‘এক বছরেও বিচার হলো না, হলে শান্তি পেতাম’
Published: 6th, August 2025 GMT
সাভারের সিআরপি রোডের ডগরমোড়ায় সাফওয়ান আখতার সদ্যর (১৫) ঘরটিতে আজও আছে তার চাঞ্চল্যময় জীবনের নানা চিহ্ন। দেয়ালে ঝোলানো টেবিল টেনিসের ব্যাট, কোণায় রাখা ক্রিকেট ব্যাট, তবলা আর হারমোনিয়াম। পড়ার টেবিলে বইখাতা, কিছু পুরোনো ডায়েরি। প্রতিদিন এসব স্পর্শ করে সন্তানের অস্তিত্ব খোঁজেন মা খাদিজা বিন জুবায়েদ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সদ্য। সেদিন দুপুরে বাবার সঙ্গে বের হয়েছিলেন, যোগ দেন সাভারের পাকিজা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আয়োজিত মিছিলে। বিকেল সোয়া ৩টার পর মা ফোন করে জানালেন, খেয়ে যেতে। সদ্য বন্ধুদের সঙ্গে থেকে যায়।
রাত সোয়া ৯টার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে স্ট্রেচারে শোয়ানো অবস্থায় ছেলের মৃতদেহ পান বাবা। মা খাদিজা বলেন, “রাত ৯টার দিকে ওর বাবা ফোন করে বললো, ‘তোমার ছেলেকে জীবিত পাই নাই, আমি তো একটা লাশ পেয়েছি।’”
শহীদ সদ্যের বাবা মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, “আমি ওকে বাবা ডাকতাম, ও আমাকে বাবা ডাকত। সেই ডাকটা আর কেউ দেয় না। আমাদের বাসায় শব্দ নেই, নিঃশব্দ এক শোকের হাওয়া বইছে। খাওয়ার সময়, ঘুমানোর সময়—সবসময় ওর কথা মনে পড়ে।”
তিনি বলেন, “এই জীবনে যতদিন বাঁচবো, ততদিন কোনো দিবস লাগবে না। ছেলের কথা প্রতিদিন মনে পড়ে, প্রতিটি মুহূর্তে।”
সন্তানের স্মৃতি ধরে রাখতে গড়ে তুলেছেন ‘শহীদ সদ্য ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী, বেকার ও দুঃস্থদের নিয়ে কাজ করছেন তারা।
তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও সদ্যর হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি। মা খাদিজা বিন জুবায়েদ বলেন, “এক বছরেও যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার হলো না। বিচার হলে অন্তত তার আত্মা শান্তি পেত, আমরাও শান্তি পেতাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। কিন্তু যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো, তারা তো কখনো জানতে চাইল না আমরা কী চাই, একবারও খোঁজ নেয়নি।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো কিংবদন্তি অধিনায়ক কস্তা আর নেই
পোর্তোয় মৃত্যুর ছোবল চলছেই!
এক মাসের একটু বেশি সময়ের ব্যবধানে নিজেদের সাবেক তিন ফুটবলারকে হারাল পর্তুগিজ ক্লাবটি। গত ৩ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পোর্তোর সাবেক উইঙ্গার দিয়োগো জোতা। তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভাও মারা যান একই দুর্ঘটনায়। সিলভাও পোর্তোর সাবেক ফুটবলার। কাল ক্লাবটির অনুশীলন সেন্টারে হৃদ্রোগে (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাঁদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী সাবেক অধিনায়ক জর্জ কস্তা। ৫৩ বছর বয়সী সাবেক এ সেন্টারব্যাকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পোর্তো।
আরও পড়ুননেইমারের ‘কামব্যাক’ জোড়া গোলে: ব্রাজিল দলে ফিরবেন কবে২০ ঘণ্টা আগেপোর্তোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পোর্তোর কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমানে পেশাদার ফুটবল পরিচালক কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টের শিকার হয়ে মঙ্গলবার মারা গেছেন।’
ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় পোর্তোয় কাটানো এবং ক্লাবটির হয়ে ২৪টি শিরোপাজয়ী কস্তা মঙ্গলবার সকালে অনুশীলন সেন্টারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান কস্তা।
পর্তুগিজ ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৯০ সালে মূল দলে সুযোগ পান ‘বিচো’ (অ্যানিমেল) নামে খ্যাতি পাওয়া কস্তা। ২০০৫ সাল পর্যন্ত পোর্তোয় থাকার মাঝে কিছুদিন ধারে খেলেছেন তিনটি ক্লাবে। বেলজিয়ামের স্ট্যান্ডার্ড লিয়েগ ক্লাবের হয়ে খেলে ২০০৬ সালে অবসর নেন কস্তা।
আটবার পর্তুগালের শীর্ষ লিগজয়ী সাবেক এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারে সেরা সময় ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। জোসে মরিনিও তখন পোর্তোর কোচ। ফাইনালে মোনাকোকে হারিয়ে ১৭ বছর পর পোর্তোকে ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন কস্তা-ডেকোরা।
কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পর্তুগালের সাবেক মিডফিল্ডার ডেকো লিখেছেন, ‘আজ (কাল) পর্তুগিজ ফুটবল এবং পোর্তো তাদের অন্যতম সেরা প্রতীককে হারাল। জর্জ কস্তা ছিলেন পোর্তোর চেতনার ধারক। একজন কিংবদন্তি অধিনায়ক, যিনি সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তোমার নাম চিরকাল স্মরণ করা হবে।’
আরও পড়ুনঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার হয়ে ‘শেষ’ ম্যাচটা খেলতে পারবেন তো মেসি০৫ আগস্ট ২০২৫পোর্তোর হয়ে ৩২৪ ম্যাচ খেলা কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তাঁর সাবেক কোচ মরিনিও। বর্তমানে ফেনারবাচে কোচের দায়িত্ব পালন করা এই পর্তুগিজ কোচ সংবাদ সম্মেলনে কস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি, ‘সে এখন আমার সঙ্গে কথা বলতে পারলে এটা বলত, সংবাদ সম্মেলন শেষ করুন, আগামীকালের ম্যাচটা খেলুন এবং জিতুন। আমাকে ভুলে যান। আজ এবং আগামীকাল নিজের কাজটা সারার সেই চেষ্টাই করব আমি। তারপর কাঁদব।’
ফুটবল ছাড়ার পর ১৬টি ক্লাবে কোচের দায়িত্ব সামলেছেন কস্তা। গত মৌসুমে পোর্তোয় ফেরেন ক্লাবটির পেশাদার ফুটবলের পরিচালক হিসেবে। পর্তুগালের হয়ে ৫০ ম্যাচ খেলা কস্তা তাঁর দেশের সোনালি প্রজন্মের ফুটবলার—লুইস ফিগো, রুই কস্তা, রুই বেন্তো ও লুইস মিগুয়েলদের সঙ্গে ১৯৯১ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি।
কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হয়, ‘এটা ধাক্কা।’ কস্তাকে ‘নিবেদন ও প্রতিশ্রুতির উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন মন্টেনেগ্রো।