গাংনীতে সড়কে ‘বোমা’ ফাটিয়ে ডাকাতি, এলাকায় আতঙ্ক
Published: 2nd, July 2025 GMT
মেহেরপুরের গাংনীতে ‘বোমা’ ফাটিয়ে ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কে কয়েকজন ব্যবসায়ীর লুটের শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাংনী বাজার থেকে ব্যবসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় কয়েকজন গরু ও সবজি ব্যবসায়ী। তারা নির্জন পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কে পৌঁছালে ওঁত পেতে থাকা একদল ডাকাত তাদের গতিরোধ করে। ডাকাতরা ব্যবসায়ীদের মারধর করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয়। পরে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী নসিমন চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ডাকাত দলের সদস্যরা তিনটি বোমা নিক্ষেপ করলেও দুইটি বিস্ফোরিত হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা নগদ টাকা-পয়সা সব লুট করে নিয়েছে। কারো দিতে দেরি হলে মারধর করা হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ছুটে আসলে বোমা ফাটিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
সবজি ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন জানান, তার কাছে ২২ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করাতেন। সে কথা ডাকাতদলকে বলে টাকা দিতে দেরি করায় তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। টাকাও লুট করে নিয়েছে। এছাড়া যাদের পকেটে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা ছিল তাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি মোটর সাইকেলের সামনে বোমা ফাটায় ডাকাতরা। পরে আরেকটি বোমা ছুঁড়লে তা আমার ভ্যানের সামনে এসে পড়ে সেটি বিস্ফোরিত হয়। কোনো রকমে আমি বেঁচে গেছি। তবে এখনও শরীর কাঁপছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাণী ইসরাইল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)