গিলের জয়ের আনন্দ, স্টোকসের আফসোস
Published: 4th, August 2025 GMT
ম্যাচ জিততে পারবেন, এই আত্মবিশ্বাস কি ছিল? ভারতের অধিনায়ক শুবমান গিলের উত্তর, হ্যাঁ ছিল।
হ্যারি ব্রুকেরও একই বিশ্বাস ছিল। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাইকেল আথারটনকে বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল আজকের দিনে। দুজন ভালো ব্যাটসম্যান ছিল (ক্রিজে)। ভেবেছিলাম, সহজেই জিতব।’
আরও পড়ুনওভালে অবিশ্বাস্য নাটক, ভারতের অসাধারণ জয়৫ ঘণ্টা আগেআত্মবিশ্বাস তো তাঁর থাকতেই হবে। ওভাল টেস্ট জিততে আজ শেষ দিনে হাতে ৪ উইকেট রেখে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫ রান। ক্রিজে জেমি স্মিথের মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যার এবং জেমি ওভারটনের মতো অলরাউন্ডার, যিনি কিনা ব্যাটিংটাও ভালো করেন। এ অবস্থায় ব্রুকদের জয়ের আত্মবিশ্বাস না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৬ রানে হারার পর এই টেস্ট না খেলা দলটির মূল অধিনায়ক বেন স্টোকস বলতে বাধ্য হলেন, ‘আমরা পারলাম না!’
ওভাল টেস্টে জয়ের পর ভারতের খেলোয়াড়দের উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অভ্যুত্থান-উত্তর সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষ নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে। যেসব কথা বললে জুলুম-জবরদস্তির শিকার হতে হতো, এমনকি গুম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত, তা অনায়াসে বলা যাচ্ছে। চারদিকে প্রচুর বয়ান তৈরির আয়োজন। মনে হচ্ছে, এত সব বয়ানের আড়ালে আমরা কি জরুরি সত্যটা হারিয়ে ফেলছি? ঠিক কী কারণে স্বৈরাচারের পতন ঘটল, অভ্যুত্থান–পরবর্তী এক বছরের ঘটনাবলি দেখে মনে হয়, আমরা যেন তা ভুলতে বসেছি।
অভ্যুত্থানের শক্তি এবং তার ব্যাপকতা দেখে অনেকেই ভেবেছিল, এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা রাজনৈতিক শক্তির কাজ হবে অভ্যুত্থানকে বিপ্লবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের জন্য তা সংগঠিত শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এমন প্রত্যাশাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষাই বলতে হবে। তবে এমন ভাবনা দুরূহ ছিল যে অভ্যুত্থানের অভাবনীয় ঘটনার পর নতুন এক কর্তৃত্ববাদ জনসংস্কৃতির ওপর চড়াও হবে এবং পরিকল্পিত মব–সহিংসতার মাধ্যমে বহু মানুষকে হত্যা করা হবে। এ রকম বহু ঘটনা ঘটতে পেরেছে। সুফি-সন্ত, পীর-দরবেশ ও বাউল-ফকিরদের আস্তানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে তাদের ফ্যাসিবাদী সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শে পরিণত করেছিল। শত্রু চিহ্নিত করার কাজে এক মোক্ষম অস্ত্র ছিল তাদের সেই নির্মিত বয়ান। আওয়ামী রেজিমের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সেই আওয়ামী বয়ানেরও পতন ঘটেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কোনোক্রমেই মুক্তিযুদ্ধের পতন নয়; কিংবা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিজয়ও নয়। যারা চব্বিশের অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করাচ্ছে, তারা একভাবে মুক্তিযুদ্ধের ফ্যাসিবাদী বয়ানেরই বৈধতা দিচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধকে আক্রমণ করে রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে। আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এই শক্তি ফ্যাসিবাদের স্মারক আইকনগুলো মুছে ফেলতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সব চিহ্ন ধ্বংস করতে চাইছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী বয়ান নয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং এর সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ আমাদের স্বাধীন সত্তার অংশ।
একটি সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ নির্মাণ করতে গিয়ে কেন জনসংস্কৃতির অন্য অভিব্যক্তিগুলো ধ্বংস করতে হবে? এ রকম চেষ্টার নামই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ। দলবদ্ধ হয়ে বাউল-ফকিরদের আস্তানায় হামলা, মাজার জ্বালিয়ে দেওয়া, ওরস অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, খানকা গুঁড়িয়ে দেওয়া নির্জলা সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ।যেসব ভাবাদর্শ কোনো দল বা শ্রেণিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে, সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ সেগুলোর একটি। অভ্যুত্থানের পর সব রাজনৈতিক দল যার যার মতো সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ নির্মাণ করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক এবং এটা ইতিবাচকও বটে। সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি হিসেবে উত্সব-অনুষ্ঠান সমাজে থাকা মানুষগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে, তাদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন সৃষ্টি করে, যা একটি রাষ্ট্রকে জনভিত্তির ওপর দাঁড় করায়। এ কারণে বৈশাখী শোভাযাত্রার মতো ঈদমিছিলের প্রত্যাবর্তনও আশাব্যঞ্জক ঘটনা। গজল, হাম্দ, নাত, কাওয়ালি, নাশিদের আয়োজনেও এ দেশের জনসংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু একটি সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ নির্মাণ করতে গিয়ে কেন জনসংস্কৃতির অন্য অভিব্যক্তিগুলো ধ্বংস করতে হবে? এ রকম চেষ্টার নামই সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ। দলবদ্ধ হয়ে বাউল-ফকিরদের আস্তানায় হামলা, মাজার জ্বালিয়ে দেওয়া, ওরস অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, খানকা গুঁড়িয়ে দেওয়া নির্জলা সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ।
২.
ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল হলো জনগোষ্ঠীর একটা অংশকে শত্রু হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া এবং তারপর অন্যদের ক্ষোভ ও হিংসাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে তাদেরকে অনুগত ও সংগঠিত করা। কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা সব সময় ফ্যাসিবাদের এই কৌশল কমবেশি ব্যবহার করে। ভারতে নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে মুসলমান জনগোষ্ঠীকে। এই কৌশল প্রয়োগে বিজেপি এতটাই সফল যে কারও কারও কাছে মানুষের চেয়ে গরুর জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পেরেছে। উত্তর প্রদেশের দাদরি লিঞ্চিংয়ের ঘটনা তার প্রমাণ। এই ঘটনা সংবেদনশীল মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি করেছে সন্দেহে দাদরিতে মোহাম্মদ আখলাক নামের এক গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। গোরক্ষা আন্দোলন, এনআরসি, সিএএ আইনসহ মুসলিমবিরোধী সব তত্পরতাই মোদির ফ্যাসিবাদী কৌশলের অংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদীদের প্রধান শত্রু হয়ে উঠেছে সুফি-দরবেশ, পীর-আউলিয়া, বাউল-ফকিরদের পাশাপাশি এ দেশের বামপন্থী ও নারীবাদীরা।
রায়হান রাইন: লেখক; অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়