ষাটের দশকে বাংলা সিনেমার পর্দায় এক রাজকন্যা সুজাতা। ‘রূপবান’-খ্যাত এই অভিনেত্রী রোমান্টিক, সামাজিক ও পোশাকি—সব ধরনের সিনেমাতেই সমান সাফল্য পেয়েছেন। আলো-ঝলমলে দীর্ঘ অভিনয় জীবনের পথ পেরিয়ে আজ তার একমাত্র প্রার্থনা—দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সুজাতা বলেন, “দেশটাকে সুন্দর দেখতে চাই। দেশের মানুষগুলোকে ভালো দেখতে চাই। দেশ ও মানুষ ভালো থাকলেই আমি খুশি।”
নিজের জন্য কোনো চাওয়া আছে কি না এমন প্রশ্নে এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বলেন, “এই বয়সে যতটুকু থাকা যায় ততটুকুই আছি। শরীরে সমস্যা তো আছেই। তবে, আমার নিজের জন্য কোনো চাওয়া নেই। সব চাওয়া দেশের জন্য।”
আরো পড়ুন:
‘শরীর নয়, আমি ট্যালেন্ট বেচতে এসেছি’
সৈকত নাসিরের নয়া কৌশল
বাংলা চলচ্চিত্রে সুজাতার যাত্রা শুরু হয়েছিল রূপকথার আঙ্গিকে নির্মিত ব্যবসাসফল সিনেমা ‘রূপবান’ দিয়ে। এরপর একে একে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য স্মরণীয় সিনেমা—‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘অবুঝ মন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘আলোর মিছিল’, ‘এতটুকু আশা’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, ‘অবাঞ্চিত’সহ বহু জনপ্রিয় সিনেমা।
নায়ক আজিমের সঙ্গে তার পর্দার কেমিস্ট্রি ছিল তুমুল জনপ্রিয়। বাস্তব জীবনেও তারা জুটি বেঁধেছিলেন। আজিমের বিপরীতে অভিনীত ‘অবাঞ্চিত’, ‘টাকার খেলা’, ‘স্বর্ণকমল’—সবকটিই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই সিনেমাগুলোর গান যেমন—‘চোখ ফেরানো যায় গো মন ফেরানো যায় না’, ‘ওরে মন পাপিয়া’, ‘কে তুমি কথা কও বন্ধু আমার’।
নায়ক রাজ্জাকের বিপরীতেও সুজাতা ছিলেন সমান সফল। ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘এতটুকু আশা’, ‘অবুঝ মন’—এসব সিনেমার কালজয়ী গান যেমন: ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, ‘শুধু একবার বলে যাও আমি যে তোমার কত প্রিয়’।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)