সরকার, রাজনৈতিক দল সবার জন্য সতর্কবার্তা
Published: 7th, November 2025 GMT
চট্টগ্রামে জনসংযোগের সময় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার বাইরে দেখার সুযোগ নেই। বুধবার সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী খন্দকারপাড়ায় জনসংযোগ চলাকালে হঠাৎ এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনিসহ পাঁচজন আহত হন। নিহত হন তাঁর সঙ্গে থাকা সারোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে রাজনীতিতে এমনিতেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন ঘটনা আরও বেশি উদ্বেগজনক।
অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। চট্টগ্রাম পুলিশের তাৎক্ষণিক তদন্তের বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ হামলার টার্গেট ছিলেন না, বিক্ষিপ্তভভাবে ছোড়া গুলি তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মাইক্রোবাসে করে আসা সন্ত্রাসীরা জনসংযোগের ভিড়ে মিশে যায়, খুব কাছ থেকে গুলি করে সারোয়ারকে হত্যা করে, এরপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো, এরশাদ উল্লাহ না হয় টার্গেট ছিলেন না, কিন্তু তিনি তো গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ফিল্মি কায়দায় সন্ত্রাসীরা এসে যেভাবে গুলি চালিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে তারা পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা–ব্যর্থতা পরিষ্কার।
সারোয়ার হোসেন নামের যে তরুণ গুলিতে নিহত হয়েছেন, তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। এর আগে ৩০ মার্চ একটি প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সে সময় দুজন নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম একজন ‘সন্ত্রাসী’ কীভাবে একজন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় সঙ্গী হন? গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি জামিনে বের হন। সাম্প্রতিক সময়ে, বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশে তাঁকে দেখা গেছে। এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে কর্মসূচিতেও তিনি অংশ নিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, সারোয়ার বিএনপির কেউ নন। কিন্তু এটা কি সেই দায় এড়ানোর পুরোনো চর্চা নয়? সারোয়ারের কারণে যেভাবে আরও অনেকের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, তার দায়টা আসলে কে নেবে? গণ–অভ্যুত্থান যে নতুন জন–আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছে, সেখানে দেশের নাগরিকেরা পেশিশক্তিনির্ভর রাজনীতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এ উপলব্ধিতে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?
চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসংযোগে গুলির ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সতর্কবার্তা। নিশ্চিত করেই নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ৫ আগস্টের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার সুযোগে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কারাগার থেকে পালিয়ে যান, অনেকে জামিন পান। তাঁদের অনেকেই নতুন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়েছেন। আধিপত্য বিস্তার করতে তাঁরা সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া থানা ও কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটা বড় অংশও উদ্ধার করা যায়নি। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার যথেষ্ট উপাদান বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে।
শুধু মুখে নয়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সন্ত্রাসীরা যাতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয় না পায়, সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সন ত র স র বর ত ব এনপ জনস য
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর
দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরো ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সেনাসদরে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।
আরো পড়ুন:
‘নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল থাকবে’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
তিনি বলেন, “দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সে রূপরেখার মধ্যে সময়সীমাও দেওয়া আছে। আমরা আশা করি নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরো ভালো হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আারো স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান আরো বলেন, “সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সেটার ওপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে তার মধ্যে নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটাকে ফোকাসে রেখেই প্রশিক্ষণ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন এজ উই ফাইট'।”
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বাইরে আছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, “নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয় তাহলে আরো কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, “এর পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ১৫ মাস যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সেনাবাহিনী, এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ প্রতিদিন ফেস করেনি। এজন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।”
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহয়তায় নিয়জিত আছে এবং অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এই ১৫ মাস সেনাবাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে,” বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ