জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিন আহমদের
Published: 10th, August 2025 GMT
জাতিসংঘের প্রতিবেদন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য হিসাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এক বছর হয়ে গেলেও সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা অপূর্ণাঙ্গ উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে। আমরা দেখেছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের জন্য। অবশ্য এ তালিকাটা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে, এটা অপূর্ণাঙ্গ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি আমরা জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে বলি, সেই তালিকা হওয়া উচিত চৌদ্দ শরও বেশি। কিন্তু তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এই তালিকা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলেছে এক হাজারের অধিক। কোনো কোনো হিসাবমতে সাতশ কতজনের কথা বলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেই তালিকাটা এখনো সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে পারিনি।’এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, সরকার পরিচালনা করছেন, তাঁদের আরও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু হাসপাতালের রেজিস্টার গায়েব করা হয়েছে, যেহেতু অনেক জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে, এগুলো উদ্ঘাটনের জন্য অবশ্য কিছু সময় লাগবে। তারপরও এ উদ্যোগটা নেওয়া উচিত। সেগুলোর খতিয়ান বের করতে হবে।’
আহত ব্যক্তিদের সঠিক হিসাবও বের করতে হবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্ট আমি তুলে ধরছি, ২০ হাজারের অধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। সেই রিপোর্টে সম্ভবত পাঁচ শতাধিক মানুষ দুই চোখের অন্ধত্ব বরণ করেছেন, রিপোর্টে লেখা আছে। সেই হিসাবটাও আমাদের বের করতে হবে। কারণ, দুই চোখের অন্ধত্ব যাঁরা বরণ করেছেন, তাঁদের হিসাবটা তো বের করা যায়। তাঁরা তো জীবিত আছেন।’
অসংখ্য মানুষ এক চোখ হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘তাঁরা সবাই জাতীয় বীর। আমরা তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, দলীয়ভাবে অবশ্যই আমাদের করণীয় পালন করব, ইনশা আল্লাহ।’
ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে আন্দোলনকারী সবাইকে ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু গত দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেবে বিএনপি।
রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্জিত হয় না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই রাষ্ট্রব্যবস্থাটা যারা পরিচালনা করবে, তাদের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। জনগণের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার হওয়া দরকার এবং এই সমাজের মানুষের, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের, সম্মিলিতভাবে সবার মানসিক সংস্কারের মধ্য দিয়েই আমরা যদি রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই দুয়ে দুয়ে চার হবে। তাহলেই আমরা একটা এই কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র পেতে পারব।’ সব দায়িত্ব সরকারের—এমন ধারণা ভুল বলেও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন, ২০১৫ সালে বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পঙ্গু হওয়া ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য দেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আবুল কাশেম, আমেরিকান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কো-চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে দুই চোখ হারানো সিকাতুল ইসলাম।
বক্তব্য শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ অন ষ ঠ ন পর ব র র ব এনপ র র সদস য কম ট র ব র কর আম দ র সরক র ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।
বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’
গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’
আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’
গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।
সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।