জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই স্মৃতি উদযাপন কমিটির ব্যানারে মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও বিভিন্ন দোকান বসানোর অনুমতি দিতে খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কক্ষে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনপিপির নেতাকর্মীরা। 

রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে ছিলেন তারা। পরে সচিব বরাবর আবেদনের কথা জানিয়ে তারা কক্ষ ত্যাগ করেন।

নগরীর শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে জুলাইকেন্দ্রিক অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে  শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের ফাঁকা জায়গায় জুলাই মঞ্চ, জুলাই কর্নার, প্রদর্শনী, এলইডি স্কিনে প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে বই, দেশীয় কুটির শিল্প, সংস্কৃতি ও খাবারের স্টল দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন মূল আয়োজকরা।

দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীরা খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। জেলা প্রশাসক তাদের মেলার আয়োজন করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন। এ সময়  ছাত্রনেতারা জুলাই নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসককে  ফ্যাসিস্টের দোসর এবং অনুমতি না দিলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে পড়েন। সেখানেই বসে তারা অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র লেখেন। পর্যায়ক্রমে সেখানে উপস্থিত হন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ওয়াহিদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব ও এনপিপির সংগঠক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর, কদরুল হাসান, রুমি রহমান, সানজিদা আঁখিসহ অনেকে। কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা।

বিকেল ৪টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জুলাই নিয়ে আমরাও খুলনায় মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছি। কর্মসূচিতে জুলাই স্মৃতি প্রদর্শনী ও দেশীয় স্টল থাকবে। মেলা শব্দটি সবাই নেতিবাচক হিসেবে নেয়। জেলা প্রশাসকের মেলা বসানোর শব্দটি কটূক্তির মতো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি একা একা মেলার অনুমতি দিতে পারি না। এটা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের নামে মেলার আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সংগঠকরা। সংগঠনের মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, আগে ৭১ ও বিজয় দিবসের নামে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলা হয়েছে, এখন মেলা হচ্ছে জুলাই স্মৃতির নামে। এই আয়োজন আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাসজুড়ে আলোচনা সভা, দোয়া, শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়, জুলাই ক্যালেন্ডার বিতরণ, শহর পরিষ্কার, পথনাটকসহ মোড়ে মোড়ে প্রদর্শনীর  পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আলোচনা না করেই যারা মেলার আয়োজন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য জুলাই স্মৃতি রক্ষা নয়, অন্য কিছু।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম সব য প প র ঙ গণ

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ