প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে ‘কমিউনিস্ট’ জোহরান মামদানি জয়ী হলে তিনি হোয়াইট হাউসের ফেডারেল ক্ষমতা ব্যবহার করে এই নগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘নিউইয়র্ক নগর চালানোর জন্য যদি একজন কমিউনিস্ট নির্বাচিত হন, তাহলে নিউইয়র্ক আর আগের মতো থাকবে না। তবে হোয়াইট হাউসে আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। প্রয়োজনে আমরাই এই নগর চালাতে পারি।’

রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘নিউইয়র্ক নগর ঠিকভাবে চলবে। আমি নিউইয়র্ককে আবার গড়ে তুলব। আমি নিউইয়র্ককে ভালোবাসি।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্ককে ঠিক করতে যাচ্ছি। হয়তো ওয়াশিংটন থেকেই আমাদের সেটা করতে হবে।’

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নিউইয়র্কে ‘আইনশৃঙ্খলার অভাব’ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এবারও তিনি সরাসরি বলেননি, কোন আইন বা ক্ষমতার বলে তিনি নিউইয়র্ক নগরের দখল নিতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্কের জন্য কিছু করতে যাচ্ছি। এখনই বিস্তারিত বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা নিউইয়র্ককে আবার মহান করব। আমেরিকাকেও আমরা মহান করব।’

রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত কি না—সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এতে জড়াচ্ছি না।’

ট্রাম্প বলেন, ‘অ্যান্ড্রু ক্যুমোর যোগ্যতা আছে।’

ক্যুমো মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অবশ্য ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনি হেরে গেছেন। এখন মেয়র হওয়ার দৌড়ে আছেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, অ্যান্ড্রু ক্যুমো ও কার্টিস স্লিওয়া।

ট্রাম্প বলেন, ‘কার্টিস তো প্রতি চার বছরেই দাঁড়ান। তিনি মনে হয় প্রার্থী তালিকার স্থায়ী সদস্য হয়ে গেছেন।’

জোহরানকে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মতে, তাঁর খুব একটা যোগ্যতা নেই। তিনি একটা বিপর্যয়। তিনি ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হয়েছেন। এটি প্রমাণ করে, ডেমোক্রেটিক দল এখন কোথায় চলে গেছে।’

গ্রিসটিডস সুপারমার্কেটের প্রধানের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি (জোহরান) আসলে জন ক্যাটসিমাটিডিসের দোকানগুলো দখল করতে চান।

ট্রাম্প বলেন, ‘(ক্যাটসিমাটিডিস) আমাকে কিছুদিন আগে ফোন করেছিলেন। তিনি চিন্তিত, তাঁর দোকানগুলো কেড়ে নেওয়া হতে পারে।’

নিউইয়র্ক নিয়ে কথা বলার পর ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি ওয়াশিংটন ডিসিকেও ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন। এই বিশেষ এলাকা ১৯৭৩ সাল থেকে নিজেরাই স্থানীয়ভাবে শাসনকার্য চালিয়ে আসছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ডিসি চালাতে পারি। আমরা চাই না, ডিসিতে অপরাধ থাকুক। আমরা চাই শহরটি ভালোভাবে চলুক।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমরা এটা নিয়ে ভাবছি। আমরা চাই, রাজধানী একদম নিখুঁতভাবে চলুক। এটা পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না। ডিসির মেয়রের (মুরিয়েল বাউজার) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। এখন আমরা পরীক্ষা করে দেখছি, এটা কাজ করে কি না।’

‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া জোহরান মামদানি গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইয়ে ক্যুমোকে হারিয়ে জয়ী হন। জরিপ অনুযায়ী তিনি ৪ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে এগিয়ে আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, জোহরানের জয় প্রমাণ করে, দুই দলের ভোটারদের মানসিকতা কতটা বদলে গেছে।

ভ্যান্স আরও বলেন, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত জোটের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু জোহরান ঠিক তার উল্টো। তিনি উচ্চ আয় ও উচ্চশিক্ষিত বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার এবং কলেজ-ডিগ্রি না থাকা ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন দুর্বল।

জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রতি ৩৫ শতাংশ, ক্যুমোর প্রতি ২৯ শতাংশ, স্লিওয়ার প্রতি ১৬ শতাংশ এবং এরিক অ্যাডামসের প্রতি ১৪ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ২০২১ সালে ডেমোক্র্যাট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অবশ্য অ্যাডামস দাবি করেন, এ মামলাটি ছিল বাইডেন প্রশাসনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ট্রাম্প প্রশাসন এসে মামলাটি বাতিল করে দেয়।

অ্যাডামসকে নিয়ে ট্রাম্প ইতিবাচক মন্তব্য করলেও এখনো কাউকে সমর্থন করেননি তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট র ম প বল ন ন উইয র ক ন আরও বল ন র ক নগর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এক আর্জেন্টাইনের হ্যাটট্রিকে মেসিদের বড় জয়, প্রথমবার কাপ ফাইনালে ইন্টার মায়ামি

ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ ফাইনালে উঠেছে ইন্টার মায়ামি। আজ প্লে-অফের ইস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনালে নিউইয়র্ক সিটি এফসিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিওনেল মেসির দল।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ লিগে ৩০টি দল ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন কনফারেন্সে ভাগ হয়ে খেলে। দুই অংশের চ্যাম্পিয়নরা খেলে এমএলএস কাপ ফাইনাল। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মায়ামি এর আগে তিনবার প্লে-অফে খেললেও কনফারেন্স সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। এবার সেমি ও ফাইনাল জিতে নাম লিখিয়েছে কাপ ফাইনালেই।

চেজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আজকের কনফারেন্স ফাইনালে মায়ামি জিতেছে তাদেও আলেন্দের নৈপুণ্যে। ২৬ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন হ্যাটট্রিক করেছেন। একটি গোল করেছেন আরেক আর্জেন্টাইন মাতেও সিলভেত্তি। অন্য গোলটি তালেসকো সেগোভিয়ার। মেসি তাঁর রোজারিওর ছেলে সিলভেত্তির গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন।

আর্জেন্টাইনময় ম্যাচটিতে আলেন্দে মায়ামিকে এগিয়ে দেন ১৪তম মিনিটে। এই গোলে অ্যাসিস্ট ছিল আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পলের। ২৪তম মিনিটে আলেন্দে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল করেন হেডে, তাঁকে বক্সে দুর্দান্ত এক ক্রস দেন জর্দি আলবা। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে নিউইয়র্ক সিটির জাস্টিন হাক এক গোল শোধ করে দিলে মায়ামি বিরতিতে যায় ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে।

৬৭তম মিনিটে মেসি বক্সের মধ্যে ঘেরাওয়ে পড়লে বল বাড়ান ফাঁকায় থাকা সিলভেত্তির দিকে। ১৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বল জালে জালে পাঠাতে ভুল করেননি। মায়ামি জয়ের বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয় ৮৩তম মিনিটে।

এ সময় বক্সের ভেতর আলবার ব্যাক পাস পেয়ে সেগোভিয়া গোল করে ব্যবধান ৪-১ করে ফেলেন। ম্যাচের ৮৯তম মিনিটে ইয়ানিক ব্রাইটের সহায়তায় নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন আলেন্দে। মায়ামি মাঠ ছাড়ে ৫-১ গোলের বড় জয় নিয়ে।

আগামী ৬ ডিসেম্বর এমএলএস কাপ ফাইনালে মায়ামি খেলবে ওয়েস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনালে সান ডিয়েগো ও ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক আর্জেন্টাইনের হ্যাটট্রিকে মেসিদের বড় জয়, প্রথমবার কাপ ফাইনালে ইন্টার মায়ামি