Prothomalo:
2025-08-10@16:48:39 GMT

কৃষি সভ্যতার শেষ উত্তরসূরি

Published: 10th, August 2025 GMT

কৃষি সভ্যতার শেষ প্রান্তে শেখ মোহাম্মদ সুলতানের (এস এম সুলতান) সৃজনজগতের জন্ম। শিল্পবিপ্লব ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হওয়ার সময়পর্বে সুলতান উপস্থাপন করলেন এক ঐতিহাসিক সত্যের বয়ান। টেলস অব অ্যান আর্ট লাভার বইয়ের লেখক মারিও পালমা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ‘শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।’ বাংলাদেশে ইতালির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গভীর আগ্রহে গিয়েছিলেন সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। বামপন্থী রাজনীতির সাবেক এই কর্মী চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশে থাকা সুলতানের সৃষ্টিকে সামনাসামনি দেখার অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে নিতে। মারিও পালমার উল্লেখ করা ‘শিল্পবিপ্লবে’র কারণে বদলে গেছে বিশ্বব্যবস্থা। এর কারণেই হয়েছে কৃষি সভ্যতার পতন কিংবা রূপান্তর। এ রকম পটভূমিতে সুলতান কৃষজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমতার সমাজের প্রমাণ রেখেছেন সভ্যতার সর্বোচ্চ মাত্রার নিরিখে।

শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।মারিও পালমা

ব্রিটিশ কলোনির ভেতর দিয়ে বৈশ্বিক ও পশ্চিমা আধুনিকতার কাঠামোতে স্থানীয় আধুনিকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ভারতবর্ষে। এমন এক সময়পর্ব ও পরিস্থিতির মধ্যে সুলতান হয়েছিলেন প্রসারিত। এই সময়পর্বের মধ্যে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের জেরে তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন কৃষি সভ্যতা ও কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতি। তাঁর এই শিল্পভাষার সঙ্গে ‘স্থানীয় আধুনিকতা’ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। কৃষজ বাস্তবতার প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকার বাংলাদেশ পর্বে হয়েছে অনেক বেশি প্রকাশিত। এর আগে তিনি তৈরি হচ্ছেন কৃষজ জীবনের সাধারণ ভাষার কথা অসাধারণ করে বলতে।

বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে।

১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মানুষ জানতে পারল, মাটিতে বীজ রোপণ করে গাছের জন্ম হয়। এই অভিজ্ঞতা চর্চার মধ্য দিয়ে কৃষিকাজ করতে মানুষ থাকতে শুরু করল একটি নির্দিষ্ট স্থানে। বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় এই সমতল ভূমিতে যে জনপদ গড়ে উঠেছিল দীর্ঘদিনের পরিচর্যায়, তা একান্তভাবেই ছিল কৃষজ। মাটি-জল-মানুষের এমন অপূর্ব সৃজন আয়োজন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুলতানের এক একটা চিত্রপট। তাঁর এমন অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে জীবনে-যাপনে নিজের জন্যই তিনি তৈরি করেছিলেন এক জীবনধারা। সহজিয়া এই জীবনধারা ছিল তাঁর সাধনার পথ। ১৯৫১ সালে জলরঙে আঁকা ‘সাধক’ তাঁর সাধনার যাত্রার প্রাথমিক চিহ্ন। আশপাশের মানুষের চলমান জীবনে বাউল-ফকিরি ধারার একজন মানুষ বসে আছেন দর্শন লাভ করার অভিপ্রায়ে। জীবন থেকে পাওয়া এই উপলব্ধির কথাই আছে সুলতানের এ চিত্রে।

সাধক, জলরং, ১৯৫১.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষি সভ্যতার শেষ উত্তরসূরি

কৃষি সভ্যতার শেষ প্রান্তে শেখ মোহাম্মদ সুলতানের (এস এম সুলতান) সৃজনজগতের জন্ম। শিল্পবিপ্লব ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হওয়ার সময়পর্বে সুলতান উপস্থাপন করলেন এক ঐতিহাসিক সত্যের বয়ান। টেলস অব অ্যান আর্ট লাভার বইয়ের লেখক মারিও পালমা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, ‘শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।’ বাংলাদেশে ইতালির রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গভীর আগ্রহে গিয়েছিলেন সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। বামপন্থী রাজনীতির সাবেক এই কর্মী চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশে থাকা সুলতানের সৃষ্টিকে সামনাসামনি দেখার অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে নিতে। মারিও পালমার উল্লেখ করা ‘শিল্পবিপ্লবে’র কারণে বদলে গেছে বিশ্বব্যবস্থা। এর কারণেই হয়েছে কৃষি সভ্যতার পতন কিংবা রূপান্তর। এ রকম পটভূমিতে সুলতান কৃষজ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সমতার সমাজের প্রমাণ রেখেছেন সভ্যতার সর্বোচ্চ মাত্রার নিরিখে।

শিল্পবিপ্লব–পূর্ব বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হলে সুলতানের ছবি দেখতে হবে।মারিও পালমা

ব্রিটিশ কলোনির ভেতর দিয়ে বৈশ্বিক ও পশ্চিমা আধুনিকতার কাঠামোতে স্থানীয় আধুনিকতার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ভারতবর্ষে। এমন এক সময়পর্ব ও পরিস্থিতির মধ্যে সুলতান হয়েছিলেন প্রসারিত। এই সময়পর্বের মধ্যে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের জেরে তিনি দৃষ্টি দিয়েছেন কৃষি সভ্যতা ও কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতি। তাঁর এই শিল্পভাষার সঙ্গে ‘স্থানীয় আধুনিকতা’ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। কৃষজ বাস্তবতার প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকার বাংলাদেশ পর্বে হয়েছে অনেক বেশি প্রকাশিত। এর আগে তিনি তৈরি হচ্ছেন কৃষজ জীবনের সাধারণ ভাষার কথা অসাধারণ করে বলতে।

বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে।

১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মানুষ জানতে পারল, মাটিতে বীজ রোপণ করে গাছের জন্ম হয়। এই অভিজ্ঞতা চর্চার মধ্য দিয়ে কৃষিকাজ করতে মানুষ থাকতে শুরু করল একটি নির্দিষ্ট স্থানে। বাংলায় কৃষিকাজ হচ্ছে তিন হাজার বছর ধরে। এই বাংলাতেই জন্ম নেওয়া সুলতান বিশ্বভ্রমণ শেষে নড়াইলে নিজ গ্রাম মাছিমদিয়ায় ফিরলেন গত শতকের পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝিতে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় এই সমতল ভূমিতে যে জনপদ গড়ে উঠেছিল দীর্ঘদিনের পরিচর্যায়, তা একান্তভাবেই ছিল কৃষজ। মাটি-জল-মানুষের এমন অপূর্ব সৃজন আয়োজন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুলতানের এক একটা চিত্রপট। তাঁর এমন অবস্থায় উত্তীর্ণ হতে জীবনে-যাপনে নিজের জন্যই তিনি তৈরি করেছিলেন এক জীবনধারা। সহজিয়া এই জীবনধারা ছিল তাঁর সাধনার পথ। ১৯৫১ সালে জলরঙে আঁকা ‘সাধক’ তাঁর সাধনার যাত্রার প্রাথমিক চিহ্ন। আশপাশের মানুষের চলমান জীবনে বাউল-ফকিরি ধারার একজন মানুষ বসে আছেন দর্শন লাভ করার অভিপ্রায়ে। জীবন থেকে পাওয়া এই উপলব্ধির কথাই আছে সুলতানের এ চিত্রে।

সাধক, জলরং, ১৯৫১

সম্পর্কিত নিবন্ধ