একটি গোষ্ঠী নির্বাচন পিছিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে: মির্জা আব্বাস
Published: 29th, June 2025 GMT
আনুপাতিক হারে ভোট এবং আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যারা দাবি তুলছে তারা এই দেশ-জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে।
রোববার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউশনে ‘রমনা থানা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একেকজন একেকটা দাবি তুলে নির্বাচনকে পিছিয়ে, নির্বাচনের অবস্থা সর্বনাশ করে দিয়ে এ জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। বড় বড় সমাবেশ করে জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবেন না। সমাবেশ দিয়ে যদি প্রমাণ করা যায় কে কত জনপ্রিয়, আমরা সারা বাংলাদেশকে একদিনে সমাবেশের আওতায় আনতে পারি। সারা বাংলাদেশ একদিনে সমাবেশ করবে। কেউ কোনো জায়গা ছাড়বে না। এটা তো সিস্টেম হলো না। সবাইকে অনুরোধ জানাব, আউল-ফাউল কথাবার্তা বইলেন না কেউ। আপনারা এই সমস্ত কথাবার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীমকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যখন বিএনপি-জামায়াতের ওপরে স্টিমরোলার চালানো হচ্ছিল, তখন ওই দলটি এবং তার নেতা দূরে থেকে বাহবা দিয়েছেন। কৌশলে হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছেন। কালো নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, দিনের নির্বাচন; তিনবার নির্বাচন হয়েছে, উনারা কোনো প্রতিবাদ করেন নাই। এখন লম্বা কথা বলতেছেন, আগে দিতে হবে স্থানীয় নির্বাচন, এরপর দিতে হবে পিআর সিস্টেম (আনুপাতিক পদ্ধতি)।’
পিআর পদ্ধতি কই থেকে আসে প্রশ্ন করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশটাকে সুন্দর করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু করেন। শুধু আপনার কথামতোই হতে হবে, স্থানীয় সরকার আগে হতে হবে, আবার পিআর ভোট করতে হবে। কই থেকে আবিষ্কার করেন এগুলা? কে দেয় বুদ্ধি আপনাদের? এসব কুপরামর্শ নিয়ে, এই দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য একদল লোক আজ মাঠে নেমেছে।’
সম্প্রতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের একা লড়াইয়ের উদাহরণ টেনে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের মুসলিম বিশ্বের কেউ যখন তাকে সমর্থন দিল না, ইরান একাই যুদ্ধ করে গেল। কারণ জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। আর আমার দেশের মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, কিছু রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় যেতে দেব না, এই করে করে দেশটাকে গত ৫০ বছরে এগোতে দিল না। দেশটাকে আমরা ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছি।’
দেশকে ভালোবেসে সবাইকে এক জায়গায় আসার আহ্বান জানান মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসেন, একটা জায়গায় আসেন। যে জায়গায় গেলে পরে দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতি হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিতে হবে বহুমাত্রিক কৌশল
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নগরমুখী স্রোত থামাতে উপকূলে উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। নগরে আশ্রয় নেওয়া জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সাশ্রয়ী পুনর্বাসন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা দিতে নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে প্রয়োজন একটি বহুমাত্রিক কৌশল।
গতকাল জার্মান কো–অপারেশন ও কারিতাস জার্মানির সহযোগিতায় কারিতাস বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নগরমুখী জলবায়ু উদ্বাস্তু: সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ত্রাণ কর্মসূচি) সেখ ফরিদ আহমদ বলেন, সরকার চায় তার প্রত্যেকটা নাগরিক তার যে অধিকার, সেটা পাক। নগর অভিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে নীতিকৌশল গ্রহণ করতে হবে। এটা করতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্তের প্রয়োজন বলে অভিমত দেন তিনি।
সেখ ফরিদ বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁদের বিভিন্ন সেবায় প্রবেশগম্যতা নেই। তাঁরা এ দেশের মানুষ। এসব সেবা পাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে।
বহুমাত্রিক কৌশল ও সমন্বিত নীতি গ্রহণের সময় সেখ ফরিদ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশ নিয়ে ভাবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেখ ফরিদ বলেন, যে যে জায়গা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছেন, সে জায়গার নিকটবর্তী কোনো স্থানে তাঁকে যদি পুনর্বাসন করা যায়, তাহলে তাঁর আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মানের সঙ্গে তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন।
জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক সংস্থা ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সরকার মনে করে, শহরে যদি আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালী করি, তাহলে নগরমুখী স্রোত বেড়ে যাবে। গ্রামে যেমন কর্মসংস্থান করতে হবে, তেমনি শহরে এসে যারা জীবন–জীবিকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে পথ বের করতে হবে।’
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে নারী ও শিশুদের। বাস্তুচ্যুতি ঘটলে তাঁদের এ সংকট আরও গভীর হয়।
যাঁরা উদ্বাস্তু হন না, তাঁদের প্রজননস্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগতে হয়। লবণাক্ততা এড়াতে মাসিক ঋতুচক্র বিলম্বিত করতে উপকূলের নারীরা জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন জানিয়ে কবিতা বোস বলেন, উদ্বাস্তু হওয়া ঠেকাতে গ্রামে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে থেকে যদি টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মানুষ আর নগরমুখী হবেন না।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি ডিরেক্টর শেহনাজ ওজমাদার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেহনাজ ওজদামার বলেন, লিগ্যাল ডকুমেন্ট (জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ) না থাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সেবা পেতে বিঘ্ন ঘটছে। এতে তাঁদের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। তিনি তুরস্কের ভূমিকম্পে জাতীয় তথ্যভান্ডার দুর্যোগ–পীড়িত ব্যক্তিদের সহায়তায় কীভাবে কাজে লেগেছে, সে অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইসমাঈল হোসেন।
প্রবন্ধে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, বিশ্বে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। একজন মানুষ যখন তাঁর বসতভিটা হারিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেন, তখন তাঁর মানসিক অভিঘাত হয় গভীর। এর বাইরে তাঁদের প্রথম সংকট হয় আবাসনসংকট। এরপর থাকে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের সংকট। এগুলো অবৈধভাবে ব্যবস্থা করে নিতে হয় তাঁদের।
বাস্তুচ্যুতি হলে নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধন—এগুলো সংগ্রহ করা যায় না জানিয়ে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, এসব কাগজপত্র না থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। তিনি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য এসব আইনি কাগজপত্র পেতে প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুন নাহার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এর চ্যালেঞ্জগুলো বহুমাত্রিক। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংকট মোকাবিলায় একটা সমন্বিত ও টেকসই কর্মপন্থার ওপর জোর দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার জাতীয় প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সৈয়দ শাহরিয়ার শাবাব বলেন, জীবিকার সংকট বাস্তুচ্যুতির পেছনে একটা বড় সংকট। তাই উপকূলে টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে, তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জন্য একটা বহুমাত্রিক কৌশল নিতে হবে।’
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (অপারেশনস) চন্দন গোমেজ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, জলবায়ু নীতির মধ্যে যে ফারাক আছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমন্বিত ও সামষ্টিকভাবে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (রামরু) সদস্য ড. রাশেদ আলম ভূইয়া বলেন, গ্রাম ও নগর—এ দুই জায়গাতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্সের পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত কাকে বলব, সেটার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং সেভাবে সাপোর্ট সিস্টেম প্রস্তুত করতে হবে।’
কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান আলেক্সান্ডার ত্রিপুরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে জরুরি সেবা প্রদানে তহবিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কারিতাসের কর্মসূচি পরিচালক দাউদ জীবন দাস বলেন, প্রতিদিন দুই হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু ঢাকা নগরীতে যোগ হচ্ছেন, বছরে যা সাত লাখ।
কারিতাস বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার (অ্যাডভোকেসি) জামিল আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ করার পরামর্শ দেন।
গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।