উলফা নেতা ও তাঁর সহযোগীর যাবজ্জীবনের পরিবর্তে ২০ বছর করে কারাদণ্ড
Published: 22nd, July 2025 GMT
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) নেতা রঞ্জন চৌধুরী ও তাঁর সহযোগী প্রদীপ মারাককে একটি মামলায় যাবজ্জীবনের পরিবর্তে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। অস্ত্র আইনের ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ওই দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।
ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল খারিজ ও সাজা সংশোধন করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়েও এই দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। এই মামলায় তাঁরা যত দিন কারাভোগ (১৫ বছর) করেছেন, তত দিন তাঁদের সাজাভোগ হিসেবে গণ্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল খারিজ এবং সাজা সংশোধন করে আজ রায় দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। রঞ্জন ও প্রদীপ ২০১০ সালের ১৭ জুলাই থেকে কারাগারে আছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।
অস্ত্র আইনের মামলায় ২০ বছর এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আসামিদের ১৫ বছরের কারাবাস সাজাভোগ হিসেবে গণ্য হওয়ায় ওই দুই আসামি মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের এক আইনজীবী।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
অস্ত্র আইনের মামলায় আসামিদের সাজা সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আসামিপক্ষের এক আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপর মামলায় তাদের যাবজ্জীবন ছিল, যা সার্ভ আউট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মানে ১৫ বছর খেটেছেন, এই ১৫ বছর শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ১৫ বছর ৭ দিন ধরে তারা কারাগারে আছেন। কারাবিধি অনুযায়ী আসামিরা কিছু মাফ পায়; কারাবিধি অনুযায়ী সাধারণত ৯ মাসে বছর হয়ে থাকে। যেহেতু ১৫ বছর সার্ভ (খেটেছেন) করেছে, এ হিসাবে কারাবিধি অনুযায়ী যদি ৯ মাসে বছর গণনা করা, তাহলে ২০ বছর হয়ে যায়। এ হিসাবে তাঁরা কারামুক্তি পেতে পারেন।
আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালের ১৭ জুলাই ভৈরব পৌর শহর এলাকা থেকে রঞ্জন ও প্রদীপকে আটক করে তৎকালীন র্যাব-৯–এর (বর্তমানে র্যাব-১৪) সদস্যরা। র্যাবের তৎকালীন উপপরিচালক (ডিএডি) মো. করিম উল্লাহ বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা করেন।
অস্ত্র আইনের মামলায় ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল রায় দেন কিশোরগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক। রায়ে রঞ্জন ও প্রদীপকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় একই দিন রায় দেন কিশোরগঞ্জের দায়রা আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পৃথক মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন দুই আসামি। আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন উলফা নেতা রঞ্জন চৌধুরী নামে শেরপুরে অবস্থান করছিলেন। শেরপুরে রঞ্জন বিয়েও করেছিলেন। প্রদীপ মারাক নামের একজন সহযোগীকে নিয়ে তিনি নিষিদ্ধ কাজকর্ম করছিলেন। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবনের পরিবর্তে তাঁদের ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই আসামি ১৫ বছর ধরে কারাগারে আছেন। এই কারাভোগকে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় সার্ভ আউট (সাজাভোগ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
দুই আসামি মুক্তি পাবেন কি না, এমন প্রশ্নে সুলতানা আক্তার রুবী বলেন, এখন তাঁদের বিরুদ্ধে যদি অন্য কোনো মামলা না থাকে এবং রঞ্জন চৌধুরীর ক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্রের সঙ্গে ওদের রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে আইনি বিধিবিধান আছে, তা মেনে মুক্তি পাবে কি পাবে না, সে বিষয়টি নির্ভর করছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপিল করা হবে কি না, তা বিবেচনা করা হবে।
মামলাসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুসারে, রঞ্জন চৌধুরী আসামে মেজর রঞ্জন হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাড়ি ভারতের আসামের ধুবড়া জেলার গৌরীপুর থানার মধু শোলমারি গ্রামে। প্রদীপের বাড়ি বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার বাকাকুড়া গ্রামে। রঞ্জন ২০০৭ সালে ঝিনাইগাতীর সাবেত্রী মং নামের এক আদিবাসী নারীকে বিয়ে করে ওই অঞ্চলে বাস করছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই আস ম আস ম দ র আইনজ ব ২০ বছর ১৫ বছর আস ম র
এছাড়াও পড়ুন:
দণ্ডাদেশের রায় বাতিল, খালাস পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মো. মোবারক হোসেন।
দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ১১ বছর আগে আপিল করেছিলেন মোবারক। তাঁর করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ রায় দেন। একই সঙ্গে মোবারককে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায় বাতিল করা হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এই প্রথম আপিল করে কেউ খালাস পেলেন বলে জানিয়েছেন মোবারকের আইনজীবীরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন মোবারক, যার ওপর ৮ জুলাই শুনানি শুরু হয়।
২২ জুলাই শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। সে অনুযায়ী আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে মোবারকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ইমরান এ সিদ্দিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোবারককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে মোবারককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অপর তিনটি অভিযোগ (২,৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত না হওয়ায় এগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মোবারক জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন পর্যায়ে রুকন হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। দুই অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করা হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁর কারামুক্তিতে বাধা নেই।’