জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন পারভীন নামের এক নারী। আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ এই মামলার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে পারভীন জবানবন্দি দেন।

পারভীন বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর শিশু দুই ছেলেসন্তান আছে। গণ–অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে তাঁর বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আর ডান চোখে ঝাপসা দেখেন। কান্না করে পারভীন বলেন, ‘এক বছর কীভাবে কাটাইছি, কেউ খবর নিছে? বুড়া মানুষের মতো পইড়া আছি।’

জবানবন্দিতে পারভীন বলেন, তাঁর অন্ধ হওয়ার কারণ শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ গুলি করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগেই যেন বিচার হয়। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও মানুষ হত্যা করবে।

পারভীন জবানবন্দিতে বলেন, ঢাকায় থাকার সময় তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো গত বছরের ১৮ জুলাই সকালে যাত্রাবাড়ীতে যান। সেখান থেকে লেগুনায় করে জুরাইন এলাকায় যান। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করে জুরাইন স্ট্যান্ডে যান। কিন্তু সেখানে কোনো গাড়ি না পেয়ে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। যাত্রাবাড়ী আসার পর দেখতে পান অনেক মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছেন। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে রক্তাক্ত ১৮–১৯ বছর বয়সী এক ছেলের কাছে যান। সেই ছেলেকে তুলে রিকশার খোঁজ করছিলেন। এমন সময় যাত্রাবাড়ী থানা থেকে ১৪–১৫ জন পুলিশ এসে তাঁদের গুলি করে। গুলি ছেলেটির পিঠে লেগেছিল। তিনি হাত তুলে গুলি না করতে বললে পুলিশ কাছে গিয়ে গুলি করে, যা তাঁর বাঁ চোখে লাগে। পুলিশ আরও গুলি করলে তাঁর তলপেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগে।

একপর্যায়ে সেই ছেলেসহ পড়ে যান উল্লেখ করে পারভীন বলেন, সেই ছেলে তাঁকে চেপে ধরে একটা শ্বাস নেন। তারপর তাঁর হাত ছেড়ে দেন এবং ছেলেটির শরীর ভারী হয়ে যায়। তিনি তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। পরে মানুষ এসে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার শুরু ১৭ ঘণ্টা আগে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ কেস বলে প্রথমে চিকিৎসা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা হয় বলে উল্লেখ করেন পারভীন। তিনি বলেন, পরে মানুষের চাপে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর চোখের রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য আড়াই শ টাকার একটি ড্রপ আনতে বলে হাসপাতাল থেকে। তবে তাঁর কাছে টাকা ছিল না। অন্য একজন নারী সেই টাকা দেন। এরপর সেই ড্রপ তাঁর চোখে দেওয়া হয়। আর কোনো চিকিৎসা না দিয়ে সেই রাতে চিকিৎসকেরা চলে যান।

পারভীন বলেন, সেই রাতে এক নারীর মোবাইল দিয়ে তিনি তাঁর স্বামীকে ঘটনা জানান। তাঁর স্বামী পরদিন সকাল ১০টায় ঢাকায় আসেন। চিকিৎসকেরা তাঁর স্বামীকে অস্ত্রোপচারের জন্য কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে বলেন। তাঁর স্বামী ঢাকার বাসায় গিয়ে কানের স্বর্ণের দুল বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসেন। সেই টাকায় অস্ত্রোপচার করে চোখ থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়। এর তিন–চার দিন পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁর চোখ ও শরীরে আরও গুলি দেখতে পান। তখন তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচারের কথা বললেও ৫ আগস্টের আগে এই হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি।

জবানবন্দি দেওয়ার পর পারভীনকে জেরা করেন এই মামলার আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো.

আমির হোসেন। জেরায় এই আইনজীবী বলেন, ‘আপনি বলেছেন, আপনার অন্ধত্বের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা। এ কথা আপনার না। অন্য কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।’ জবাবে পারভীন এমন কথা সত্য নয় বলে দাবি করেন।

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে এই মামলার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ করেন যে আসামি; সাধারণত তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। জবানবন্দি চলার সময় আজ তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।

এখন পর্যন্ত এই মামলায় তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন। পারভীন ছাড়া বাকি দুজন হলেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা হাসপাতালে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ নির্দেশ দেন, শুনতে পান ইমরান৫ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র অপর ধ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

কদমরসুল সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে বন্দরে নাগরিক কমিটির সভা

একনেক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী কদম রসুল সেতু দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষে বন্দর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ৮ টায় বন্দর  শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্লাবে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কলামিষ্ট ফরিদ আহমেদ রবি।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি ডা. ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে  বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বার,দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সেন্টু,বাংলা টিভির নিউজ প্রেজেন্টার কাজী সাঈদ,বন্দর ২২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ ভূইয়া,দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার লতিফ রানা, নারায়ণগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সাবেক সাধারন সম্পাদক হৃদয় ভূইয়া প্রমূখ।

মত বিনিময় সভায় বক্তারা বলেন,নারায়ণগঞ্জে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী কদমরসুল সেতুর নকশা নিয়ে নাক গলাচ্ছেন। তিনি চান না সেতুটা হউক। অথচ নকশা নিয়ে কথা বলবে প্রকৌশলীরা। তিনি কি প্রকৌশলী? তিনি বলছেন এখান দিয়ে সেতু হলে যানযটের সৃষ্টি হবে। 

এতদিন আপনারা কি করেছেন। আসলে মুলত বন্দরকে সব সময় কিছু তথাকথিত সুশিলপ্রকৃতির লোক বিভাজন করে রাখতে চায় সব সময়। মুল ম্যাসেজ হচ্ছে বন্দরকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। বন্দর উন্নতি হলে তাদের সমস্যা।

যারা বন্দরের উন্নয়ণকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় প্রয়োজনে বন্দরের জনগনের নিয়ে তাদের কুশপুত্তলিকা তাহ করা হবে। কোন ভ্রষ্ট বামের কথা নারায়ণগঞ্জে চলবে না। পরিশেষে আমরা সকলকে নিয়ে বন্দরের উন্নয়ণের স্বার্থে সেতুর বাস্তবায়ণ চাই।### 

সম্পর্কিত নিবন্ধ