যে কারণে পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখার অভ্যাস আজই ত্যাগ করবেন
Published: 4th, August 2025 GMT
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘাড়, পিঠ ও মেরুদণ্ডের যত্নে যতটা সম্ভব ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। আমরা হয়তো সে চেষ্টা করিও। কিন্তু পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখলে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যায়। জেনে নিন কীভাবে এই ছোট অভ্যাস আপনার শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করছে এবং কীভাবে সহজেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
হতে পারে সায়াটিকাআগেই বলা হয়েছে, পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখার অভ্যাস ধীরে ধীরে আপনার স্বাভাবিক বসার ভঙ্গি বদলে দিতে পারে। এর ফলে আপনার নিতম্বে ব্যথা হতে পারে, যা ছড়িয়ে পড়তে পারে সায়াটিক স্নায়ু ধরে পায়ের দিকে কিংবা পুরো পিঠে।
সায়াটিক মানবদেহের এক দীর্ঘ স্নায়ু। এটি মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ঊরুর পেছন দিক দিয়ে হাঁটুর নিচের মাংসপেশির মধ্য দিয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। কোনো কারণে এই স্নায়ুর ওপর চাপ পড়লে কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে যায়। একেই বলে সায়াটিকা।
পিঠে অস্বস্তি দিয়ে শুরুআমাদের নিচের পিঠ, মেরুদণ্ড ও ঘাড় সবই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য যখন কোনো কারণে বিঘ্নিত হয়, তখনই দেখা দেয় সমস্যা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেস্কে বসে কাজ করার সময় পেছনের পকেটে মানিব্যাগ থাকলে এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সত্যিই কঠিন। এসব ক্ষেত্রে শুরুটা হয় পিঠে অস্বস্তি বা শক্ত হয়ে যাওয়ার অনুভব দিয়ে।
এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে সাবধানতা জরুরি। সহজে সমাধানযোগ্য সমস্যাটিকে অবহেলা করলে তৈরি হতে পারে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা।
আরও পড়ুনযে ব্যায়াম কমাবে কোমর ও পিঠের ব্যথা১৫ জুলাই ২০২০মেরুদণ্ড, ঘাড় ও পিঠে সমস্যাসুস্থ থাকতে চাইলে মেরুদণ্ড, ঘাড় আর পিঠের যত্ন নেওয়া অতি জরুরি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে ব্যথা বা ইনজুরির ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়।
আপনি যদি তরুণ বা সুস্থ–সবল কেউ হয়ে থাকেন, তবু পেছনের পকেটে মানিব্যাগ রাখার অভ্যাস আজই বাদ দিন। এটাকে ঠিক ‘অভ্যাস’ নয় ‘বদভ্যাস’ বলাই যুক্তিসংগত। এই একটা বদভ্যাস ধীরে ধীরে আপনার নিচের পিঠ, মেরুদণ্ড ও আশপাশের অঞ্চলের স্বাস্থ্যে ফেলতে পারে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব।
পেছনের পকেটে মানিব্যাগ থাকলে বদলে যায় আপনার বসার ভঙ্গি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় এনআরসি আতঙ্কে আত্মহত্যা
এনআরসি আতঙ্কে কলকাতায় আত্মহত্যা করেছেন এক ব্যক্তি। রবিবার (৩ আগস্ট) সকালে রিজেন্ট পার্ক এলাকার আনন্দপল্লী পশ্চিমের বাসিন্দা দিলীপ সাহা নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সম্প্রতি বিজেপি সরকার এসআরআর করার মাধ্যমে ঘুরপথে এনআরসি কার্যকর করবে এমন আশঙ্কায় আতঙ্কে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। ১৯৭২ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। কলকাতা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করতেন তিনি। তাকে আবার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এই আতঙ্কেই নিজেকে শেষ করেছেন বলে দাবি পরিবারের ।
পরিবারের লোকজন দাবি করছেন, এনআরসি আতঙ্কে আট বছর ধরে আতঙ্কিত ছিলেন। সম্প্রতি এসআইআর ও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাদেশিদের ধরপাকড় নিয়ে তার আতঙ্ক চরমে পৌঁছায়। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সবসময় ভয়ে থাকতেন এবং এনআরসি আতঙ্কের কথা তিনি সকলকেই বলতেন। টিভিতে এনআরসি সংক্রান্ত ইস্যুতে খবর দেখে তার আতঙ্ক আরো চেপে বসে। পরিবারসহ তাকে যেকোনো সময় বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এই আতঙ্ক তাকে তাড়া করত। এই আতঙ্ক তাকে এতটাই গ্রাস করে ফেলে যে, আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় ক্ষুব্ধ মমতা
১২৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে জিততে পারবে কি ইংল্যান্ড?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্তত ৩০ বছর ধরে সপরিবারে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় থাকতেন দিলীপ কুমার সাহা। স্ত্রী-ছেলে-পুত্রবধূ নাতনি সকলকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করতেন তিনি। ছয় বোনের একমাত্র ভাই তিনি। সকলেই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। কলকাতায় এসে বিয়ে, সংসার ইত্যাদি হয় তাদের। এনআরসি ইস্যু এবং পুশব্যাক করে দেওয়ার আতঙ্ক তাড়া করত। এর জেরে তার শরীর খারাপ হয়েছিল।
রবিবার সকালে তাঁর স্ত্রী বেশ কয়েকবার দিলীপ সাহাকে ডেকেছিলেন। কিন্তু বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। এরপর তিনি পাশের একটি বাড়ি থেকে তার ভাগ্নিকে ডাকেন। এরপর তারা দরজা ভেঙে তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
এরপরই পরিবারের এক সদস্যের ভিডিওসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে আক্রমণ করা হয় বিজেপি সরকারকে।
পোস্টে রাজ্যের শাসক দলের তরফে লেখা হয়, “বিজেপির আতঙ্কে আত্মহত্যা কলকাতার টালিগঞ্জের এক বাসিন্দার। বিজেপি দেশজুড়ে যেভাবে বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ শুরু করেছে, বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসির নোটিশ পাঠাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে, এসআইআর করে ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে- এই সব কিছুর আতঙ্কে দিন গুজরান করতে করতে শেষমেষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এক বাসিন্দা। একটা জনবিরোধী, বাংলা-বিরোধী দল কীভাবে বাঙালিকে শেষ করে দিতে চাইছে নিজের চোখেই দেখুন, ছিঃ বিজেপি ছিঃ।”
এদিকে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “কেউ কোথাও আত্মহত্যা করলেই এনআরসি আতঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে শাসক দলের এত নেতা-কর্মী রোজ মারা যায় তাও কী আতঙ্কে মারা যাচ্ছেন?”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ