‘আমার অন্ধত্বের কারণ শেখ হাসিনা’
Published: 4th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন পারভীন নামের এক নারী। আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ এই মামলার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে পারভীন জবানবন্দি দেন।
পারভীন বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর শিশু দুই ছেলেসন্তান আছে। গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আর ডান চোখে ঝাপসা দেখেন। কান্না করে পারভীন বলেন, ‘এক বছর কীভাবে কাটাইছি, কেউ খবর নিছে? বুড়া মানুষের মতো পইড়া আছি।’
জবানবন্দিতে পারভীন বলেন, তাঁর অন্ধ হওয়ার কারণ শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগেই যেন বিচার হয়। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও মানুষ হত্যা করবে।
পারভীন জবানবন্দিতে বলেন, ঢাকায় থাকার সময় তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো গত বছরের ১৮ জুলাই সকালে যাত্রাবাড়ীতে যান। সেখান থেকে লেগুনায় করে জুরাইন এলাকায় যান। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করে জুরাইন স্ট্যান্ডে যান। কিন্তু সেখানে কোনো গাড়ি না পেয়ে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। যাত্রাবাড়ী আসার পর দেখতে পান অনেক মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছেন। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে রক্তাক্ত ১৮–১৯ বছর বয়সী এক ছেলের কাছে যান। সেই ছেলেকে তুলে রিকশার খোঁজ করছিলেন। এমন সময় যাত্রাবাড়ী থানা থেকে ১৪–১৫ জন পুলিশ এসে তাঁদের গুলি করে। গুলি ছেলেটির পিঠে লেগেছিল। তিনি হাত তুলে গুলি না করতে বললে পুলিশ কাছে গিয়ে গুলি করে, যা তাঁর বাঁ চোখে লাগে। পুলিশ আরও গুলি করলে তাঁর তলপেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগে।
একপর্যায়ে সেই ছেলেসহ পড়ে যান উল্লেখ করে পারভীন বলেন, সেই ছেলে তাঁকে চেপে ধরে একটা শ্বাস নেন। তারপর তাঁর হাত ছেড়ে দেন এবং ছেলেটির শরীর ভারী হয়ে যায়। তিনি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। পরে মানুষ এসে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু ১৭ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ কেস বলে প্রথমে চিকিৎসা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ করেন পারভীন। তিনি বলেন, পরে মানুষের চাপে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর চোখের রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য আড়াই শ টাকার একটি ড্রপ আনতে বলে হাসপাতাল থেকে। তবে তাঁর কাছে টাকা ছিল না। অন্য একজন নারী সেই টাকা দেন। এরপর সেই ড্রপ তাঁর চোখে দেওয়া হয়। আর কোনো চিকিৎসা না দিয়ে সেই রাতে চিকিৎসকেরা চলে যান।
পারভীন বলেন, সেই রাতে এক নারীর মোবাইল দিয়ে তিনি তাঁর স্বামীকে ঘটনা জানান। তাঁর স্বামী পরদিন সকাল ১০টায় ঢাকায় আসেন। চিকিৎসকেরা তাঁর স্বামীকে অস্ত্রোপচারের জন্য কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বলেন। তাঁর স্বামী ঢাকার বাসায় গিয়ে কানের স্বর্ণের দুল বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসেন। সেই টাকায় অস্ত্রোপচার করে চোখ থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়। এর তিন–চার দিন পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁর চোখ ও শরীরে আরও গুলি দেখতে পান। তখন তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচারের কথা বললেও ৫ আগস্টের আগে এই হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি।
জবানবন্দি দেওয়ার পর পারভীনকে জেরা করেন এই মামলার আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো.
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে এই মামলার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। জবানবন্দি চলার সময় আজ তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।
এখন পর্যন্ত এই মামলায় তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন। পারভীন ছাড়া বাকি দুজন হলেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা হাসপাতালে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশ দেন, শুনতে পান ইমরান৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র অপর ধ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট