
মানিকগঞ্জের লাউ থেকে মুন্সিগঞ্জের আলু, লালমনিরহাটের সাপ্টিবাড়ির বেগুন থেকে শেরপুরের দই—সবই পাওয়া যায় কাজীপাড়ায়। আর পাহাড়ি অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সবজিসম্ভার—হলুদ ফুল, শিমের বিচি, রোজেলাপাতা, শিমুলের শুঁটকি, মুলা শুঁটকি, শুস মরিচ, মাশরুম প্রতিদিনই মিলছে ঘিঞ্জি পাড়াটির অলিগলিতে।
পাহাড়ি সবজিকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে একাধিক পাহাড়ি ক্যাফে-রেস্তোরাঁ। রোজ সন্ধ্যায় পাড়ার মোড়ে গরম-গরম বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ি মুংডি (একধরনের নুডলস)।
সিএইচটি আট পদের এই প্লাটার খেতে পারবেন পাঁচজন। খরচ পড়বে ২,২৩০ টাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব চ ত র যময়
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)