টুঙ্গিপাড়ায় বিলের হাজার একর জমি ঘিরে মাছ চাষের ‘পাঁয়তারা’
Published: 8th, August 2025 GMT
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত চিথলিয়ার বিল। এই বিলের প্রায় এক হাজার একর জমি ঘিরে মাছ চাষের ‘পাঁয়তারা’ করার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
অভিযুক্তদের দাবি, তারা মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। স্ট্যাম্পে জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। নিয়ম মেনেই চলছে মাছ চাষ। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলায় রয়েছে ছোট-বড় অন্তত ২২৯টি বিল। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত চিথলিয়ার বিল। প্রায় এক হাজার একরের এ বিল ঘিরে রয়েছে চারটি গ্রাম। গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা অনেকাংশে এই বিলের ওপর নির্ভরশীল।
আরো পড়ুন:
সবজি, পেঁয়াজ, মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে
মাগুরায় ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিতে সফল উদ্যোক্তা লিজা
চিথলিয়ার বিলে বছরে একবার ধান চাষ করতে পারেন জমির মালিকেরা। এপ্রিলের শেষে বিল থেকে ধান কাটা হয়। তারপর বিলে পানি আসে। প্রাকৃতিকভাবে সেখানে মাছ, শাপলা ও ঘাস জন্মে। বিলের পাশে উত্তর বাঁশবাড়িয়া পাকুরতিয়া, চিথলিয়া ও লেবুতলা গ্রামের ৪০০ পরিবারের সদস্য ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত শাপলা, ঘাস ও মাছ আহরণ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
তাদের অভিযোগ, এই চিথলিয়ার বিলের ১ হাজার একর জমি জোর করে বানা ও পাটা দিয়ে ঘিরে মাছ চাষের পাঁয়তারা করছেন এলাকার প্রভাবশালী আনসার তালুকদার, দবির তালুকদার, কামাল মোল্যা, মেরাজ তালুকদার ও আকরাম শেখ। বিলের সরকারি খালের একপ্রান্তে তারা বানা দিয়ে খাল বরাবর বাঁশ দিয়ে পাটা দেন। ফলে জমির মালিকরা তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছিলেন না।
এ বিষয়ে উত্তর পাকুরতিয়া গ্রামের কাইয়ূম তালুকদার গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন গত ২৪ জুলাই খাল থেকে বানা-পাটা উচ্ছেদ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগকারী কাইয়ূম তালুকদারকে দখলকারীরা মারধর করেন। এরপর থেকে জমির মালিক ও বিলের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর সদস্যদের হুমকি ও মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। প্রভাবশালী চক্রটি ফের বিল ঘেরার তৎপরতা শুরু করেছে।
ভুক্তভোগী কাইয়ূম তালুকদার বলেন, “এলাকার প্রভাবশালী আনসার তালুকদার, দবির তালুকদার, কামাল মোল্যা, মেরাজ তালুকদার ও আকরাম শেখ চিথলিয়ার বিল দখল করে মাছের ঘের করার পায়তারা শুরু করেন। অথচ আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ দিলে প্রভাবশালীরা গত ২৫ জুলাই আমাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিলের জমির মালিক ও বিলের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমরা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব।”
উত্তর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের শিপন শেখ বলেন, “প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের চিথলিয়ার বিলে মাত্র দেড় একর জমি আছে। বাকি জমির মালিক চার গ্রামের মানুষ। তারা জমির মালিকদের সঙ্গে কথা না বলে জোর করে বিলের জমি ঘিরে মাছ চাষ করতে চাইছেন। এতে জমির
মালিকরা বাধা দিয়েছেন। তারা উল্টো ভয়ভীতি ও হামলা-মামলার হুমকি-ধমকি দিয়ে মাছ চাষ করতে চাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “গত বছর তারা এখানে মাছ চাষ করেছিলেন। তখন জমির মালিকদের লাভের টাকার ভাগ দেওয়ার কথা থাকলেও দেননি। সব টাকা তারাই নিয়েছেন। এ কারণে এ বছর জমির মালিকরা মাছ চাষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মাছ চাষের সময় তারা বিলের মাছ, শাপলা সংগ্রহ ও ঘাস কাটতে দিতেন না। এতে বিলের ওপর নির্ভরশীল ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
অভিযুক্ত দবির তালুকদার বলেন, “আমরা মালিকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছি। এ ব্যাপারে স্ট্যাম্পে জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। আমরা সরকারি খাল আটকাইনি। নিয়ম মেনেই মাছ চাষ করছি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।”
গত বছর জমির মালিকের টাকা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই বছর মাছ চাষে লস হয়েছে। এ কারণে জমির মালিকদের টাকা দিতে পারিনি। এ বছর চাষ করতে পারলে আশা করি লাভ হবে। জমির মালিকরা চুক্তি অনুসারে টাকা পাবেন।”
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ বাছাড় বলেন, “চিথলিয়া বিল দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি খাল থেকে পাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারি খালে বানা বা পাটা দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে কাউকে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ব ল র ওপর ন র ভরশ ল ম ছ চ ষ কর হ জ র একর চ ষ করত পর ব র উপজ ল অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে