শুধু পান–সুপারিও কি জর্দা ও তামাক পাতার মতো ক্ষতিকর?
Published: 11th, August 2025 GMT
বাংলাদেশে পান, সুপারি, জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খইনি ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য মুখে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শহর ও গ্রামীণ উভয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিয়ে উৎসব, অতিথি আপ্যায়নেও পান–সুপারির আয়োজনকে সৌজন্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ২০ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। তামাকের ব্যবহার মুখের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পিরিওডোন্টাইটিস (দাঁতের সহায়ক হাড় ও নরম টিস্যুর রোগ) এবং দাঁতের ক্ষয় বা দাঁত পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মুখের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক বিশেষ করে এন-নাইট্রোসামিন (টিএসএনএএস) থাকে, যা মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনউড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও নামার সময় কেন ঘুমানো উচিত নয়৩০ ডিসেম্বর ২০২৩শুধু পান–সুপারি কী ক্ষতি করেজর্দা, গুল, সাদাপাতা ক্ষতিকর, সেটা পরীক্ষিত সত্য। অনেকে বলেন, ‘আমি তো শুধু পান খাই, জর্দা–সাদা পাতা খাই না।’ কিন্তু জর্দা ছাড়া শুধু পান-সুপারি খেলেও মুখগহ্বরের ক্ষতি হতে পারে। এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব নিচে তুলে ধরা হলো:
পানের পাতা প্রাকৃতিক উপাদান হলেও তা সুপারি, চুন, খয়ের ইত্যাদি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া হয়। এতে মুখের স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হয়। এ ছাড়া পান খেলে দাঁতে কালচে দাগ পড়ে বা স্টেইন হয়। পানের রং ও চুনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে দাঁতে স্থায়ী দাগ পড়ে, যা শুধু সৌন্দর্য নষ্ট করে না বরং দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে।
সুপারি বা সুপারির বীজ মুখে চিবানোর সময় দাঁতে ঘর্ষণ তৈরি করে। এ ঘর্ষণের ফলে দাঁতের গঠন ক্ষয় হতে পারে, যা পরে দাঁতের সংবেদনশীলতা ও ব্যথার কারণ হয়। এ ছাড়া সুপারিতে রয়েছে অ্যারেকলিন নামক রাসায়নিক, যা একটি সাইকোঅ্যাকটিভ উপাদান। নিয়মিত গ্রহণের ফলে এটি আসক্তি তৈরি করে।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন৬ ঘণ্টা আগেযাঁরা নিয়মিত সুপারি চিবিয়ে থাকেন, তাঁদের অনেকের ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রসিস নামের একটি সমস্যা হতে পারে। এতে মুখের ভেতরের টিস্যু শক্ত হয়ে যায়, ফলে মুখ পুরোপুরি খোলা যায় না। এটি একটি ক্যানসারপূর্ব অবস্থা, যা সময়মতো ধরা না পড়লে মুখগহ্বরের ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। শুধু সুপারিও মুখের কোষে জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
পানের অতিরিক্ত ব্যবহারে মুখে লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা পরে মুখের স্বাভাবিক স্বাদ গ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন পান খেলে মুখে টক বা তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চুন ও সুপারির সংমিশ্রণে গলা ও পাকস্থলীতেও সমস্যা দেখা দেয়।
ড.
অরূপ রতন চৌধুরী, ভিজিটিং প্রফেসর, ডেন্টাল সার্জারি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)