‘কমিউনিস্ট’ জোহরান মেয়র হলে নিউইয়র্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
Published: 9th, July 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে ‘কমিউনিস্ট’ জোহরান মামদানি জয়ী হলে তিনি হোয়াইট হাউসের ফেডারেল ক্ষমতা ব্যবহার করে এই নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘নিউইয়র্ক নগর চালানোর জন্য যদি একজন কমিউনিস্ট নির্বাচিত হন, তাহলে নিউইয়র্ক আর আগের মতো থাকবে না। তবে হোয়াইট হাউসে আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে আমরাই এই নগর চালাতে পারি।’
রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘নিউইয়র্ক নগর ঠিকভাবে চলবে। আমি নিউইয়র্ককে আবার গড়ে তুলব। আমি নিউইয়র্ককে ভালোবাসি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্ককে ঠিক করতে যাচ্ছি। হয়তো ওয়াশিংটন থেকেই আমাদের সেটা করতে হবে।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নিউইয়র্কে ‘আইনশৃঙ্খলার অভাব’ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এবারও তিনি সরাসরি বলেননি, কোন আইন বা ক্ষমতার বলে তিনি নিউইয়র্ক নগরের দখল নিতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্কের জন্য কিছু করতে যাচ্ছি। এখনই বিস্তারিত বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা নিউইয়র্ককে আবার মহান করব। আমেরিকাকেও আমরা মহান করব।’
রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত কি না—সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এতে জড়াচ্ছি না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘অ্যান্ড্রু ক্যুমোর যোগ্যতা আছে।’
ক্যুমো মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অবশ্য ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনি হেরে গেছেন। এখন মেয়র হওয়ার দৌড়ে আছেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, অ্যান্ড্রু ক্যুমো ও কার্টিস স্লিওয়া।
ট্রাম্প বলেন, ‘কার্টিস তো প্রতি চার বছরেই দাঁড়ান। তিনি মনে হয় প্রার্থী তালিকার স্থায়ী সদস্য হয়ে গেছেন।’
জোহরানকে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মতে, তাঁর খুব একটা যোগ্যতা নেই। তিনি একটা বিপর্যয়। তিনি ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, ডেমোক্রেটিক দল এখন কোথায় চলে গেছে।’
গ্রিসটিডস সুপারমার্কেটের প্রধানের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি (জোহরান) আসলে জন ক্যাটসিমাটিডিসের দোকানগুলো দখল করতে চান।
ট্রাম্প বলেন, ‘(ক্যাটসিমাটিডিস) আমাকে কিছুদিন আগে ফোন করেছিলেন। তিনি চিন্তিত, তাঁর দোকানগুলো কেড়ে নেওয়া হতে পারে।’
নিউইয়র্ক নিয়ে কথা বলার পর ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি ওয়াশিংটন ডিসিকেও ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন। এই বিশেষ এলাকা ১৯৭৩ সাল থেকে নিজেরাই স্থানীয়ভাবে শাসনকার্য চালিয়ে আসছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ডিসি চালাতে পারি। আমরা চাই না, ডিসিতে অপরাধ থাকুক। আমরা চাই শহরটি ভালোভাবে চলুক।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমরা এটা নিয়ে ভাবছি। আমরা চাই, রাজধানী একদম নিখুঁতভাবে চলুক। এটা পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না। ডিসির মেয়রের (মুরিয়েল বাউজার) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। এখন আমরা পরীক্ষা করে দেখছি, এটা কাজ করে কি না।’
‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া জোহরান মামদানি গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ে ক্যুমোকে হারিয়ে জয়ী হন। জরিপ অনুযায়ী তিনি ৪ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে এগিয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, জোহরানের জয় প্রমাণ করে, দুই দলের ভোটারদের মানসিকতা কতটা বদলে গেছে।
ভ্যান্স আরও বলেন, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত জোটের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু জোহরান ঠিক তার উল্টো। তিনি উচ্চ আয় ও উচ্চশিক্ষিত বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার এবং কলেজ-ডিগ্রি না থাকা ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন দুর্বল।
জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রতি ৩৫ শতাংশ, ক্যুমোর প্রতি ২৯ শতাংশ, স্লিওয়ার প্রতি ১৬ শতাংশ এবং এরিক অ্যাডামসের প্রতি ১৪ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ২০২১ সালে ডেমোক্র্যাট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অবশ্য অ্যাডামস দাবি করেন, এ মামলাটি ছিল বাইডেন প্রশাসনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ট্রাম্প প্রশাসন এসে মামলাটি বাতিল করে দেয়।
অ্যাডামসকে নিয়ে ট্রাম্প ইতিবাচক মন্তব্য করলেও এখনো কাউকে সমর্থন করেননি তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ম প বল ন ন উইয র ক ন আরও বল ন র ক নগর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থীদের প্রথম টিভি বিতর্কে তীব্র বাদানুবাদ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন হচ্ছেন সমাজতান্ত্রিক, একজনের বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং আরেকজন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘চরম উত্তেজনাপূর্ণ’ এক বিতর্কে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। এ সময় একে অন্যের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী প্রচার এখন চূড়ান্ত ধাপে বলা চলে।
আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে টেলিভিশনে সরাসরি দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া ভোটারদের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হবে ২৫ অক্টোবর থেকে।
বিতর্কে জোহরান প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন কেলেঙ্কারি এবং কোভিড মহামারির সময় ‘নার্সিং হোমে বয়স্কদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার’ মতো বিতর্কিত প্রশাসনিক রেকর্ড নিয়ে কড়া আক্রমণ করেন।
স্লিওয়া তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ভালো যে আমি পেশাদার রাজনীতিবিদ নই। কারণ, এই শহরে অপরাধের সংকট তারাই সৃষ্টি করেছেন।’
পরে স্লিওয়া মন্তব্য করেন, ‘এই কক্ষে অনেক বেশি পৌরুষের দাপট (টেস্টোস্টেরন) চলছে।’
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জোহরান মামদানি সবাইকে চমকে দিয়ে কুমোকে হারিয়ে জয়ী হন। কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য কুমোকে হারিয়ে তিনি দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পান।
জোহরান নিউইয়র্ক নগরে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, ভাড়ানিয়ন্ত্রণ এবং নগর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সুপারমার্কেট পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী কুমো অবশ্য জোহরানের এসব পরিকল্পনাকে আকাশকুসুম কল্পনা এবং সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, যা অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব।
নিউইয়র্ক নগরের ৮৫ লাখ মানুষের শাসনভার কার হাতে যাবে, সেই আলোচনা আরও একবার জোরালো হয়ে ওঠে, যখন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত বর্তমান মেয়র সরে দাঁড়ালেও তিনি কোনো প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানানি। তবে তিনি সরে যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন দিকে মোড় নেয়।
৬৭ বছর বয়সী কুমো ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের জেরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি কুইন্স বোরো থেকে নির্বাচিত অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে অদম্য প্রচারের মাধ্যমে তরুণ নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে দারুণ উৎসাহ–উদ্দীপনা তৈরি করেছেন।
নিউইয়র্ক নগরের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর (বাঁয়ে) সঙ্গে হাত মেলান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। ১৬ অক্টোবর ২০২৫, নিউইয়র্ক