দেশে তৈরি মিতসুবিশি গাড়ি বাজারে আনল র্যানকন
Published: 30th, June 2025 GMT
দেশে তৈরি জাপানের মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের ‘এক্সপ্যান্ডার’ মডেলের নতুন গাড়ি বাজারে এনেছে র্যানকন মোটরস। প্রথমবারের মতো দেশে তৈরি এই সিরিজের চার ধরনের গাড়ি বাজারে আনা হয়েছে। গত শনিবার রাতে গাড়ি চারটির বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এত দিন র্যানকনের কারখানায় বিদেশ থেকে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হতো। এখন সেখানে গাড়ির মূল কাঠামো ও অন্যান্য অংশ রং করা, সংযোজন ও বাজারে ছাড়ার আগে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। এসব কাজের জন্য এক বছর ধরে কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।
গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর গ্রামে র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা শিল্প পার্কে অবস্থিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় তৈরি করা হয় এসব গাড়ি। ৫২ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মিতসুবিশি মোটরস, মার্সিডিজ বেঞ্জ বাসের চেসিস, সুজুকি মোটরসাইকেল, প্রোটন, জ্যাক, এলজি, তোশিবার বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মিতসুবিশির ‘এক্সপ্যান্ডার’ মডেলের চার ধরনের গাড়ির আনুষ্ঠানিক বাজারজাতকরণের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনচি। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন র্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারহানা করিম ও মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক (ডিভিশন জেনারেল ম্যানেজার) ইউতাকা ইয়ানো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাকাও কাতো বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে এটি আমাদের সুন্দর পথচলার সূচনা। এক্সপ্যান্ডার ব্র্যান্ডের গাড়িটি মূলত আসিয়ান অঞ্চলের জন্য নির্মিত। পারিবারিক গাড়ি হিসেবে বাংলাদেশে এই গাড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে। র্যানকনের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও নির্ভরযোগ্য গাড়ি তৈরির পথ সুগম করবে।’
মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক ইউতাকা ইয়ানো বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের উৎপাদনকেন্দ্রে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাই আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে বাংলাদেশ এখন মিতসুবিশি মোটরসের মানসম্পন্ন গাড়ি তৈরি করতে প্রস্তুত।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে র্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, ‘র্যানকন গ্রুপ দেশে ইলেকট্রনিকস, মোটরবাইক ও অটোমোবাইক—এই তিনটি খাতে উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। দেশের ক্রেতাদের জন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।’
রোমো রউফ চৌধুরী আরও বলেন, ‘কারখানায় নতুন বিনিয়োগের ফলে আমাদের বিভিন্ন কারখানায় দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন ও মূল্য সংযোজন এবং সরকারের নীতিসহায়তার ফলে আমরা এই মডেলের গাড়ির দাম প্রায় ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত কমাতে পেরেছি।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বলেন, এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, যখন বাংলাদেশ সরকার দেশের অটোমোবাইল শিল্পকে এগিয়ে নিতে অনুরোধ করেছিল। বাংলাদেশ সরকার যখন আমদানি করা গাড়ির ওপর কাস্টমস শুল্ক কমিয়ে দেয়, তখন মিতসুবিশি ও র্যানকন দেশে গাড়ি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ এখন এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। তাই শিল্প খাতের বৈচিত্র্য আনয়ন এখন জরুরি। দেশে গাড়ি উৎপাদন সেই উদ্দেশ্য পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিতসুবিশি মোটরসের পণ্যদূত ও অভিনেতা সিয়াম আহমেদ।
দাম কত
অনুষ্ঠানে জানানো হয়.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স করণ র দ ম অন ষ ঠ ন ব যবস থ আম দ র উৎপ দ য নকন ম টরস
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)