জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পস পর্বতমালায় বাড়ছে ভূমিকম্প
Published: 29th, June 2025 GMT
সারা বিশ্বে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে নানা মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের নির্ভুল সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অনেকেই। সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্প হলেও এবার ভূমিকম্পের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সংযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আল্পস পবর্তমালায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমবাহ গলে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ছোটখাটো ভূমিকম্প বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আল্পসের এলাকায় ছোটখাটো ভূমিকম্পের প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূকম্পের মতো কার্যকলাপের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে দ্রুত হিমবাহ গলে যাচ্ছে। গলে যাওয়া বরফপানি ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইনে প্রবেশ করতে পারে। এতে কম্পনের ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুনগুগলের পাঠানো ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা কতটা নির্ভরযোগ্য১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিজ্ঞানীরা মন্ট ব্ল্যাংক পর্বতমালার হিমবাহ-আচ্ছাদিত শিখর গ্র্যান্ডেস জোরাসেসের নিচে ভূমিকম্পের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তাপপ্রবাহের পর ছোট ছোট ভূমিকম্পের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কম্পনের কারণে হিমবাহের গলিত পানি গভীর শিলাস্তরে প্রবেশ করে। হিমবাহের পানির কারণে ভূতাত্ত্বিক ত্রুটি বেশি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঘন ঘন ও শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। প্রায়ই এক থেকে দুই বছরের বিরতিতে ভূমিকম্প দেখা যায়। বরফগলা পানি ধীরে ধীরে ফল্ট লাইন বরাবর চাপ তৈরি করে একটি ট্রিগার পয়েন্টে পৌঁছালে ভূমিকম্প হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে চাপযুক্ত পানি ভূমিকম্পের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। শুধু আল্পস পর্বতমালায় নয়, বরং হিমালয়ের মতো অন্যান্য হিমবাহযুক্ত অঞ্চলেও এমন প্রবণতা বাড়ছে। এসব ভূমিকম্পের কারণে মন্ট ব্ল্যাংক টানেলের মতো অবকাঠামো বড় হুমকিতে না পড়লেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র হ মব হ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রবাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহনন প্রবণতা
দেশের বাজারে চাকরির সংকট কিংবা কম বেতন অথবা কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রবাসী হচ্ছে। মূলত অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং জীবনমান উন্নয়নের আশায় পাড়ি জমায় দূর প্রবাসে।
২০২৪–এর একটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখের বেশি, এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেই আছে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে চলছে দেশের অর্থনীতি। তবে দুঃখের বিষয় বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দুঃখের বাস্তব চিত্র কোথাও তুলে ধরা হয় না।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কখনোই অকারণে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় না, দেশের কেউ আত্মহত্যা করলে সেটার কারণ হয়তো পরিবার কিংবা আশপাশের মানুষ কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তবে প্রবাসে এই চিত্র ভিন্ন, এখানে নিজের খবর নিজেরই রাখার সময় হয় না। ফলে দেখা যায়, একই রুমে থেকেও রুমমেট কী কারণে আত্মহত্যা করছে, সেটি টেরও পাওয়া যায় না।
আমি নিজে একজন প্রবাসী হিসেবে প্রবাসে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে কয়েকটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।
বৈবাহিক জীবনে অশান্তিপ্রবাসে যেসব পুরুষ আত্মহত্যা করেন তাঁদের বেশির ভাগ বিবাহিত। স্ত্রীকে দেশে রেখে অনেক প্রবাসী শ্রমিক বছরের পর বছর প্রবাসে থেকে যান। অনেক সময় ভিসা, আকামা না থাকায় কয়েক বছরেও যাওয়া হয় না দেশে, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে বৈবাহিক জীবনে। ফলে সম্পর্কে দেখা দেয় ভাঙন। এখানে পারিবারিক অশান্তি, পরকিয়াসহ বিবিধ কারণ যুক্ত। এসব কারণে অনেক প্রবাসী আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেন।
ঋণ শোধ করার চাপঅনেক প্রবাসী চক্রবৃদ্ধি সুদে অথবা উচ্চ সুদে লোন করে এখানে আসেন, তিনি সেই লোনের টাকা শোধ করতে পারেন না, পাওনাদার পরিবারকে নানা রকম চাপ দেয়। এরপর সেই চাপটা আবার ওই প্রবাসীর ওপরই ফিরে আসছে। এ চাপটা নিতে না পেরেই অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।
নারী কর্মীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকাদেশে থাকা দালাল নানা রকম চটকদার কথা বললেও বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিকদের জীবন এক বিভীষিকাময় জেল বললেই চলে। বিশেষত যাঁরা বাসাবাড়িতে কাজের ভিসায় আসেন, তাঁদের বেশির ভাগই নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়েন। কাজের কোনো নির্ধারিত সময় কিংবা ধরন কোনো কিছুরই ঠিক থাকে না। এরপরও অনেকের বেতন দেয় না ঠিকমতো। আবার নারী কর্মীদের কুকাজের প্রস্তাব করেন এমন সংখ্যাও কম না। এ ছাড়া শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের স্বীকারও হতে হয় অনেককে। এর বাইরেও দালালেরা নানা কাজের কথা বলে এখানে এনে দেহ ব্যবসার মতো কাজেও নারীদের কাজ করতে বাধ্য করে। এসব চতুর্মুখী সমস্যা মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে যায়, ফলে অনেকে নিয়ে নেন আত্মহননের সিদ্ধান্ত।
প্রবাসে আত্মহনন বন্ধে সরকারকে হতে হবে প্রবাসীবান্ধব। সরকার চাইলে চালু করতে পারে প্রবাসী সহায়তা অ্যাপস, যেখানে প্রবাসীরা যেকোনো সমস্যা হলে সেটি মোবাইলের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে যাঁরা অভিবাসনপ্রত্যাশী তাঁদের যেকোনো একটি কাজে দক্ষ করে সেই কাজের ভিসায় অনুমতি দেওয়া এবং প্রবাসযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা। প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদেরও খেয়াল রাখতে হবে প্রবাসীর মানসিক ব্যাপারে।
প্রবাসে আত্মহত্যা করা অনেক প্রবাসীর পরিবার মনে করে তাদের স্বজন হত্যার শিকার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা লাশের শরীরে বিভিন্ন রকম জখমের দাগকে উদাহরণ হিসেবে দেখায়। আত্মহত্যাকে হত্যা দাবি করা লাশের অধিকাংশই থাকেন প্রবাসে গৃহপরিচারিকার কাজে। এসব ক্ষেত্রে উচিত দেশে লাশ এলে সেটি আবার পোস্টমর্টেম করা। প্রবাসী বাঁচলে বাড়বে রেমিট্যান্স, রেমিট্যান্স বাড়লে এগোবে দেশ।
মিনহাজ বিন মাহবুব
কাতারের দোহায় কর্মরত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা
ই–মেইল: [email protected]