চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু মোড় এলাকায় টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের নামে চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন চালক-শ্রমিকেরা। আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে সেতু চত্বরে আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে তাঁরা এ বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিক্ষোভে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন। সেখানে অধিকাংশই টেম্পোচালক। তাঁদের কেউই ইউনিয়নের কোনো পদে নেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ তৈয়্যব, মো.

ইমন প্রমুখ। তাঁরা ইউনিয়নের কমিটি বাতিল চান।

চালকেরা বলেন, ‘আগের নেতা-কর্মীরা চালকদের থেকে চাঁদা আদায় করতেন। এখনো একই কাজ করছে ইউনিয়নের নামে। আমরা কোনো নেতাকে চাই না। আমরা নিজেরাই টেম্পো ব্যবস্থাপনা করব। অসৎ কাউকে এখানে সুযোগ দেওয়া হবে না।’

চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহ আমানত সেতু মোড় থেকে আলকরণ পর্যন্ত রুটটি নগরের ১৭ নম্বর রুট হিসেবে পরিচিত। এই রুটে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, একসময় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলা হতো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির নাম ব্যবহার করে জানে আলম নামের এক ব্যক্তি চাঁদা তুলতেন। বর্তমানে মো. মনির নামের এক ব্যক্তি চাঁদা আদায় করছেন। তিনি নিজেকে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চালক মোহাম্মদ আলী বলেন, মো. মনির চালকদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। চালকেরা এসব সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় নেমেছেন।

বিক্ষোভের বিষয়ে ইউনিয়নের সভাপতি মো. মনিরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় চালক ও মালিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৭ নম্বর রুটে প্রায় ২০০টি টেম্পো (স্থানীয়ভাবে মাহিন্দ্রা নামে পরিচিত) চলাচল করে। এসব টেম্পো চালাতে হলে মালিকদের অনুমতি নিতে হয় চট্টগ্রাম অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে। চালকদের ভাষ্য, প্রতিদিন এ রুটে প্রায় ২৪ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। মাসে যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং বছরে কোটি টাকার বেশি।

চালকেরা বলছেন, প্রশাসনের নীরবতা ও কিছু প্রভাবশালীর আশ্রয়ে এই চাঁদাবাজির চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাঁরা দ্রুত এ অনিয়ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ লকদ র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ