ইসলামপন্থীদের নিয়ে পাল্টা কৌশল নিচ্ছে বিএনপি
Published: 17th, August 2025 GMT
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইসলামপন্থীদের একজোট হওয়ার যে প্রচেষ্টা চলছে, তা বিএনপিকে ভাবনায় ফেলেছে। দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অনুপস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে ইসলামপন্থী ‘ভোটব্যাংক’ বিবেচনায় রেখে বিএনপিও পাল্টা কৌশল আঁটছে বলে জানা গেছে।
এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইসলামি দলের পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী ও প্রধান শায়খুল হাদিস শেখ আহমদ এবং শর্ষিনা দরবার শরিফের পীর শাহ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমদ হোসাইনের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির জন্য সবার দোয়া, পরামর্শ ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিএনপি সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার ধর্মীয় নেতা, বড় ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বা খানকা শরিফের পীর-মাশায়েখদের সঙ্গেও বিএনপির নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেবল বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারাই যে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তা নয়; অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতাদেরও দায়িত্ব দেওয়া হবে; যাতে ভোটের সময় বিএনপির প্রতি তাঁদের সমর্থন থাকে। বিশেষ করে, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সমর্থন যাতে কোনো পক্ষের দিকে একতরফা হয়ে না যায়।
নির্বাচনী রাজনীতি এখনো শুরুই হয়নি। আমরা ইসলামি দলসহ অন্যান্য দেশপ্রেমিক দলের সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী।জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার একটি প্রচেষ্টা প্রকাশ্যে এসেছে। বিএনপিসহ ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কওমি ঘরানার কয়েকটি দল মিলে এই নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ও তাঁর দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শেষ অবধি জামায়াতে ইসলামীও যুক্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর ধারণা। এর কারণ, গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বরিশালে দলীয় এক কর্মসূচিতে গিয়ে চরমোনাই পীরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সেখানে তিনি ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনতে চরমোনাই পীরের উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এরপর জামায়াতে ইসলামী এ বিষয়ে খুব তৎপরতা না দেখালেও দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে ভোটে ইসলামপন্থীদের ঐকমত্যে পৌঁছার আশাবাদ প্রকাশ পায়। সে লক্ষ্যে ভেতরে-ভেতরে কাজও করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ইসলামপন্থী দলের বাইরে অন্য দলগুলোকেও নির্বাচনী সমঝোতায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। ইসলামপন্থীদের সম্ভাব্য নির্বাচনী সমঝোতায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কথাও আলোচনায় আছে। যদিও এটি এখনো নিশ্চিত নয়। এনসিপির নেতাদের কারও কারও জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে আগ্রহ আছে বলে জানা গেছে।
অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী রাজনীতি এখনো শুরুই হয়নি। আমরা ইসলামি দলসহ অন্যান্য দেশপ্রেমিক দলের সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী।’
ইতিমধ্যে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার একটি প্রচেষ্টা প্রকাশ্যে এসেছে। বিএনপিসহ ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কওমি ঘরানার কয়েকটি দল মিলে এই নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে।অন্যদিকে সংস্কার সম্পন্ন করে তার ভিত্তিতেই নির্বাচন করার, অর্থাৎ সংস্কারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানের যে দাবি উঠেছে, তাতে এখন পর্যন্ত জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলো প্রায় এক সুরে কথা বলছে। সবকিছু মিলিয়ে ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনার যে তৎপরতা, এটি সফল হলে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলো বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, এমন কিছু হোক, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব চান না। এমনটা হলে সেটা বিএনপির জন্য বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্য দলের পক্ষ থেকে ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ বিশিষ্ট আলেমদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য স্থায়ী কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে।
সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি দল। সুতরাং একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে সমমনা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এবং তা দৃশ্যমান করতে হবে; যাতে আমাদের ব্যাপারে জনমনে বিরূপ ধারণা না হয় যে আমরা ইসলামপন্থীদের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছি। সে জন্য ইসলামি দল ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আমাদের প্রতি যে তাদের সমর্থন আছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে।’
জামায়াত বা চরমোনাইয়ের পীর তাদের নির্বাচনী সঙ্গী খুঁজছে। এটা তাদের নির্বাচনী কৌশল, এটা নিয়ে আমাদের কোনো বিরূপ ধারণা বা উৎকণ্ঠা নেই। সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে পাঁচটি দল নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অন্যতম। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এই দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির যে বৈঠক হয়, তাতে জমিয়ত অংশ নেয়নি। এ বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস ও নেজামে ইসলাম পার্টি অংশ নেয়। তবে এ বৈঠকে নতুন করে আরও দুটি দল যুক্ত হয়। দল দুটি হলো প্রয়াত মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (হাবিবুল্লাহ মিয়াজী) ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (আবদুল কাদের-সাখাওয়াৎ হোসাইন)।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী মনে করেন, নির্বাচনী সমঝোতায় পৌঁছার মতো পরিবেশ এখনো হয়ে ওঠেনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময় ঐক্যের ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই রকম পরিবেশ হয়ে ওঠেনি। আমরা যেভাবে, যে মাত্রায়, যে পন্থায় ঐক্য চাইছি, তাদের (ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলোর) কাছ থেকে সে রকম বার্তা পাইনি।’
ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেকের ধারণা, তাদের নির্বাচনী সমঝোতায় শেষ পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থাকবে না। জমিয়তের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত রাজনীতির যে গতি-প্রকৃতি, তাতে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী যে বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু জামায়াতের সঙ্গে ধর্মীয় আক্বিদাগত বিষয়ে দেশের হাক্কানি আলেমদের ঐতিহাসিকভাবে মতবিরোধ রয়েছে। সে কারণে জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ বিষয়ে জমিয়ত এখনো ঘোষণা না দিলেও শেষ পর্যন্ত দলটি বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে বলে জানিয়েছেন ওই নেতা। জমিয়তের এই নেতা ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আমরা সব সময় ঐক্যের ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই রকম পরিবেশ হয়ে ওঠেনি। আমরা যেভাবে, যে মাত্রায়, যে পন্থায় ঐক্য চাইছি, তাদের (ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলোর) কাছ থেকে সে রকম বার্তা পাইনি।জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীবিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান, বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের জোটবদ্ধ নির্বাচনের তৎপরতায় বিএনপিকে কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে। তাই দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। সে জন্য হেফাজতে ইসলামের আমিরসহ বিশিষ্ট আলেমদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্য ইসলামি দলগুলোর দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে যে কয়টা দল মিলে ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনতে নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া বাকি দলগুলো একসময় বিএনপির সঙ্গেই জোটে ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা বিএনপির জোট ছেড়ে যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে-পরে দলগুলোর অনেকের সঙ্গে বিএনপির নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নানাভাবে তৎপর ছিল।
এদিকে ইসলামপন্থীদের নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন যারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আদর্শিক বিরোধের কথা বলছে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন জামায়াতের সঙ্গেই জোটবদ্ধ ছিল। এখানে আদর্শিক কোনো বিরোধ নয়, তাদের একটি সিটের দরকার এবং জেতার নিশ্চয়তা দরকার। তারা মনে করছে, বিএনপির বাইরে গিয়ে তারা পাস করতে পারবে না, এটাই হলো আসল কথা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারা বিএনপির জোট ছেড়ে যায়। গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে-পরে দলগুলোর অনেকের সঙ্গে বিএনপির নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নানাভাবে তৎপর ছিল।বিএনপি সূত্র জানায়, নানা বাস্তবতায় বিএনপি এবার জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্য গড়তে এবং নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে প্রস্তুত। যদিও জামায়াত বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে বিএনপির নির্বাচনী অংশীদার ও রাজনৈতিক মিত্র শক্তি ছিল। কয়েক বছর ধরে দলটির সঙ্গে বিএনপি দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। এই শূন্যতা পূরণে জামায়াতের বিকল্প হিসেবে বিএনপি চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনকে রেখেছিল। এ লক্ষ্যে চরমোনাইয়ে বার্ষিক মাহফিলসহ দলটির অনুষ্ঠানাদির আমন্ত্রণে বিএনপির নেতারা অংশও নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ চেষ্টা কাজে লাগেনি; বরং সংস্কার, নির্বাচনসহ এ সময়ের আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বিএনপির প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে বিএনপি কিছুটা আশাহত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের বোঝাপড়ায় ভোটের মাঠে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিয়েও বিএনপির নেতৃত্বকে চিন্তা করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াত বা চরমোনাই পীর তাঁদের নির্বাচনী সঙ্গী খুঁজছেন। এটা তাঁদের নির্বাচনী কৌশল, এটা নিয়ে আমাদের কোনো বিরূপ ধারণা নেই, কোনো উৎকণ্ঠাও নেই।’
আওয়ামী লীগ ভোটে না থাকলে সে ভোটগুলো কোন দলের দিকে যাবে। আবার মাঠপর্যায়ে নানা কারণে বিএনপির ভাবমূর্তিও কমছে। এনসিপির সারা দেশে মাঠপর্যায়ের শক্তি কম হলেও তাদের একটা প্রভাব থাকবে। এ বিষয়গুলো ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।অবশ্য ইসলামপন্থী দলগুলোর ঐক্যের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে সন্দিহান এবারের নির্বাচনী সমঝোতার চেষ্টার সফলতা নিয়ে। কারও কারও ধারণা, বিএনপির সঙ্গে দর-কষাকষির জন্য কয়েকটি দল ইসলামপন্থীদের ভোট এক বাক্সে আনার তৎপরতার সঙ্গে আছে। এ বিবেচনায় কয়েকটি ইসলামি দলের নির্বাচনী ঐক্য প্রচেষ্টাকে বিএনপির জন্য বড় হুমকি মনে করেন না ইসলামবিষয়ক লেখক ও গবেষক শরীফ মুহাম্মদ। তিনি মনে করেন, এখানে বিএনপির দুশ্চিন্তা অন্য। সেটা হলো, আওয়ামী লীগ ভোটে না থাকলে সে ভোটগুলো কোন দলের দিকে যাবে। আবার মাঠপর্যায়ে নানা কারণে বিএনপির ভাবমূর্তিও কমছে। এনসিপির সারা দেশে মাঠপর্যায়ের শক্তি কম হলেও তাদের একটা প্রভাব থাকবে। এ বিষয়গুলো ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল মপন থ দ র ভ ট স ল হউদ দ ন আহমদ সমঝ ত র চ ষ ট ব এনপ র জন য চরম ন ই প র ব এনপ র ন ত প রথম আল ক ম ঠপর য য় ব এনপ র স ব এনপ র জ সমঝ ত য় য র জন ত ত এক ব ক স র জন ত ক ম হ ম মদ য় ব এনপ ৫ আগস ট দলগ ল র ল ইসল ম য ইসল ম ইসল ম র জন য স ত ক দল পর য য় উল ম য় কম ট র প রক শ আম দ র দলট র সদস য আওয় ম র একট এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।