সংস্কারকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা নিয়ে ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে কিছু কিছু ক্রেতা রপ্তানি আদেশ বাতিলেরও হুমকি দিয়েছেন। এমনিতেই ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বড় হুমকির মুখে আছে। এ অবস্থায় এনবিআর সংস্কার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ করার সিদ্ধান্তটি অন্তর্বর্তী সরকারের সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ, সেটা বলতেই হবে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ক্ষেত্রে বাস্তবিক কিছু সমস্যা থাকতে পারে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে যে অচলাবস্থা চলছে, সেটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আন্দোলনের কারণে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে ইতিমধ্যে নাজুক অবস্থায় থাকা আমাদের অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বে সবচেয়ে তলানিতে থাকা দেশগুলোর একটি। এ অবস্থায় করব্যবস্থা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছিলেন। কিন্তু ১২ মে এনবিআর ও আইআরডি বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারির পর কিছু ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ। এসব দাবিতে তাঁরা কলমবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার খরচও বেড়ে গেছে।

পরিস্থিতি যখন এমন নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে, তখন আমরা দেখছি, এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শনিবার থেকে ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেছেন। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনবিআর ঘিরে রেখেছে। এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তে আন্দোলনকারীরা প্রায় একমত হলেও মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার নয়, রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

ধারণা করা হয়েছিল, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি অংশ এনবিআর সংস্কারের পক্ষে সমর্থন না-ও দিতে পারে। কেননা বিদ্যমান করব্যবস্থার ফাঁকফোকর থেকে তাঁদের অনেকেই নানাভাবে সুবিধা পান। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় ১৩টি সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা একটি দক্ষ ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থাটি সংস্কারের পক্ষে জোরালো সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারী—মূল দুই অংশীজন যেখানে রাজস্ব বোর্ড সংস্কারের ব্যাপারে একমত, সেখানে দেড় মাস ধরে কীভাবে এমন অচলাবস্থা চলতে পারে।

এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে কলমবিরতি ও শাটডাউনের মতো কঠোর কর্মসূচিকে তাঁদের দাবি আদায়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেটা কোনো বিবেচনাতেই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, যেসব বিষয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা সম্ভব। সংস্কারের মূল প্রশ্নে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁদের যেখানে বিরোধ নেই, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যায় এবং অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, এমন কর্মসূচি কেন?

অচলাবস্থা নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী মঙ্গলবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় যত দ্রুত আলোচনায় বসা যায়, ততই মঙ্গল। ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও নাগরিকদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে এনবিআরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটা নিরসন করা প্রয়োজন। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ব যবস থ অবস থ য়

এছাড়াও পড়ুন:

যে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না

মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তখন আল্লাহ হয় তার দোয়া কবুল করেন, নয়তো তার পথে আসা কোনো বিপদ দূর করে দেন।

ছয় ধরনের মানুষ আছে, যাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে যদি কেউ ইসলামে অগ্রহণযোগ্য বা ইসলামের নিয়মবিরোধী কিছুর জন্য দোয়া করে, তবে তা কোনোভাবেই কবুল হয় না।

১. রোগীর দোয়া

রোগাক্রান্ত ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষ গ্রহণযোগ্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো রোগীর কাছে যাও বা তাকে দেখতে যাও, তখন তাকে বলো যেন সে তোমার জন্য দোয়া করে। কারণ, তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৯৮)

অনেক আলেম জোর দিয়ে বলেন, দোয়ার জন্য অজু করা জরুরি নয়; বরং হৃদয়ের পবিত্রতা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।২. রোজাদারের দোয়া

রোজাদারের দোয়া অত্যন্ত কার্যকর। অনেক আলেম রোজার সময়কে দোয়ার জন্য ‘সোনালি মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন। নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের দোয়া ইফতারের সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৭৫৩)

আরও পড়ুনসন্তানকে বদ দোয়া করবেন না২১ এপ্রিল ২০২৫৩. পিতার দোয়া

সাধারণত মায়েরা সন্তানের জন্য দোয়া করেন, কিন্তু বাবার দোয়া বিরল এবং তা অত্যন্ত কার্যকর। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনজনের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়—মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও পিতার সন্তানের জন্য দোয়া।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৯০৫)

৪. অনুপস্থিতিত ব্যক্তির জন্য দোয়া

যে ব্যক্তি অন্যের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে, তার দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলে, ‘আমিন, তোমার জন্যও তাই হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৩২)

মজলুমের দোয়া থেকে সাবধান হও। কারণ, তার ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা নেই।সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৪৪৮৫. মজলুম ব্যক্তির দোয়া

যিনি অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার দোয়া আল্লাহ সরাসরি কবুল করেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মজলুমের দোয়া থেকে সাবধান হও। কারণ, তার ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৪৪৮)

৬. মুসাফিরের দোয়া

ভ্রমণকারীর দোয়া আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—সন্তানের জন্য পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১,৫৩৬)

দোয়া কবুলের কিছু সময়

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি সময়ের কথাও হাদিসে বর্ণিত আছে। যেমন রাতের শেষ প্রহর বা ফজরের আগে, আজানের পর বা আজানের মধ্যবর্তী সময়ে, জমজমের পানি পান করার সময় এবং জুমার দিনে, বিশেষ করে আসরের পর থেকে মাগরিবের আগপর্যন্ত।

অনেক আলেম জোর দিয়ে বলেন, দোয়ার জন্য অজু করা জরুরি নয়; বরং হৃদয়ের পবিত্রতা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

আরও পড়ুনদোয়া কীভাবে করতে হয়২০ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্তমানে বড় কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া সম্ভব নয়: ওয়াহিদ উদ্দিন
  • যে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না