ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান
Published: 30th, June 2025 GMT
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা হাইওয়ে ও ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ এলাকায় ফুটপাত ও যাত্রীছাউনীর দখলমুক্ত করতে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী পরিচালিত এই অভিযানে শতাধিক অবৈধ দোকান ও বাস কাউন্টার উচ্ছেদ করা হয়।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান জানান, মহাসড়কে সুষ্ঠু যান চলাচল এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফুটপাত ও যাত্রীছাউনীর নিচে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রায় ৩০০টি অবৈধ দোকান এবং ১০০টির বেশি বাস কাউন্টার অপসারণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, থ্রি-হুইলার, অটো, নছিমন, মাহিন্দ্রার মত যানবাহন মহাসড়কে চলাচল ও অবাধে স্টপেজ তৈরি করায় ভাঙ্গা দক্ষিণপাড়া বাসস্ট্যান্ড ও কুমারনদ জোড়া ব্রীজ এলাকায় যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নজর দিয়ে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
ইউএনও জানান, ঈদের আগেই দখলদারদের সতর্ক করতে নোটিশ ও মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল মহাসড়কের পাশে দোকান ও কাউন্টার চালু রাখে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রোকিবুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনা রোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযানে কয়েকটি থ্রি-হুইলার ও পরিবহন জব্দসহ ৫টি মামলা করা হয়েছে।
উচ্ছেদ অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেশকাতুল জান্নাত রাবেয়া, ভাঙ্গা পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাওসার মাতুব্বর, সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তারা, স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্য এবং সাংবাদিকবৃন্দ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যানজটের নাগপাশে কুমিল্লা, সমাধান চায় নগরবাসী
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৮টা। কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় মোড়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো অবৈধ ইজি বাইকে সারি। হর্নের কর্কশ শব্দ ভেসে আসছে চারপাশ থেকে কিন্তু গাড়িগুলো বলতে গেলে চলছেই না। দাঁড়িয়েই আছে, মাঝে মাঝে থেমে থেমে চলছে। অফিসগামী মানুষ, স্কুলের শিশু সবার মুখে অস্থিরতার ছাপ।
একই সময় রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, চকবাজার ও শাসনগাছ রেলগেটের প্রধান সড়কগুলোও থেকেই যানজটের কবলে পড়ে স্থবির হয়ে রয়েছে। ফুটপাথ হকারদের দখলে তাই পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে চলাচল করছেন। এতে সড়কে থাকা গাড়িগুলোরও চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র পার্কিং। অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে, প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে আছে দূরের যাত্রীর জন্য। পণ্যবাহী ভ্যান লোড-আনলোড করছে সড়কে দাঁড়িয়েই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই অচলাবস্থাই যেন কুমিল্লা নগরীর ভাগ্যে লেখা ছিল।
রাজগঞ্জ থেকে আদালতপাড়া যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। এইটুকু পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। সিএনজি চালকরা বিকল্প গলি ব্যবহার করেন, তবে সেখানেও ভিড়ের শেষ নেই। ছোট ইজিবাইক বা মোটরসাইকেল চলাচলের স্থানও থাকে না গলিগুলোতে।
দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। বাজারে আসা মানুষের ভিড়, পণ্যবাহী ভ্যান, ইজিবাইক ও রিকশা রাস্তার চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেয়। চকবাজার থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের বেশি। অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু গাড়িগুলো সরতে পারে না। অ্যাম্বুলেন্সকেও পথ ছাড়তে পারে না। বাজারে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে রাখেন। ক্রেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি খুঁজে বেড়ান। এতে সড়কের চাপ আরও বেড়ে যায়।
বিকেল ৩টার পর স্কুল ও কলেজ ছুটির সঙ্গে সঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থী শহরের সড়কে নেমে আসে। অভিভাবকরা গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। এতে সড়কের অর্ধেক জায়গা বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করেন। তবে জনবল সীমিত হওয়ায় তাদের চেষ্টা বেশিরভাগ সময়ই বিফলে যায়। বহু সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায় না।
শহরের প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের চাপ থাকে। অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায়, বিক্রেতা ও ক্রেতা চলাচল করায় এবং শিশু ও অভিভাবক রাস্তার পাশে অবস্থান করায় চাপ আরও বেড়ে যায়।
অথচ প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা বা নির্দিষ্ট সড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষ হলেই আগের চিত্র ফিরে আসে। নগরে প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে, যার বড় অংশেরই নিবন্ধন নেই। সংকীর্ণ সড়ক ও পার্কিংয়ের অভাবে যানজটের চাপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় মানুষ ছোট যানবাহনের ওপর নির্ভর করছে।
নগরবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়- কুমিল্লার সড়ক নকশা তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ কম ছিল। বর্তমানে শহরের জনসংখ্যা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু সড়কের প্রস্থ বা বিকল্প রুট বাড়েনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালতপাড়া, বাজার- সব একই এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় একই সড়কে চাপ থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়।
কুমিল্লা মহিলা কলেজের শিক্ষক আসলাম আহমেদ বলেন, “প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও যানজট কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিকল্প গলি ব্যবহার করলেও সেগুলোও ভিড়ের কারণে কার্যকর হচ্ছে না। গাড়ি পার্কিং, পণ্য সরবরাহ ও মানুষ চলাচলের জন্য সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে অফিস, ক্লাস ও হাসপাতাল যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
নগরবিদ ড. আহসান কবির বলেন, “যানজট কমাতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বিশেষ করে বিকল্প গণপরিবহন চালু করা, স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল ও আধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও দরকার। আরও দরকার সড়ক সম্প্রসারণ ও বিকল্প রুট তৈরি করা, নির্দিষ্ট পার্কিং জোন ও অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণ এবং ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা। নিবন্ধনবিহীন ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করাও খুব প্রয়োজন।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক থাকলেও অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এর প্রধান কারণগুলো হলো- অবৈধ পার্কিং, অবৈধ দোকানপাট, অতিরিক্ত ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিশৃঙ্খল চলাচল, সড়কের নির্মাণ ও মেরামত কাজ এবং ট্রাফিক পুলিশের অপ্রতুল জনবল।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মো. পারভেজ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে লোকবলের তীব্র সংকট। ৭৯ জন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, যেখানে অন্তত ২০০ জন ট্রাফিক সদস্য প্রয়োজন।’’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘‘যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি কাজ করছে। আপাতত আমরা শুধু ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাই। তবে দ্রুতই কমিটি কাজ শুরু করবে।’’
ঢাকা/রুবেল/এস