সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সে বিষয়গুলো একত্র করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘এখন এখানে যদি আমাদেরকে বাধ্য করা হয় যে এখানে একমত হতেই হবে, তাহলে সেটা তো সঠিক হলো না।’

যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলা হয়, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই আলোচনার ভিত্তিতে মতৈক্যের বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ সকালে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে হাতাশা প্রকাশ করেন। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ওই মত ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিত্বে বিরোধী দল, যেকোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সারা জীবনে ১০ বছর, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিদের গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়াসহ এমন অনেকগুলো বিষয়ে বিএনপি ঐকমত্য পোষণ করেছে। তাহলে ঐকমত্য তো হচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ প্রস্তাবে বিএনপির বক্তব্য আগের মতোই। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ব স্ব আইন ও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে বিএনপি। যাতে আরও জন–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করা যায়। সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব।

প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে চায় বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কথা বলেছি আমরা। আরও অন্যান্য কমিশন ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত আরও যদি সংস্থা থাকে, সকল বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়োগবিধি প্রণয়নের কথা বলেছি।’

বিএনপি সব ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইনসভার আওতাধীন তাদের আইনানুগ স্বাধীন কর্মকাণ্ড যাতে পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্যের পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাব করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন নির্বাচিত হবে। তবে গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এখনো একমত হতে পারিনি। কারণ, এখানে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি এখনো অনিষ্পত্তি থেকে গেছে। তবে উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য যদি আরও কোনো সুন্দর প্রস্তাব আসে, গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব আসে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা বিবেচনা করব। তবে সে রকম কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত উঠে আসেনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পিআর পদ্ধতি হচ্ছে একটি পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস, যার মধ্য দিয়ে সব সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে। এটা বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ মন্তব্য করেন, পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো স্থায়ী সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় না। কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করা সম্ভব হয় না। একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট থাকে।

আমরা পিআর মানে মনে করি, পাবলিক রিলেশনস। আমরা পিআর মানে মনে করি, জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। সেই পিআরে আমরা বিশ্বাস করি।—সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতিতে কোনো বিভাজন বিএনপি চায়নি, চায়ও না। সামনেও দলটি এ ধরনের রাজনীতি করবে না। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাইকে অংশ নিতে হবে।

আরও পড়ুনপিআর সম্পর্কে ধারণা নেই ৫৬ শতাংশের২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশের মানুষ পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি আরও বলেন, একটা জরিপে ৫৬ শতাংশ মানুষের পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জেনেছেন। আরেক জরিপে দেখেছেন, কোনো একটা দল বলছে, ৭০ শতাংশ লোক পিআর চায়। এই দুই জরিপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি ৫৬ পার্সেন্ট মানুষ পিআর পদ্ধতি না-ই বোঝে, তাহলে ৭০ পার্সেন্ট মানুষ কীভাবে পিআর পদ্ধতি চায়, সেটি আমাদের বুঝে আসে না।’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা পিআর মানে মনে করি, পাবলিক রিলেশনস। আমরা পিআর মানে মনে করি, জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে আছে। সেই পিআরে আমরা বিশ্বাস করি। যারা প্রোপোশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ মানে, পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা সফল হবে না।’

আরও পড়ুনপিআর মানে হলো ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’: সালাহউদ্দিন আহমদ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে এখন নির্বাচনী আমেজ চলছে। সব প্রার্থী, সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জনগণ জনসংযোগে আছেন। এ অবস্থায় কোনো দল যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে জনগণ তাদের চিহ্নিত করবেন। রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রত্যাখ্যান করারও সম্ভাবনা আছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করতে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে। এখানে আন্তর্জাতিক মহলও থাকতে পারে।

আরও পড়ুন‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মনোযোগ জুলাই সনদে, আছে নির্বাচনী ঐক্যের চিন্তাও
  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
  • বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
  • ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
  • ১১ দিনের নতুন কর্মসূচি ইসলামী আন্দোলনের
  • পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা