সিলেটের ডিসির বিরুদ্ধে মাঠে বিএনপি নেতারা
Published: 3rd, July 2025 GMT
সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতারা। বুধবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশে জেলা প্রশাসকের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। এদিকে কোয়ারি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে আগামী শনিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
গতকাল মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বক্তৃতায় জেলা প্রশাসককে একহাত নেন। ডিসিকে উদ্দেশ করে আরিফ বলেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই করছেন। আন্দোলন শুরু করায় আপনি জেগেছেন। দু-একজন নেতাকে বশ করে আপনি যদি মনে করেন পার পেয়ে যাবেন, তা হলে ভুল করবেন। ৫ জুলাইয়ের পর আপনার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। আপনি বিদায় নেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি আইন ও নীতমালা মানি। কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ক্রাশার মিল গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্ধকল্যাণ সমিতির ইজারাকৃত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করছেন। কোনো ভুল থাকলে তাদের নিয়ে বসেন। কিন্তু না বসে আপনি ধ্বংস শুরু করছেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, পরিহন শ্রমিক নেতা মইনুল ইসলাম প্রমুখ।
গতকাল সকালে কোর্ট পয়েন্টে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে আরিফ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতের জেলা আমির হাবিবুর রহমান, মহানগর আমির ফখরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় চলমান বিভিন্ন ইস্যু বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এ বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সমকালকে বলেন, আমরা সনাতন পদ্ধতির পাথর কোয়ারি চালু, ক্রাশার মিলে অভিযান বন্ধ ও অন্ধকল্যাণ সমিতির জায়গা থেকে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি করেছি। জেলা প্রশাসক ইতিবাচক, তিনি পাথর কোয়ারি ইজারা বন্ধের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ক্রাশার মিলে যাদের বৈধতা আছে, তাদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া ও অন্ধকল্যাণ সমিতির পাশে সরকারি জায়গা থেকে উচ্ছেদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আরিফুল হক কী জন্য আমাকে নিয়ে এত কথা বলেছেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন। পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়গুলো ভেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া ও স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের প্রতিবাদে আন্দোলনকালে মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ জানান, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় দ্রুত বিচার আইনে পুলিশ বাদী হয়ে ৯ জনের নামে মামলা করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)