যদি শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলেন, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন: সালাহউদ্দিন
Published: 29th, June 2025 GMT
সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সে বিষয়গুলো একত্র করে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘এখন এখানে যদি আমাদেরকে বাধ্য করা হয় যে এখানে একমত হতেই হবে, তাহলে সেটা তো সঠিক হলো না।’
যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শতভাগ প্রস্তাবে একমত হতে বলা হয়, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সপ্তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন, সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই আলোচনার ভিত্তিতে মতৈক্যের বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজ সকালে আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়ে হাতাশা প্রকাশ করেন। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ওই মত ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতিত্বে বিরোধী দল, যেকোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সারা জীবনে ১০ বছর, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিদের গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়াসহ এমন অনেকগুলো বিষয়ে বিএনপি ঐকমত্য পোষণ করেছে। তাহলে ঐকমত্য তো হচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) পরিবর্তে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ প্রস্তাবে বিএনপির বক্তব্য আগের মতোই। সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ব স্ব আইন ও গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে বিএনপি। যাতে আরও জন–আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করা যায়। সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব।
প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে চায় বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কথা বলেছি আমরা। আরও অন্যান্য কমিশন ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত আরও যদি সংস্থা থাকে, সকল বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়োগবিধি প্রণয়নের কথা বলেছি।’
বিএনপি সব ক্ষেত্রে ভারসাম্যমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইনসভার আওতাধীন তাদের আইনানুগ স্বাধীন কর্মকাণ্ড যাতে পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্যের পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাব করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন নির্বাচিত হবে। তবে গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে আমরা এখনো একমত হতে পারিনি। কারণ, এখানে বিভিন্ন রকমের প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি এখনো অনিষ্পত্তি থেকে গেছে। তবে উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য যদি আরও কোনো সুন্দর প্রস্তাব আসে, গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব আসে, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা বিবেচনা করব। তবে সে রকম কোনো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত উঠে আসেনি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা-সিইসির বৈঠকের আলোচিত বিষয় স্পষ্ট করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বৈঠকে আলোচিত বিষয় স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ওই বৈঠক নিয়ে বিএনপির ধারণা- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নেওয়া সম্ভব। বৈঠকে হয়তো প্রধান উপদেষ্টা সিইসিকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে তার বার্তা দিয়েছেন। যদি উভয়পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয় তাহলে আমরা আশস্ত হবো।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকবারই বলা হয়েছে- তাদের সমস্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের ভেতরে সমাপ্ত হয়ে যাবে। এর আগে তারা জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও নির্বাচন কমিশন বলেছিল।
তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং সব কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন সেই হিসেবে বলা যায়, সেপ্টেম্বর এনাফ টাইম। নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন সেটা হচ্ছে- ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হালনাগাদ করা এটা হয়ে গেছে এবং অন্যান্য যে সমস্ত বিষয় আছে- নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়, সেটাও তারা করে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, আর বাদ বাকি যেটা আছে ডিলিটেশন। সেটা তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। এরপরে তপশিল ঘোষণার পরে অনেক কার্যক্রম থাকবে পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগসহ ভোটকেন্দ্র ঠিক করা, ট্রেনিং করা এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি লাগে না।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তবে বৈঠকের আলোচিত বিষয় সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এর আগে গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়।
আগামী রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের প্রস্তাবে জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার সন্তোষজনক হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে তারা অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সম্মত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব পক্ষ এবং সব রাজনৈতিক দল একমত। দ্বিমত তো হতে দেখিনি কাউকে। যদি তাই হয়, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা বা আয়োজন করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ প্রতিটি স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে কমপক্ষে ৬ মাসের বেশি সময় লাগে। সেটা ইউনিয়ন পরিষদ হোক, পৌরসভা হোক, উপজেলা পরিষদ হোক, সিটি করপোরেশন হোক। এটা অনেক বড় কর্মযজ্ঞ।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল- স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে করতে হয়তো পারব না। আর যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল চায়- আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেখানে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তো কোনো সুযোগই নেই, প্রশ্নই নেই।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান হচ্ছে- আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই এতদিন সংগ্রাম করেছি, ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য এতদিন সংগ্রাম করেছি, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন করাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ এবং প্রধান উপদেষ্টার ও এই সরকারের প্রধান কাজ। নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।