সারা বিশ্বে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে নানা মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের নির্ভুল সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অনেকেই। সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্প হলেও এবার ভূমিকম্পের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আল্পস পবর্তমালায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্প বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পসের এলাকায় ছোটখাটো ভূমিকম্পের প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূকম্পের মতো কার্যকলাপের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। গলে যাওয়া বরফপানি ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইনে প্রবেশ করতে পারে। এতে কম্পনের ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুনগুগলের পাঠানো ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা কতটা নির্ভরযোগ্য১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিজ্ঞানীরা মন্ট ব্ল্যাংক পর্বতমালার হিমবাহ-আচ্ছাদিত শিখর গ্র্যান্ডেস জোরাসেসের নিচে ভূমিকম্পের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তাপপ্রবাহের পর ছোট ছোট ভূমিকম্পের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কম্পনের কারণে হিমবাহের গলিত পানি গভীর শিলাস্তরে প্রবেশ করে। হিমবাহের পানির কারণে ভূতাত্ত্বিক ত্রুটি বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঘন ঘন ও শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। প্রায়ই এক থেকে দুই বছরের বিরতিতে ভূমিকম্প দেখা যায়। বরফগলা পানি ধীরে ধীরে ফল্ট লাইন বরাবর চাপ তৈরি করে একটি ট্রিগার পয়েন্টে পৌঁছালে ভূমিকম্প হয়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে চাপযুক্ত পানি ভূমিকম্পের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। শুধু আল্পস পর্বতমালায় নয়, বরং হিমালয়ের মতো অন্যান্য হিমবাহযুক্ত অঞ্চলেও এমন প্রবণতা বাড়ছে। এসব ভূমিকম্পের কারণে মন্ট ব্ল্যাংক টানেলের মতো অবকাঠামো বড় হুমকিতে না পড়লেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র হ মব হ

এছাড়াও পড়ুন:

একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার দিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা

নির্বাহী বিভাগের গুরুত্ব বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান কাজ ও জটিল পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কার্যকর নেতৃত্ব দেওয়া এখন নির্বাহীর অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু একই সঙ্গে এই বাড়তি নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা বলেন, নির্বাহী ও আইন পরিষদের মধ্যে সম্পর্কই সরকারের মূল সংযোগ। এই সম্পর্ক জাতীয় রাজনীতির চরিত্র, প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাহীর প্রভাব রাজনৈতিক কাঠামো, গণতন্ত্রের ধরন ও জরুরি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে।

ওয়েস্টমিস্টার পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই কেন্দ্রীয় চরিত্র। যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরা প্রায় একই রকম ক্ষমতা ভোগ করেন, যদিও ক্ষমতা প্রয়োগের ধরনে পার্থক্য আছে। অনেক সময় সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এই বাড়তি ক্ষমতা শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা গেলেও সেটি গণতন্ত্রের ভারসাম্য ও জবাবদিহির জন্য হুমকি হতে পারে।

কে এম মহিউদ্দিন তাঁর বইটিতে সংসদীয় শাসনে প্রধান নির্বাহীর ক্ষমতা কীভাবে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, মন্ত্রিসভার সম্মিলিত দায়বদ্ধতা কীভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ছে এবং এতে গণতন্ত্রের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির শুরুতেই লেখক আলোচ্য বিষয়ের পরিসর ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর তিনি ১১টি অধ্যায়ে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরেছেন: প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র আধিপত্য বনাম মন্ত্রিপরিষদের সম্মিলিত নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রীর দায়বদ্ধতা ও ক্ষমতার পরিধি, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, প্রধান নির্বাহীর কার্যালয়ের ভূমিকা, সাংবিধানিক কাঠামোতে জবাবদিহি, নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে দায়বদ্ধতা এবং শেষ অধ্যায়ে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন হিসেবে হাইব্রিড গণতন্ত্রের মধ্যে একনায়কতন্ত্রের উত্থান।

লেখকের মূল যুক্তি হচ্ছে যদিও সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়, বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীই হয়ে উঠেছেন সর্বত্র ক্ষমতাধর। ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের যৌথ নেতৃত্ব ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং একক নির্বাহী ক্ষমতা বাড়ছে।

বইয়ের আকর্ষণীয় অংশ হলো এই ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের পেছনে কাঠামোগত উপাদানগুলোর বিশ্লেষণ—যেমন দলীয় রাজনীতির ধরন, নেতৃত্বপূজা, নির্বাচনী কৌশল, পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে ক্ষমতার ব্যবহার, বিরোধী পক্ষকে দুর্বল করা, জবাবদিহির অভাব ও কর্তৃত্ববাদী মনোভাব। এসব উপাদানের ভিত্তিতে লেখক দেখিয়েছেন—সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যেই কীভাবে এক ‘রাষ্ট্রপতি-ধাঁচের’ প্রধানমন্ত্রী তৈরি হয়েছে।

তবে বইটি সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। লেখকের বিশ্লেষণ যতই গভীর হোক, কিছু ক্ষেত্রে তা পূর্বনির্ধারিত বা ‘ডিটারমিনিস্টিক’ বলে মনে হতে পারে। অনেক জায়গায় প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংসদীয় কাঠামোর অন্যান্য ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যবস্থাগুলোর বিশ্লেষণ কিছুটা উপেক্ষিত হয়েছে।

তবু বইটিকে সমসাময়িক সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ, চিন্তাশীল ও তথ্যসমৃদ্ধ পর্যালোচনা বলা যায়। এটি একদিকে যেমন একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার প্রতি সতর্ক করে, তেমনি গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির প্রতি নতুন করে প্রতিশ্রুতি তৈরির আহ্বান জানায়।

বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই বই গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে। সংসদীয় কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন পক্ষের পর্যালোচনা ও মতামতের আলোচনায় এই গ্রন্থ চিন্তার খোরাক জোগায়। তাই নীতিনির্ধারক, গবেষক, সচেতন নাগরিক এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রচর্চার শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। লেখকের অন্তর্দৃষ্টি ও বিস্তারিত গবেষণা ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সরকার: গণতন্ত্রের ভেতরেই একনায়কতন্ত্রের উত্থান

কে এম মহিউদ্দিন 

প্রকাশক: কথাপ্রকাশ 

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

মূল্য: ৭০০; পৃষ্ঠা: ৩২৮ 

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার দিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা
  • নেশামুক্ত তারুণ্যই হোক দেশের শক্তি