আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসরণ করে গ্রহ আবিষ্কার
Published: 1st, July 2025 GMT
লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি নতুন গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করা স্থান-কাল ঘটনা ব্যবহার করে এই বিরল গ্রহ আবিষ্কার করেছেন। এটি ২০২১উয়ে বি নামের গ্রহটি বৃহস্পতি-আকৃতির একটি বহির্গ্রহ। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরে গ্যালাকটিক স্ফীতিস্থলে অবস্থিত গ্রহটি। গ্রহটি মহাকর্ষীয় মাইক্রোলেন্সিং ব্যবহার করে আবিষ্কার করা হয়। আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এই পদ্ধতি বিকশিত হয়েছে। কোনো একটি বিশাল বস্তু গ্রহের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে আলোর বাঁক ও বিবর্ধন পরিমাপ করে গ্রহ শনাক্ত করার এই কৌশল ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা।
গ্রহটি একটি ছোট ও ম্লান এম শ্রেণির বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে। প্রতি ৪ হাজার ১৭০ দিনে তার কক্ষপথ সম্পূর্ণ করছে। এই ব্যাপ্তিকাল পৃথিবীর প্রায় ১১ বছরের সমান। ২০২১ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গায়া টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই গ্রহের খোঁজ মিলেছে। অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে প্রকাশিত হয়েছে এই গ্রহের বিভিন্ন তথ্য।
লিথুয়ানিয়ান গবেষণা দলের প্রধান মারিয়াস মাসকোলিউনাস বলেন, এ ধরনের আবিষ্কারের কাজের জন্য প্রচুর দক্ষতা, ধৈর্য আর কিছুটা ভাগ্যের প্রয়োজন হয়। উৎস নক্ষত্র ও লেন্সিং বস্তুর সারিবদ্ধ হওয়ার জন্য আপনাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তথ্য পরীক্ষা করতে হয়। পর্যবেক্ষণ করা নক্ষত্রের ৯০ শতাংশই বিভিন্ন কারণে স্পন্দিত হয় আর খুব কম ক্ষেত্রেই মাইক্রোলেন্সিং প্রভাব দেখা যায় বলে বিষয়টি অনেক জটিল। এ পদ্ধতির মাধ্যমে অদৃশ্য অনেক বস্তু শনাক্ত করা যায়। মনে করুন, একটি পাখি আপনার পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। আপনি পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছেন না আর জানেন না তার কী রং। কেবল তার ছায়া দেখছেন। ছায়া থেকে আপনি কিছুটা সম্ভাবনার খোঁজ নিতে পারেন। সেই পাখিটি চড়ুই ছিল নাকি রাজহাঁস ছিল, তা জানতে পারেন। আমাদের থেকে কত দূরে ছিল, তা জানার অবিশ্বাস্য প্রক্রিয়া বেশ আকর্ষণীয় বটে।
আমাদের ছায়াপথের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত নতুন গ্রহটি। গ্রহটির আবিষ্কার গ্রহ গঠনের প্রচলিত বিভিন্ন ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পুতিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে না
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় পুতিনকে একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সংগত। তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য কোনো দেশ নয়।
২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, ওই সংবিধির আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কখনো ওই চুক্তিকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুসমর্থনের জন্য পদক্ষেপ নেয়নি।
বিল ক্লিনটন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরের দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সম্পৃক্ততার অবসান ঘটান। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা আমেরিকার মাটিতে নেই।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে আইসিসির প্রতি বৈরিতা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যুদ্ধাপরাধ করেছেন, এমন অভিযোগের তদন্ত করায় আইসিসির ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
আইসিসির এখতিয়ারের এই ঘাটতিই পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজকের বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
অবশ্য আইসিসির স্বাক্ষরকারী দেশ মঙ্গোলিয়ায় ২০২৩ সালের আগস্টে সফর করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের অনুরোধ করা হলেও তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল দেশটি। সে জন্য মঙ্গোলিয়াকে কোনো পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।
শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন কেবল ততটাই কার্যকর হয়, যতটা দেশগুলোর সরকার এবং তাদের নেতারা কার্যকর করতে চান। আর এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে চান এবং এই সাক্ষাৎ তাঁর পছন্দ মতো করতে তাঁকে আটকানোর মতো কিছুই নেই।