ডাকসু নির্বাচনের ভোট গতানুগতিক পদ্ধতিতে কেন
Published: 4th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কেননা, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই ছাত্র সংসদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নেই ভূমিকা রাখে না, বরং এটি আগামী দিনের নেতৃত্ব গড়ে তোলারও একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদগুলোর প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঙ্গে তাদের কাজকর্মের বেজায় তফাত আছে, তবুও একটি নরমেটিভ জায়গা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে, সেই প্রত্যাশা করি।
ডাকসু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। মিডিয়ার খবর থেকে জানা যায়, এবারের ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রতিটি হলভিত্তিক ভোটকেন্দ্র ছাড়াও আরও ছয়টি অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে।
আমার প্রশ্নটি ঠিক এখানে, ডাকসু নির্বাচনের জন্য আদৌ কোনো ভোটকেন্দ্র করার দরকার আছে কি? এই ভোট কি গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাগজের ব্যালট পেপারের নেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে কি? পৃথিবীর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য অনলাইন পদ্ধতির ব্যবহার করছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন গতানুগতিক পদ্ধতিতে হাঁটছে?
দেখুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়েন বা এই নির্বাচনে যাঁরা ভোটার, তাঁদের কেউ ইন্টারনেট চালাতে পারেন না, এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। যেহেতু এই নির্বাচনের সব ভোটারই শিক্ষিত, তাহলে এই পুরো ভোট প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করলে সমস্যা কোথায়?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি উদ্যোগ নেয়, এই পুরো ভোটিং প্রক্রিয়াটিকে অনলাইনে আয়োজন করা সম্ভব। প্রত্যেক ভোটার যাঁর যাঁর আইডি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের ভোট সম্পন্ন করবেন, সেই ব্যবস্থাও করা সম্ভব। যদি এই পুরো ভোটিং সিস্টেমকে অনলাইনে নেওয়া হয়, তাহলে সেটির বহুমাত্রিক সুবিধা আছে।
প্রথমত, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের দিনে ভোটকেন্দ্র দখল-হামলা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে দেওয়া কিংবা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাগুলো স্বাভাবিক পর্যায়ের অপ্রত্যাশিত ঘটনা। যদি এই ভোটদানের পুরো আয়োজনটি অনলাইনে করা হয়, সে ক্ষেত্রে অন্তত ভোটের দিনের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোকে এড়ানো যাবে।
দ্বিতীয়ত, যেদিন ভোট হবে, সেদিন নিশ্চয় কোনো না কোনো ভোটারের সমস্যার কারণে তিনি ঢাকায় না-ই থাকতে পারেন। যদি অনলাইনে ভোটের আয়োজন করা হলে ওই ভোটার বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে-ই থাকুন না কেন, তিনি তাঁর ভোট দিতে পারবেন।
তৃতীয়ত, যদি অনলাইনে ভোট হয়, তাহলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই চাপমুক্তভাবে নিজের মতো করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তাঁকে কেউ প্রলুব্ধ বা প্রতারিত করার মতো সুযোগ পাবেন না।
এ ক্ষেত্রে ভোটদানের জন্য অন্তত সপ্তাহখানেক সময় দেওয়া যেতে পারে। এই সময়কালের মধ্যে প্রত্যেক ভোটার তাঁর সুবিধামতো সময়ে ভোট প্রদান করবেন। এই সময়ের মধ্যে চাইলে তিনি একাধিকবার তাঁর ভোট পরিবর্তনও করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে ভোটদানের হারও বাড়বে, তেমনিভাবে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীরাই নির্বাচিত হবেন।
যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়মিত ছাত্র সংসদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে নানা বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হয় না। তবে যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের এই পুরো প্রক্রিয়াকে অনলাইনে নিয়ে আসা যায়, তাহলে প্রতিবছরই এই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। বিদেশে পড়াশোনা সময় দেখেছি, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সব আয়োজন অনলাইনে সম্পন্ন করে।চতুর্থত, অনলাইনে ভোট আয়োজনের নির্মিত এই সিস্টেমকে পুনরাবৃত্তিভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই অনলাইনভিত্তিক সিস্টেমকে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলপর্যায়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনভিত্তিক প্রয়োজনীয় নির্বাচনের ব্যবহার করা যাবে। ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এতে প্রত্যেক ভোটারের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতাও বাড়বে।
পঞ্চমত, অনলাইনে ভোট হলে সেটি কাগজের ব্যবহার, নির্বাচনের আয়োজনের ব্যয় এবং অন্যান্য অনেক ফিজিক্যাল ঝুঁকিকে বহুলাংশে কমিয়ে আনবে, যা বাংলাদেশের ভোটের সংস্কৃতিতে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করবে।
কেউ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন, অনলাইনে ভোট হলে হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া ভোটারদের গোপনীয়তায় বড় চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়ের সহজ উত্তর হলো, প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যাকিং প্রতিরোধ ও ভোটারদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যথেষ্ট ক্যাপাসিটি আছে। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভালো একটি সিস্টেম ডেভেলপ করেছে, কাজেই ডাকসুর ৩৯ হাজার ভোটার ম্যানেজ করার মতো প্রযুক্তিগত সিস্টেম ডেভেলপ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে দেয়াললিখন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ভ টক ন দ র ন র জন য এই প র
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কারের জন্য জমা পড়েছে ৫ বাংলাদেশি সিনেমা
বাংলাদেশ থেকে অস্কারের বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে পাঠানোর জন্য জমা পড়েছে পাঁচটি সিনেমা। এর মধ্য থেকে একটি সিনেমাকে চূড়ান্ত করে অস্কারে পাঠাবে অস্কার বাংলাদেশ কমিটি।
৯৮তম অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক ভাষার সিনেমা বিভাগে পাঠানোর জন্য এ মাসের শুরুর দিকে ছবি আহ্বান করে বাংলাদেশের অস্কার কমিটি। ১৬ সেপ্টেম্বর ছিল সিনেমা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। নির্ধারিত সময়ে জমা পড়ে ৫টি সিনেমা: ‘সাবা’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘নকশিকাঁথার জমিন’, ‘প্রিয় মালতী ও ‘ময়না’। এর মধ্যে বাড়ির নাম ‘শাহানা’ ছবিটি বাংলাদেশে আজ মুক্তি পাবে। ‘সাবা’ মুক্তি পাবে ২৬ সেপ্টেম্বর। অন্য ছবিগুলো আগেই মুক্তি পেয়েছে।
অস্কার কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের (বিএফএফএস) সভাপতি জহিরুল ইসলাম। তিনি জানান, বিএফএফএস কর্তৃক গঠিত হয়েছে নির্বাচক কমিটি। এই কমিটি জমা পড়া চলচ্চিত্র পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনয়ন দেবে। তিনি বলেন, ‘যেসব নির্মাতা ও প্রযোজক তাদের কাজ দিয়ে যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করবে, তার চলচ্চিত্র জমা দেওয়া হবে।’
এই কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জমা পড়া সিনেমাগুলো বুঝে পেয়েছে। জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব শিগগির সিনেমাগুলো আমরা ব্যক্তিপর্যায়ে দেখা শুরু করব। সিনেমাগুলো একসঙ্গেও দেখা হবে। আগামী শনিবার থেকে সিনেমাগুলো দেখা ও পর্যালোচনা শুরু হবে। আগামী ২৬ তারিখের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দু-এক দিন পরেই সিনেমাটি আমরা বাংলাদেশ থেকে সাবমি করব।’
আরও পড়ুনবিদেশ ঘুরে এবার দেশে আসছে মেহজাবীনের ‘সাবা’০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫অস্কার কর্তৃপক্ষের কাছে সিনেমা পাঠানোর শেষ সময় ৩১ সেপ্টেম্বর। জহিরুল ইসলাম জানান, অনেক সময় টেকনিক্যাল জটিলতা থাকে। যে কারণে সময় হাতে রেখেই অস্কারে সিনেমা জমা দিতে চান তাঁরা। আগামী ১৬ ডিসেম্বর জানা যাবে, শর্টলিস্টের তালিকা। পরে ঘোষণা করা হবে অস্কারে মনোনীত ৫টি সিনেমার নাম। এর মধ্যে একটি সিনেমা সেরা আন্তর্জাতিক ছবির অস্কার জয় করবে।
আগামী ১৫ মার্চ বসবে ৯৮তম অস্কারের আসর।