জাতিসংঘের প্রতিবেদন, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য হিসাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এক বছর হয়ে গেলেও সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।

গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা অপূর্ণাঙ্গ উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রের ক্ষমতা যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে। আমরা দেখেছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উদ্যোগ, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের জন্য। অবশ্য এ তালিকাটা নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে, এটা অপূর্ণাঙ্গ।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি আমরা জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে বলি, সেই তালিকা হওয়া উচিত চৌদ্দ শরও বেশি। কিন্তু তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এই তালিকা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলেছে এক হাজারের অধিক। কোনো কোনো হিসাবমতে সাতশ কতজনের কথা বলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেই তালিকাটা এখনো সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে পারিনি।’এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের যাঁরা দায়িত্বে আছেন, সরকার পরিচালনা করছেন, তাঁদের আরও একটু সচেতন হওয়া উচিত ছিল। যেহেতু হাসপাতালের রেজিস্টার গায়েব করা হয়েছে, যেহেতু অনেক জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে, এগুলো উদ্‌ঘাটনের জন্য অবশ্য কিছু সময় লাগবে। তারপরও এ উদ্যোগটা নেওয়া উচিত। সেগুলোর খতিয়ান বের করতে হবে।’

আহত ব্যক্তিদের সঠিক হিসাবও বের করতে হবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতিসংঘের রিপোর্ট আমি তুলে ধরছি, ২০ হাজারের অধিক গুরুতর আহত হয়েছেন। সেই রিপোর্টে সম্ভবত পাঁচ শতাধিক মানুষ দুই চোখের অন্ধত্ব বরণ করেছেন, রিপোর্টে লেখা আছে। সেই হিসাবটাও আমাদের বের করতে হবে। কারণ, দুই চোখের অন্ধত্ব যাঁরা বরণ করেছেন, তাঁদের হিসাবটা তো বের করা যায়। তাঁরা তো জীবিত আছেন।’

অসংখ্য মানুষ এক চোখ হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘তাঁরা সবাই জাতীয় বীর। আমরা তাঁদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, দলীয়ভাবে অবশ্যই আমাদের করণীয় পালন করব, ইনশা আল্লাহ।’

ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে আন্দোলনকারী সবাইকে ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু গত দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেবে বিএনপি।

রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্জিত হয় না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই রাষ্ট্রব্যবস্থাটা যারা পরিচালনা করবে, তাদের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। জনগণের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার হওয়া দরকার এবং এই সমাজের মানুষের, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের, সম্মিলিতভাবে সবার মানসিক সংস্কারের মধ্য দিয়েই আমরা যদি রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই দুয়ে দুয়ে চার হবে। তাহলেই আমরা একটা এই কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র পেতে পারব।’ সব দায়িত্ব সরকারের—এমন ধারণা ভুল বলেও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

অনুষ্ঠানে আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন, ২০১৫ সালে বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পঙ্গু হওয়া ছাত্রদল নেতা নয়ন বাছার প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য দেন আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আবুল কাশেম, আমেরিকান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কো-চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে দুই চোখ হারানো সিকাতুল ইসলাম।

বক্তব্য শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ রোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ অন ষ ঠ ন পর ব র র ব এনপ র র সদস য কম ট র ব র কর আম দ র সরক র ন করত

এছাড়াও পড়ুন:

৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। ভোট চলাকালেই বোঝা গিয়েছিল ১২ সংগঠনের ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ বিপুল ভোটে জিততে চলছে। কেননা, শিক্ষার্থীরা এ প্যানেল নিয়ে ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত।

নির্বাচনের পর ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান খবরের শিরোনাম ছিল—‘চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিপুল বিজয়’। আর দৈনিক আজাদী পত্রিকার শিরোনাম ছিল—‘চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের ধস নামানো জয়’। খবরে বলা হয়, ৯৯টি পদের মধ্যে ৮৮টিতে জয় পায় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

নির্বাচনের পর ছাত্রশিবির সংবাদ সম্মেলন করে। তারা কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলে। যদিও সেসব অভিযোগ পরবর্তী সময় ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বিজয় মিছিল বের করা হয়।

পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা সেই বিজয় মিছিলে অংশ নিতে শহীদ মিনারে যান। বিকেল চারটায় শুরু হয় বিজয় মিছিল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নগরের বিভিন্ন সড়ক। মিছিলটি নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, লাল দিঘীরপাড় থেকে সন্ধ্যায় আবার শহীদ মিনারে ফিরে যায়। চাকসুর নির্বাচিত নেতারাও যোগ দেন ওই বিজয় মিছিলে। নির্বাচনে ছাত্র ঐক্যের বিজয়ে একই দিন মিছিল বের হয় কুমিল্লায়। পরদিন ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে শত মাইল দূরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও আনন্দমিছিল হয়।

সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।আজিম উদ্দিন আহমদ, সাবেক জিএস, চাকসু

নির্বাচনের পর ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রধারা, ছাত্রপরিষদ, ছাত্র পরিষদ, ইসলামী যুব সেনা, প্রগতিশীল মানবতাবাদী ছাত্রজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘এই বিজয় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা শিক্ষার্থীদের বিজয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তৎকালীন উপসহসভাপতি জিয়াউল আহসান সে সময় বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘এ বিজয় সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার সূচনা করবে।’

সর্বদলীয় সভা শেষে ছাত্র ঐক্য

চাকসুর পঞ্চম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এতে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ফলে ষষ্ঠ নির্বাচনেও ছাত্রশিবির ছিল ‘কনফিডেন্ট’। অর্থাৎ তারা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে ছাত্রশিবিরের বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল ১২টি ছাত্রসংগঠন। সবাই মিলে গড়ে তুলেছিল ঐক্যবদ্ধ মোর্চা- সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন।

যে ১২ সংগঠনের মধ্যে ঐক্য হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ছাত্রলীগ (হাবিবুর রহমান-অসীম কুমার), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (আবদুস সাত্তার-মোশারফ হোসেন), ছাত্রলীগ (নাজমুল হক-শফি আহমেদ), ছাত্রলীগ (বজলুল রশীদ-আজম), জাতীয় ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র মৈত্রী, ঐক্য সমিতি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন। এর মধ্যে নাজমুল হক ও শফি আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ জাসদের সমর্থক ছিল।

সে সময় ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ সহজেই তৈরি হয়নি। স্মৃতিচারণা করে চাকসুর সর্বশেষ জিএস আজিম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে একদিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সর্বদলীয় সভা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) শাহ আলম, বাসদ নেতা বালাগাত উল্লাহ, জাসদ নেতা আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আজিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেদিন সভা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬টি বাসে শিক্ষার্থীরা জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসভবন ঘেরাও করেন। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য করা হয়েছিল মূলত শিক্ষার্থীদের চাপে। সর্বদলীয় সভায় ওই ঐক্য করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমাদের ডাকা হয়।’

চাকসু ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক মারা গেছেন
  • ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই
  • গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক
  • পিআর পদ্ধতিতে স্থায়ী সরকারব্যবস্থা হয় না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ৩৫ বছর আগে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচনে যা ঘটেছিল