ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, সন্ত্রাস দমন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ব্যর্থতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের সব অবদান ছাপিয়ে যাচ্ছে। এখন সন্ত্রাস দমনে সরকার যদি কঠোর না হয়, তাহলে আসন্ন নির্বাচনও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আজ রোববার দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছে, সেটা সত্য। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পুনরুদ্ধারে এক বছর যথেষ্ট সময়। পুলিশের পোশাক পরিবর্তনসহ সামগ্রিক সংস্কারের কথা শুরুতে আলোচিত হলেও সেটা করা হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার কারণ হিসেবে মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, পুলিশের বেশির ভাগ সদস্য ফ্যাসিবাদের সময়ে নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও এবং তাঁদের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও পুলিশ বাহিনীতে বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা হয়নি। দাগি আসামিদের কেবল চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তা–ও সংখ্যায় বেশি নয়। এর ফলে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ফ্যাসিবাদের দোসররা বহাল তবিয়তে আছে। সে কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ভয়ংকর নির্মমতায় ব্যবসায়ী হত্যা ও সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎসবমুখর নির্বাচন করার যে আশাবাদ প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্ত করেছেন, সেই আশার গুড়ে বালি পড়বে বলে ধরেই নেওয়া যায়।

ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা‍য় দেশি অস্ত্রের বিশাল মজুত উদ্ধার প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই শীর্ষ নেতা বলেন, এমন মজুত আরও কত জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ছে। জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সন্ত্রাস দমনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে ইউনুস আহমদ সরকারকে দ্রুত ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিন আহমদের

জাতিসংঘের প্রতিবেদন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য হিসাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এক বছর হয়ে গেলেও সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।

গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা অপূর্ণাঙ্গ উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে। আমরা দেখেছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের জন্য। অবশ্য এ তালিকাটা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে, এটা অপূর্ণাঙ্গ।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি আমরা জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে বলি, সেই তালিকা হওয়া উচিত চৌদ্দ শরও বেশি। কিন্তু তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এই তালিকা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলেছে এক হাজারের অধিক। কোনো কোনো হিসাবমতে সাতশ কতজনের কথা বলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেই তালিকাটা এখনো সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে পারিনি।’এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, সরকার পরিচালনা করছেন, তাঁদের আরও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু হাসপাতালের রেজিস্টার গায়েব করা হয়েছে, যেহেতু অনেক জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে, এগুলো উদ্‌ঘাটনের জন্য অবশ্য কিছু সময় লাগবে। তারপরও এ উদ্যোগটা নেওয়া উচিত। সেগুলোর খতিয়ান বের করতে হবে।’

আহত ব্যক্তিদের সঠিক হিসাবও বের করতে হবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্ট আমি তুলে ধরছি, ২০ হাজারের অধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। সেই রিপোর্টে সম্ভবত পাঁচ শতাধিক মানুষ দুই চোখের অন্ধত্ব বরণ করেছেন, রিপোর্টে লেখা আছে। সেই হিসাবটাও আমাদের বের করতে হবে। কারণ, দুই চোখের অন্ধত্ব যাঁরা বরণ করেছেন, তাঁদের হিসাবটা তো বের করা যায়। তাঁরা তো জীবিত আছেন।’

অসংখ্য মানুষ এক চোখ হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘তাঁরা সবাই জাতীয় বীর। আমরা তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, দলীয়ভাবে অবশ্যই আমাদের করণীয় পালন করব, ইনশা আল্লাহ।’

ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে আন্দোলনকারী সবাইকে ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু গত দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেবে বিএনপি।

রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্জিত হয় না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই রাষ্ট্রব্যবস্থাটা যারা পরিচালনা করবে, তাদের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। জনগণের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার হওয়া দরকার এবং এই সমাজের মানুষের, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের, সম্মিলিতভাবে সবার মানসিক সংস্কারের মধ্য দিয়েই আমরা যদি রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই দুয়ে দুয়ে চার হবে। তাহলেই আমরা একটা এই কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র পেতে পারব।’ সব দায়িত্ব সরকারের—এমন ধারণা ভুল বলেও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন, ২০১৫ সালে বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পঙ্গু হওয়া ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য দেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আবুল কাশেম, আমেরিকান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কো-চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে দুই চোখ হারানো সিকাতুল ইসলাম।

বক্তব্য শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি ভালো হয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিন আহমদের
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জামায়াতের আপত্তি নেই: তাহের
  • লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রের সন্ধান দিলে পুরস্কার: স্বরাষ্ট
  • মাজারে হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না: ধর্ম উপদেষ্টা
  • অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে 
  • আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
  • ২দিনে ৫ হত্যা, সরকার দায় এড়াতে পারে না: গণসংহতি আন্দোলন