Prothomalo:
2025-11-17@11:03:15 GMT

কৃষি সভ্যতার শেষ উত্তরসূরি

Published: 10th, August 2025 GMT

কৃষি সভ্যতার শেষ প্রান্তে শেখ মোহাম্মদ সুলতানের (এস এম সুলতান) সৃজনজগতের জন্ম। শিল্পবিপ্লব ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হওয়ার সময়পর্বে সুলতান উপস্থাপন করলেন এক ঐতিহাসিক সত্যের বয়ান। টেলস অব অ্যান আর্ট লাভার বইয়ের লেখক মারিও পালমা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ‘শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।’ বাংলাদেশে ইতালির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গভীর আগ্রহে গিয়েছিলেন সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। বামপন্থী রাজনীতির সাবেক এই কর্মী চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশে থাকা সুলতানের সৃষ্টিকে সামনাসামনি দেখার অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে নিতে। মারিও পালমার উল্লেখ করা ‘শিল্পবিপ্লবে’র কারণে বদলে গেছে বিশ্বব্যবস্থা। এর কারণেই হয়েছে কৃষি সভ্যতার পতন কিংবা রূপান্তর। এ রকম পটভূমিতে সুলতান কৃষজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমতার সমাজের প্রমাণ রেখেছেন সভ্যতার সর্বোচ্চ মাত্রার নিরিখে।

শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।মারিও পালমা

ব্রিটিশ কলোনির ভেতর দিয়ে বৈশ্বিক ও পশ্চিমা আধুনিকতার কাঠামোতে স্থানীয় আধুনিকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ভারতবর্ষে। এমন এক সময়পর্ব ও পরিস্থিতির মধ্যে সুলতান হয়েছিলেন প্রসারিত। এই সময়পর্বের মধ্যে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের জেরে তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন কৃষি সভ্যতা ও কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতি। তাঁর এই শিল্পভাষার সঙ্গে ‘স্থানীয় আধুনিকতা’ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। কৃষজ বাস্তবতার প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকার বাংলাদেশ পর্বে হয়েছে অনেক বেশি প্রকাশিত। এর আগে তিনি তৈরি হচ্ছেন কৃষজ জীবনের সাধারণ ভাষার কথা অসাধারণ করে বলতে।

বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে।

১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মানুষ জানতে পারল, মাটিতে বীজ রোপণ করে গাছের জন্ম হয়। এই অভিজ্ঞতা চর্চার মধ্য দিয়ে কৃষিকাজ করতে মানুষ থাকতে শুরু করল একটি নির্দিষ্ট স্থানে। বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় এই সমতল ভূমিতে যে জনপদ গড়ে উঠেছিল দীর্ঘদিনের পরিচর্যায়, তা একান্তভাবেই ছিল কৃষজ। মাটি-জল-মানুষের এমন অপূর্ব সৃজন আয়োজন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুলতানের এক একটা চিত্রপট। তাঁর এমন অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে জীবনে-যাপনে নিজের জন্যই তিনি তৈরি করেছিলেন এক জীবনধারা। সহজিয়া এই জীবনধারা ছিল তাঁর সাধনার পথ। ১৯৫১ সালে জলরঙে আঁকা ‘সাধক’ তাঁর সাধনার যাত্রার প্রাথমিক চিহ্ন। আশপাশের মানুষের চলমান জীবনে বাউল-ফকিরি ধারার একজন মানুষ বসে আছেন দর্শন লাভ করার অভিপ্রায়ে। জীবন থেকে পাওয়া এই উপলব্ধির কথাই আছে সুলতানের এ চিত্রে।

সাধক, জলরং, ১৯৫১.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ