বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব ও কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেছেন, “দেশের স্বার্থে স্থলবন্দরগুলোকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করতে হবে। এ বন্দরগুলো কেবল বাণিজ্য নয়, নিরাপত্তার দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোমবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্থলবন্দরের অগ্রগতি, অর্থনীতির সমৃদ্ধি’।

আরো পড়ুন:

আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ বন্ধ আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম

উপদেষ্টা বলেন, “আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গেছে। এই ঘাটতি দূর করতে হলে স্থলবন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে। দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বন্দর ব্যবস্থাপনা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “অতীতে ভূরাজনৈতিক সচেতনতার ঘাটতির কারণে অনেক স্থলবন্দর উপযুক্ত সমীক্ষা ছাড়াই নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন স্থলবন্দর স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনায় আরো সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। পাশাপাশি বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে।”

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “স্থলবন্দর আধুনিকায়নের জন্য যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, তা সময় মতো বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।”

তিনি বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, “সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই এ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।” ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, “আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষায় স্থলবন্দরগুলো দিয়ে রপ্তানির পণ্যে বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। এজন্য একটি কার্যকর ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করার কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “যেভাবে সমুদ্রবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, একইভাবে স্থলবন্দরগুলোতেও পণ্য অনুমোদনের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।”

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল, বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান মো.

সলিম উল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ আমদ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দুই দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক ধারা চলছে। সম্প্রতি ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চার ধরনের পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পরিবর্তে শুধু মুম্বাইয়ের নাভোসেভা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি স্থলপথেই ভারতে যায়। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করবে। যদিও ভারত এসব সিদ্ধান্তকে নিয়মকানুন বা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে দেখাতে পারে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞার হঠাৎ প্রয়োগ ও পুনরাবৃত্তি একটি কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিষয়ে সন্দেহ তৈরি করে।

তবে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অবকাঠামোর অভাব ও সীমিত বাণিজ্য কার্যক্রম। এসব পদক্ষেপকে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এসবই একধরনের রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা পারস্পরিক আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় স্থিতিশীল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এত দিন ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত ভারত ও বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য সমস্যা সমাধানে স্বচ্ছ সংলাপের পরিবর্তে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অশুল্ক বাধার দিকে ঝুঁকছে। এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি করছে না (যেখানে ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারসাম্যহীনভাবে বেশি রপ্তানি হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো), বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাও ধ্বংস করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। এর পাশাপাশি সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণ না করা। এসব সরবরাহ চেইন ভেঙে দেয় এবং শিল্পোন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করা উচিত, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্ত। বাণিজ্যকে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহনশীলতার মাধ্যম হিসেবে দেখা, চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার নয়। দুই সরকারকেই কাঠামোগত আলোচনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে, অশুল্ক বাধা–সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ সহজতর করতে প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ যেন বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুফলকে ছাপিয়ে না যায়। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অনেকটাই এ সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিলিতে আমদানিকৃত চাল খালাস করছেন না আমদানিকারকরা
  • পদ্মায় তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় দুটি ঘাট বন্ধ, একটি দিয়ে ফেরি পারাপার
  • ৪ মাস পর হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু
  • ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে