চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ২০ মাসে প্রাণ গেল ৩০ জনের
Published: 4th, August 2025 GMT
কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরুর পর তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রেলপথ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নতুন নির্মিত এই রেলপথের ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬টিতে কোনো গেটম্যান এবং প্রতিবন্ধকতা বা ব্যারিয়ার নেই। এর ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে গত ২০ মাসে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর ১৭ জনের এবং চলতি বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেলপথের লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এবং রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে এসব মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় একটি হাতি।
সর্বশেষ গত শনিবার কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় এক পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। যে লেভেল ক্রসিংয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে, সেটি রেলওয়ের অনুমোদিত। তবে অরক্ষিত এই ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান ছিল না।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে। প্রথমে এক জোড়া ট্রেন চললেও এখন চলছে চার জোড়া ট্রেন।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চালু হলেও এর জন্য যে জনবল প্রয়োজনীয়, তা এখনো অনুমোদন দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। এখন প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ীভাবে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানের প্রয়োজন হবে, তা জরিপ করে ব্যবস্থা করা হবে।
সর্বশেষ গত শনিবার কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় এক পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। যে লেভেল ক্রসিংয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে, সেটি রেলওয়ের অনুমোদিত। তবে অরক্ষিত এই ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান ছিল না।৭২টির মধ্যে ৫৬টিই অরক্ষিত
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে প্রতিবন্ধক গেট বা ব্যারিয়ার এবং গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৫৬টিতে কোনো ব্যারিয়ার ও গেটম্যান নেই। অর্থাৎ এগুলো অরক্ষিত।
রেলওয়ের প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনে মোট ৯টি সেকশন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে ইসলামাবাদ-রামু সেকশনে। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেকশনে ১৭টি লেভেল ক্রসিং আছে। কিন্তু গেট ও গেটম্যান রয়েছে মাত্র একটিতে। বাকি ১৬টিতে কোনো ব্যারিয়ার বা গেটম্যান কিছুই নেই।
গত শনিবার বেলা পৌনে দুইটায় ইসলামাবাদ-রামু সেকশনের রশিদনগর লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এর আগেও গত বছরের ৯ নভেম্বর রামুর রশিদনগর এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবকের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পালাকাটা এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান এক মোটরসাইকেল আরোহী।
আরও পড়ুনইঞ্জিনে আটকে যাওয়া অটোরিকশাকে এক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় ট্রেন০২ আগস্ট ২০২৫রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, ট্রেন চালুর পর থেকে কক্সবাজারের সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলায় অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেট স্থাপন, গেটম্যান নিয়োগসহ নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
একই ধরনের দাবিতে গতকাল রোববার বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপককে চিঠি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ছাড়া রামু-কক্সবাজার সেকশনে আটটি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে গেটম্যান রয়েছে। ডুলাহাজারা-ইসলামাবাদ সেকশনের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে একটিতে। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ চকরিয়া-ডুলাহাজারা সেকশনে ৯টি ক্রসিং থাকলেও গেটম্যান আছেন ৩টিতে।
হারবাং-চকরিয়া সেকশনের ৪টির মধ্যে ২টিতে, লোহাগাড়া-হারবাং সেকশনের ৫টির মধ্যে ১টিতে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সেকশনের ৮টির মধ্যে ৩টিতে গেটম্যান আছেন। বাকিগুলো উন্মুক্ত। এ ছাড়া দোহাজারী-সাতকানিয়া সেকশনে ৮টির মধ্যে ৪টিতে এবং হাসিমপুর-দোহাজারী সেকশনের ১টি গেটে কোনো গেটম্যান নেই।
যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে যানবাহনের চলাচল বেশি ও ব্যস্ততম, সেগুলোতে অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা বা ব্যারিয়ার দিতে হবে। সার্বক্ষণিক গেটম্যান রাখতে হবে। আর বাঁকের কারণে যেসব সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় ট্রেন দেখা যায় না, সেখানেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম, সাবেক শিক্ষক, পুরকৌশল বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো.
যে লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রকৌশল বিভাগ জরিপ করবে বলে জানান মহাব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, যদি গেট ও গেটম্যানের প্রয়োজন হয়, তা অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সড়কে রেললাইনের পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। গতকাল বেলা দুইটায় লোহাগাড়ার আধুনগর ইউনিয়নেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও গ টম য ন গ টম য ন র ল ভ ল ক রস গ টম য ন ন জন র ম ত য স কশন র অরক ষ ত র লওয় র প রকল প ব যবস থ দ র ঘটন র জন য এল ক য় অন ম দ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন-অটোরিকশার সংঘর্ষে যেভাবে বেঁচে গেল সাড়ে তিন বছরের আতাউল্লাহ
একসঙ্গে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের সবাই ছিলেন শোকে কাতর। এরই মধ্যে হঠাৎ রাতে ফিরে এল এক শিশু। দুর্ঘটনায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে ভেবেছিলেন সবাই। শিশুটির অপ্রত্যাশিত এই বেঁচে যাওয়া শত শোকের মধ্যে যেন সান্ত্বনার পরশ পরিবারটির কাছে।
কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর রেলক্রসিংয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় এক পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছিল গতকাল শনিবার দুর্ঘটনার পর। হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও এক পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছিলেন। মৃতদের তালিকায় নাম ছিল সাড়ে তিন বছর বয়সের আতাউল্লাহরও। কিন্তু রাতে আতাউল্লাহকে নানাবাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যান শিশুটি যে মাদ্রাসায় পড়ে, সেখানকারই কেউ একজন। নানা জাফর আলম তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভেবেছিলেন দুই মেয়ে, নাতিদের কেউই বেঁচে নেই। আতাউল্লাহর এই ফিরে আসা তাই তাঁর কাছে ছিল অবিশ্বাস্য।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালীর সাবেক পাড়ায় জাফর আলমের বাড়ি। শনিবার দুপুরে সেখান থেকেই জাফর তাঁর দুই মেয়ে ও দুই নাতিকে বিদায় দিয়েছিলেন। ভারুয়াখালী থেকে তাঁরা ঈদগাঁও উপজেলার মেহেরঘোনায় যাচ্ছিলেন। সেখানে জাফরের বড় মেয়ে আসমাউল হোসনার শ্বশুরবাড়ি। মেয়ে ও নাতিদের বিদায় দেওয়ার আধঘণ্টা পরই জাফর দুর্ঘটনার কথা জানতে পারেন। দুর্ঘটনাস্থল রশিদনগরে ছুটে গিয়ে দেখেন খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়া দেহাবশেষ। অটোরিকশায় থাকা দুই মেয়ে ও দুই নাতি-নাতনির সবাই মারা গেছে বলে ভেবেছিলেন তখন। কিন্তু আতাউল্লাহর ফিরে আসার পর জানতে পারলেন, বেঁচে আছে তাঁর নাতি।
কিন্তু কীভাবে বেঁচে গেল আতাউল্লাহ? আজ রোববার সকালে মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাফর আলম। তিনি বলেন, অটোরিকশায় ঈদগাঁওয়ের মেহেরঘোনায় রওনা দেন তাঁর দুই মেয়ে আসমাউল হোসনা (২৭) ও রেণু আরা আক্তার (১৩) এবং আসমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে আতাউল্লাহ ও দেড় বছরের ছেলে আশেক উল্লাহ। খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, কেউই বেঁচে নেই। মারা গেছেন অটোরিকশাচালক হাবিব উল্লাহও (৫০)।
কক্সবাজারের রামুতে ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই মেয়ে ও এক নাতিকে হারিয়ে আহাজারি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাফর আলম। গতকাল বিকালে রামুর রশিদনগরে