জুলাই স্মৃতি উদযাপনে মেলার অনুমতি চেয়ে ডিসির কক্ষে অবস্থান
Published: 30th, June 2025 GMT
জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই স্মৃতি উদযাপন কমিটির ব্যানারে মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও বিভিন্ন দোকান বসানোর অনুমতি দিতে খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কক্ষে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনপিপির নেতাকর্মীরা।
রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে ছিলেন তারা। পরে সচিব বরাবর আবেদনের কথা জানিয়ে তারা কক্ষ ত্যাগ করেন।
নগরীর শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে জুলাইকেন্দ্রিক অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের ফাঁকা জায়গায় জুলাই মঞ্চ, জুলাই কর্নার, প্রদর্শনী, এলইডি স্কিনে প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে বই, দেশীয় কুটির শিল্প, সংস্কৃতি ও খাবারের স্টল দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন মূল আয়োজকরা।
দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীরা খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। জেলা প্রশাসক তাদের মেলার আয়োজন করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন। এ সময় ছাত্রনেতারা জুলাই নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসককে ফ্যাসিস্টের দোসর এবং অনুমতি না দিলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে পড়েন। সেখানেই বসে তারা অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র লেখেন। পর্যায়ক্রমে সেখানে উপস্থিত হন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ওয়াহিদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব ও এনপিপির সংগঠক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর, কদরুল হাসান, রুমি রহমান, সানজিদা আঁখিসহ অনেকে। কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা।
বিকেল ৪টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জুলাই নিয়ে আমরাও খুলনায় মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছি। কর্মসূচিতে জুলাই স্মৃতি প্রদর্শনী ও দেশীয় স্টল থাকবে। মেলা শব্দটি সবাই নেতিবাচক হিসেবে নেয়। জেলা প্রশাসকের মেলা বসানোর শব্দটি কটূক্তির মতো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি একা একা মেলার অনুমতি দিতে পারি না। এটা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের নামে মেলার আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সংগঠকরা। সংগঠনের মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, আগে ৭১ ও বিজয় দিবসের নামে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলা হয়েছে, এখন মেলা হচ্ছে জুলাই স্মৃতির নামে। এই আয়োজন আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাসজুড়ে আলোচনা সভা, দোয়া, শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়, জুলাই ক্যালেন্ডার বিতরণ, শহর পরিষ্কার, পথনাটকসহ মোড়ে মোড়ে প্রদর্শনীর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আলোচনা না করেই যারা মেলার আয়োজন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য জুলাই স্মৃতি রক্ষা নয়, অন্য কিছু।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রেলওয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের দাম বাড়িয়েছে, কী প্রভাব পড়বে ইন্টারনেটের দামে
বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের ফাইবার অপটিক কেব্ল ইজারা দেওয়ার জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে। তবে এবার আগের তুলনায় প্রতি কোরের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এতে আপত্তি জানিয়েছে অপারেটররা।
১৬ জুন রেলওয়ে এই দরপত্র আহ্বান করে। এতে প্রতি কোর ফাইবারের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগে ছিল ৩ টাকা ৮ পয়সা। অপারেটররা সাধারণত জোড়া কোর ফাইবার ইজারা নেয়। সে হিসাবে জোড়া ফাইবারের ভিত্তিমূল্য দাঁড়াচ্ছে ৯ টাকা, যা আগের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (টেলিকম) সুশীল কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ফাইবারের মান অনুযায়ী দামের সমন্বয় করা হয়েছে।
রেলওয়ের ৩ হাজার ২০৫ কিলোমিটার ফাইবার কেব্ল রয়েছে, যা মোবাইল অপারেটর ছাড়াও অন্যান্য এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) অপারেটরাও ইজারা নিয়ে গ্রাহকদের সেবা দেয়। প্রতি পাঁচ বছর পরপর রেলওয়ে তাদের এই ইজারা নবায়ন করে।
অপারেটরদের অভিযোগ, রেলওয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে অনুমোদন নেয়নি। বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী, এনটিটিএন সেবা ভাড়া বা ইজারার ক্ষেত্রে নির্ধারিত ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণ করা যায় না। বিটিআরসিতে এ বিষয়ে কোনো আবেদন জমা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে সুশীল কুমার হালদার বলেন, প্রয়োজনে তাঁরা বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে নেবেন।
অপারেটররা বলছে, একদিকে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে খরচ কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে ফাইবারের ইজারায় বাড়তি খরচ আরোপ হলে শেষমেশ তা গ্রাহকের ওপরই চাপবে।
মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবাদাতার ওপর নির্ভরশীল। সেখানে খরচ বেড়ে গেলে পুরো খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সরকার গ্রাহক পর্যায়ে সেবার দাম কমাতে চাইলেও বাস্তবে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে—এটা সাংঘর্ষিক।’ আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় অপারেটরদেরও ফাইবার স্থাপনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
অপারেটরদের ভাষ্য, রেলওয়ের অন্তত ৪০ শতাংশ ফাইবার ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একাংশের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পথে। তাঁরা আরও জানান, রেলওয়ের প্রায় ১ হাজার ৮৬৯ কিলোমিটার ফাইবার এক দশক আগে গ্রামীণফোন নিজের খরচে প্রতিস্থাপন করেছিল।
রেলওয়ের মতো ফাইবার ভাড়া দেয় আরও দুটি সরকারি সংস্থা—পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং বিটিসিএল। এর মধ্যে পিজিসিবিও সম্প্রতি ফাইবার সেবার দাম বাড়িয়েছে। ফলে রেলওয়ে ও পিজিসিবির মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
অপারেটরদের দাবি, বিভিন্ন সংস্থার ফাইবার রুট (পথ) ও স্থাপন ব্যয় ভিন্ন হওয়ায় তাদের মূল্য নির্ধারণেও পার্থক্য থাকা উচিত। তাঁরা বলেন, রেলওয়ের ফাইবারের ইজারা মূল্য প্রতিবছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়ে। এরপরও পাঁচ বছর পরপর ইজারা নবায়নের সময় বাড়ানো হলে তা ‘ব্যবসাবান্ধব’ হয় না।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে। এরপর সরবরাহব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দাম কমানোর ঘোষণা আসতে থাকে। ঘোষণাগুলো আসে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেব্ল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল অপারেটরদেরও দাম কমানোর আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) মাসে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকার প্যাকেজ করার জন্যও বলা হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদাতা লাইসেন্সধারীরা বলছেন, যেসব পর্যায়ে দাম কমানো হয়েছে, তার তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম এক কর্মশালায় বলেন, কম মূল্যে সবচেয়ে ভালো ইন্টারনেট সেবা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এটা সস্তা রাজনীতির পর্যায়ে পড়েছে। সরকার ছাড় না দিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারবে না।