ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, এখন যাকে মেটাবলিক ডিসফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্টেটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD) বলা হচ্ছে, তা বড়দেরই রোগ আজকাল এটি বেশ পরিচিত। কিন্তু এ রোগ কেবল বড়দের নয়, ইদানীং শিশুরাও যে এর শিকার হচ্ছে, তা অনেক তথ্য-উপাত্তে উঠে এসেছে। এই রোগে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। এই অবস্থা শিশুর পুষ্টি, শারীরিক কার্যকলাপ এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে
১.
২. বেশি মাত্রায় চর্বি যদি লিভারে জমে (৩০% পর্যন্ত), তবে সঠিক চিকিৎসা না পেলে ফাইব্রোসিস ও সিরোসিসের মতো গুরুতর লিভারের ক্ষতি, এমনকি লিভারের ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
শিশুদের মধ্যে এ সমস্যার বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান দৈহিক স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধি এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস বৃদ্ধির সমান্তরাল। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
অপুষ্টি বা মন্দ পুষ্টি: প্রচুর শর্করাজাতীয় খাদ্য গ্রহণ, চিনিযুক্ত পানীয়, জাঙ্ক ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া।
শারীরিক শ্রমহীন জীবনযাপন: বসে থাকা আচরণ এবং ন্যূনতম শারীরিক নড়াচড়া।
জেনেটিকস: লিভারের রোগ বা বিপাকীয় ব্যাধির পারিবারিক ইতিহাস ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
লক্ষণ
প্রায়ই ‘নীরব’ অবস্থা হিসেবে পরিচিত এ সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান লক্ষণ না-ও দেখা দিতে পারে। যখন লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তখন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে—
ক্লান্তি, পেটের ওপরের ডান দিকে একটি মৃদু ব্যথা বা অস্বস্তি। আরও পরে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে— ত্বক বা চোখের হলুদ বর্ণ (জন্ডিস), পেট ফুলে যাওয়া।
বাবা-মায়েরা কীভাবে ভূমিকা রাখবেন?
শিশুদের ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে রক্ষা করতে বাবা-মায়েরা যা করতে পারেন তা হলো—
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস করুন: ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিনযুক্ত খাবার সরবরাহ করুন। চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিন।
শারীরিক কার্যকলাপকে উৎসাহিত করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার ব্যায়াম বা নড়াচড়া করে আপনার শিশুকে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করুন। স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন এবং উপভোগ্য কার্যকলাপ খুঁজুন।
পরিমিত ঘুম: শিশুকে প্রতি রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস তৈরিতে উৎসাহিত করুন।
স্বাস্থ্যকর ওজন: আপনার সন্তানের ওজন এবং বৃদ্ধির ধরন পর্যবেক্ষণ করতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যদি আপনার সন্তানের ওজন বেশি হয় বা লিভারের রোগ বা ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শনের সময়সূচি নির্ধারণ করুন। চিকিৎসকেরা লিভারের কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য রক্ত পরীক্ষা বা ইমেজিংয়ের পরামর্শ দিতে পারেন।
ডা. শাহজাদা সেলিম: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)