সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতারা। বুধবার নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশে জেলা প্রশাসকের কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। এদিকে কোয়ারি চালুসহ পাঁচ দফা দাবিতে আগামী শনিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।

গতকাল মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বক্তৃতায় জেলা প্রশাসককে একহাত নেন। ডিসিকে উদ্দেশ করে আরিফ বলেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই করছেন। আন্দোলন শুরু করায় আপনি জেগেছেন। দু-একজন নেতাকে বশ করে আপনি যদি মনে করেন পার পেয়ে যাবেন, তা হলে ভুল করবেন। ৫ জুলাইয়ের পর আপনার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। আপনি বিদায় নেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি আইন ও নীতমালা মানি। কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ক্রাশার মিল গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্ধকল্যাণ সমিতির ইজারাকৃত ব্যবসায়ীদের ‍উচ্ছেদ করছেন। কোনো ভুল থাকলে তাদের নিয়ে বসেন। কিন্তু না বসে আপনি ধ্বংস শুরু করছেন। 

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, পরিহন শ্রমিক নেতা মইনুল ইসলাম প্রমুখ।

গতকাল সকালে কোর্ট পয়েন্টে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে আরিফ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় ‍তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতের জেলা আমির হাবিবুর রহমান, মহানগর আমির ফখরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় চলমান বিভিন্ন ইস্যু বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এ বিষয়ে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সমকালকে বলেন, আমরা সনাতন পদ্ধতির পাথর কোয়ারি চালু, ক্রাশার মিলে অভিযান বন্ধ ও অন্ধকল্যাণ সমিতির জায়গা থেকে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি করেছি। জেলা প্রশাসক ইতিবাচক, তিনি পাথর কোয়ারি ইজারা বন্ধের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ক্রাশার মিলে যাদের বৈধতা আছে, তাদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া ও অন্ধকল্যাণ সমিতির পাশে সরকারি জায়গা থেকে উচ্ছেদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

জেলা প্রশাসক বলেন, আরিফুল হক কী জন্য আমাকে নিয়ে এত কথা বলেছেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন। পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন দাবির বিষয়গুলো ভেবে দেখা হচ্ছে। 

এদিকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া ও স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের প্রতিবাদে আন্দোলনকালে মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ জানান, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় দ্রুত বিচার আইনে পুলিশ বাদী হয়ে ৯ জনের নামে মামলা করেছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

শেবাচিমে চিকিৎসককে মারধর, কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

তিন ঘণ্টা পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি পাহাড়ায় জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। চিকিৎসকদের উপর হামলা ও নিরাপত্তা না থাকায় দুপুর ২টা থেকে কর্মস্থল ত্যাগ করেন চিকিৎসকরা। ফলে টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীরের অনুরোধে পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় বিকেল ৫টা থেকে জরুরি সেবা চালু করা হয়। তবে বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাব্বি আল মামুন ফয়সাল জানান, রবিবার বেলা ১২টার দিকে সদর রোড থেকে বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে হাসপাতালের সামনে আসে। এ সময় তারা হাসপাতালের প্রতিটি গেটের সামনে স্কুল-কলেজের মার্কিং করে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের গালিগালাজ করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি ছিল বলে জানান রাব্বি আল মামুন। 

তিনি বলেন, ‘‘দুপুর ২টার দিকে মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার দিলিপ রায় ডিউটি শেষে বের হওয়ামাত্র তাকে টেনেহিঁচড়ে বেদম মারধর করা হয়। পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। এতে বাহাউদ্দিন নামে এক কর্মচারী আহত হন।’’

চিকিৎসকের উপর হামলা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন ইর্ন্টান চিকিৎসকরা। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানান, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এ সময় পরিচালক মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু আজকে ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতিকারী ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা করেছে। হাসপাতাল ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’’

ঘটনায় জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। 

মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, ‘‘আজ মহিউদ্দিন রনির  নেতৃত্বে বরিশালে বেশ কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। ডা. দিলিপ রায়কে মারধর করেছে।  চিকিৎসকের উপর নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ায় রোগীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি চিকিৎসকরাও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় ঘটনার পর কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তবে হাসপাতাল পরিচালক স্যারের বিশেষ অনুরোধে ও পুলিশের নিরাপত্তায় এবং মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে আমরা মিড লেভেল চিকিৎসকরা শুধু জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।’’

এ দিকে তিন ঘণ্টা চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ায় রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা ছুটে যান পরিচালকের কাছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তাদের শান্ত হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছি। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।’’

ঢাকা/পলাশ//

সম্পর্কিত নিবন্ধ