সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিন দফা আলোচনা করেও কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ ছাড়া বেশির ভাগ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়েও এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান এই আলোচনার অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। গতকাল রোববার বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকীতে (১৬ জুলাই) সবাই মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু বাস্তবে সেটা কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ বিষয়ে আমাদের এখন খানিকটা শঙ্কাও রয়েছে।’

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এই পর্বে মৌলিক সংস্কারের ২০টির মতো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সাত দিনে আলোচনা হয়েছে ৯টি বিষয়ে। ঐকমত্য হয়েছে মাত্র দুটি বিষয়ে। আর কিছু ক্ষেত্রে আংশিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে কোনো বিষয় এখনো আলোচনার টেবিল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।

আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকীতে সবাই মিলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। কিন্তু.

..এ বিষয়ে আমাদের এখন খানিকটা শঙ্কাও রয়েছে।আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

এখন পর্যন্ত যে ৯টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা, ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল (এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত সময় প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন) এবং সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি। এর মধ্যে এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের নতুন প্রস্তাব আনা হয়।

এই ৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ৭০ অনুচ্ছেদ ও বিরোধী দলগুলোকে আসনের অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এমন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি একমত হলেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি বলেছে, সংবিধানে এনসিসি বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান রাখা হবে না, এই শর্ত পূরণ হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়টি মেনে নেবে।

এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন ইত্যাদি বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।

গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে। ফেব্রুয়ারি মাসে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়।

পরে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই ছয় কমিশনের প্রধানদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যাত্রা শুরু করে। এ কমিশন সংস্কারের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর কাছ থেকে ছক আকারে মত নেয়। এরপর ২০ মার্চ থেকে শুরু হয় দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলোচনা। এটি চলে ১৯ মে পর্যন্ত। ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার উদ্বোধন করেন।

সংশয়, শঙ্কা

গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনও মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ওপর কতটা ঐকমত্য হবে, সে ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো মৌলিক সংষ্কারের ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে, সেগুলোতে বিএনপি বা তার সঙ্গে আরও কয়েকটি দল দ্বিমত পোষণ করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনার পরও সে বিষয়টা অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে। এটা একটা আশঙ্কার জায়গা তৈরি করছে।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি নিয়ে আলোচনার পর বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, এগুলো (নিয়োগ কমিটি) নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সবাই মিলে ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।

গতকাল আলোচনার শেষ পর্যায়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ১১টা থেকে তিন ঘণ্টা আলোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের কাছে এসে আলোচনা আটকে যায়। বিকেলেও তিনটা থেকে প্রায় পাঁচটা পর্যন্ত আলোচনা করে একটা জায়গায় এসে আটকে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখতে চাই, আপনারা প্লিজ, আগে প্রস্তাবগুলো সালাহউদ্দিন ভাই বা বিএনপির কাছে দেন। ওনারা কোনটাতে কোনটাতে একমত, সেটা হাউসে (আলোচনায়) আনেন। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করি।’

এর আগে গত সপ্তাহে গণ–অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এখানে কিছু কিছু দল একবারে নিজেদের অবস্থানে অনড়। যদি এভাবে চলতে থাকে, কিয়ামত পর্যন্ত কোনো ঐক্যের সম্ভাবনা দেখি না।’

পাল্টা প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের

বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি একমত হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সকল প্রস্তাবে যদি আমাদের ১০০ শতাংশ একমত হতে বলে, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন?’

যেসব বিষয়ে দলগুলো একমত হবে, সেগুলো নিয়ে জাতীয় সনদ সই হওয়ার কথা—উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখানে যদি আমাদেরকে বাধ্য করা হয় যে এই সমস্ত বিষয়ে একমত হতেই হবে, সেটা তো সঠিক হলো না।’

নিয়োগ কমিটি ও উচ্চকক্ষ নিয়ে ঐকমত্য হয়নি

গতকাল সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি এবং সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। নিয়োগ কমিটির একটি বিস্তারিত প্রস্তাব আলোচনায় উপস্থাপন করে ঐকমত্য কমিশন। বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এতে একমত হয়নি।

অন্যদিকে সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল একমত হলেও উচ্চকক্ষের নির্বাচনপ্রক্রিয়া ও ক্ষমতা নিয়ে মতভিন্নতা দূর হয়নি। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব হলো, একটি দল নিম্নকক্ষের নির্বাচনে যত ভোট পাবে, তার অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে। জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এই প্রস্তাব সমর্থন করে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এই পদ্ধতির বিপক্ষে। তারা নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের পক্ষে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আলোচনায় বলেন, নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব খর্ব হয়, এমন বিধান সংবিধানে যোগ করা ঠিক হবে না। তিনি এ বিষয়ে অনেকবার বক্তব্য দিয়েছেন। একই বিষয়ে তিন দিন আলোচনা করতে হলে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া কী।

আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হয়, তাহলে এটি নিম্নকক্ষের ‘রেপ্লিকা’ হবে। এ মুহূর্তে নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু করার কথা তাঁরা বলছেন না। তবে উচ্চকক্ষে এই পদ্ধতি লাগবে।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, গত বছরের এই সময়ে তাঁরা এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য ও বিকেন্দ্রিকীকরণ হবে, জবাবদিহি থাকবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রধানমন্ত্রীর করায়ত্ত করা হয়, ঐকমত্য কমিশনে বসা বা এতগুলো মানুষের প্রাণ দেওয়া এসবের কোনো অর্থ থাকে না। তিনি বলেন, নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হলে সেটার কোনো মানে হয় না। আর উচ্চ কক্ষের ক্ষমতা না থাকলে সেটার প্রয়োজনীয়তা থাকে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, মৌলিক হলো সংসদের নিম্নকক্ষ। তাঁরা নিম্নকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছেন। আরও অনেক দল এই দাবি জানিয়েছে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিষয়টি না আসায় ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

আলোচনা শেষে বিকেলে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, এনসিসির পরিবর্তে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাবকে অধিকাংশ দল স্বাগত জানিয়েছে। এখনো যেসব দল একমত হয়নি, প্রস্তাবটিতে কয়েকটি সংশোধনের পর তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। কমিশন আশা করছে, পরবর্তী আলোচনায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।

অধিকাংশ দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে একমত জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে অনেকগুলো দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির কথা বলেছে। আবার কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা সম্পন্ন করে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে।’

আলী রীয়াজ জানান, ২ জুলাই পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। গতকালের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ন য় স ল হউদ দ ন ন ম নকক ষ র ন য় গ কম ট র প রস ত ব প রস ত ব র প রক র য় র সদস য ব এনপ র কম ট র আম দ র গতক ল এনস প এনস স ব ষয়ট আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে

বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।

অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।

বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী

উল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধে প্রশাসন নীতিগতভাবে একমত: ছাত্রদল
  • আইনে যা-ই থাকুক, প্রাধান্য পাবে জুলাই সনদের প্রস্তাব
  • পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে
  • নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার সুযোগ নিতে পারে পতিত ফ্যাসিস্ট
  • বাংলাদেশের ‘তরুণকম্পের’ সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
  • সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
  • সংসদে নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান