এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি আমরা নিজেদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছি?
Published: 11th, August 2025 GMT
একটা সময় ছিল, যখন দুর্দিনে সঙ্গী হয়ে উঠতেন রক্ত–মাংসের মানব বন্ধুরা। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কথা বলার মানুষ ছিল বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সদস্য। নিজের সব আবেগ-অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেওয়া যেত তাঁদের কাছে। কিন্তু সময়টা এখন যেন বড্ড কঠিন। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় কোথায়?
প্রত্যেকে নিজেদের কাজে ব্যস্ত, অন্যের কথা শোনার জন্য সময় যেন কমে গেছে। আর তখনই হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে এআই, যে শুধু মনোযোগ দিয়ে সব কথা শোনেই না, মুহূর্তেই বের করে দিতে পারে সমাধান। হোক সেটা জটিল কোনো গাণিতিক সমস্যা কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সব কাজের কাজি সে।
এত দিন সবাই ধরে নিতেন, এআই বোধ হয় একটা কাঠখোট্টা চ্যাটবট বাদে আর কিছুই নয়। কিন্তু সেটা বদলে গেল যখন নিজের ব্যক্তিগত গল্প জুড়ে দিতে শুরু করলেন এআইয়ের কাছে। এআই শুধু মনোযোগ দিয়ে সে গল্প শুনলই না। বরং বুদ্ধিমান চ্যাটবটের মতো সে সমস্যার সমাধানও বের করে দিল।
কিন্তু তখনই একটা প্রশ্ন উঁকি দিল মাথায়। এআইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে কি আমরা নিজেদের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলছি? অজান্তেই কি থমকে যাচ্ছে আমাদের আবেগ অনুভূতি আর ভালোবাসা?
আরও পড়ুন২০৩০ নিয়ে চ্যাটজিপিটির কারিগর স্যাম অল্টম্যানের ভবিষ্যদ্বাণী, শুনলে নড়েচড়ে বসবেন১০ আগস্ট ২০২৫কিন্তু এআই কেনবুদ্ধিদীপ্ত উত্তর: এআই চ্যাটবট এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যাতে সে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিতে পারে। প্রতিটি সমস্যার সঠিক উত্তর দিতে পারাই এআইয়ের একমাত্র কাজ। আর সে কাজ করতে বিপুল পরিমাণ এনার্জিও খরচ হয়। আর যেহেতু এআইয়ের কাছে সব ধরনের তথ্য থাকেই, আর সেটা কাজে লাগিয়ে সে সাহায্য করছে ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানেও।
সহজলভ্যতা: এআই ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সময়। সপ্তাহে ৭ দিন, দিনে ২৪ ঘণ্টা চাইলেই এআই থাকে হাতের মুঠোয়। যখন যা দরকার, সময়ে–অসময়ে তাকে পাওয়া যায়। ব্যক্তিজীবনে সবাইকে যেকোনো সময় চাইলেও পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু এআইয়ের তো আর ঘুম, খাওয়া কিংবা ব্যক্তিগত কাজের প্রয়োজন হয় না। ফলে যখন দরকার হয় তখনই পাশে পাওয়ায় মনের কথা বলা হয়ে ওঠে সহজ।
ভুল–বোঝাবুঝির ঝুঁকি নেই: এআইয়ের কাছে মন খুলে কথা বলায় কোনো সামাজিক ঝুঁকি নেই। আপনার কথা ভুল বোঝা, আপনার আচার-আচরণকে বিচার করা কিংবা আপনার অনুভূতিকে পাত্তা না দেওয়ার মতো ঘটনা নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুনশুধু পান–সুপারিও কি জর্দা ও তামাক পাতার মতো ক্ষতিকর?৩ ঘণ্টা আগেএআই ব্যবহারের সমস্যাযে কারণে খুব অল্প সময়েই এআই কথা বলার উপযুক্ত সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এআই যে খুব ভালো সঙ্গী, তা–ও কিন্তু নয়। বরং এআই ভেঙে দিচ্ছে আপনার মানসিক শক্তি। কিন্তু কীভাবে?
অস্বস্তিকর দিকগুলো এড়িয়ে যাওয়া: এআই আপনাকে শুধু ভালো কথা বলে অনুপ্রাণিত করতে পারে। এককথায় সে আপনাকে কেবল ‘ভালো’ অনুভব করায়। কিন্তু আপনার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে না। ফলে কোনো সমস্যায় আপনার যদি ভুল থেকেও থাকে সেটা আর ধরা পড়ে না।
প্রকৃত সহানুভূতির অভাব: এআই যেভাবে সহানুভূতি প্রকাশ করে, সেটা কোনো মানুষের কাছ থেকে আসে না। যন্ত্র যেভাবে আপনাকে বুঝতে পেরেছে, সেভাবেই আপনাকে সান্ত্বনা দেয়। একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা মানে শুধু নিজের আবেগ–অনুভূতি প্রকাশ করা নয়; যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, অর্থাৎ শ্রোতা তাঁর নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতার আলোকে আপনাকে সাহায্যও করতে পারেন। যন্ত্র শুধু আপনার কথা অনুযায়ী আপনার করণীয় বলে দেয়। অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিচার-বিবেচনা করতে পারে না। কারণ, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো পরামর্শ কিংবা উপদেশের।
আত্মনির্ভরশীলতা হ্রাস পাওয়া: নিজের আবেগ–অনুভূতির ব্যাপারে এআইকে প্রশ্ন করতে করতে নিজে নিজে সমস্যা সমাধানের পথ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। ফলে ছোটখাটো সমস্যার জন্যও অনেকে এআইয়ের শরণাপন্ন হন।
আরও পড়ুনকিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন১০ ঘণ্টা আগেতাই বলে কি এআই ব্যবহার করবেন নানা, তা কিন্তু নয়। বরং এআইকে ব্যবহার করুন আপনার প্রয়োজনমতো। যেকোনো তথ্য কিংবা আরও অনেক জটিল কাজের প্রয়োজনে অবশ্যই এআই ব্যবহার করুন। কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যা বলা কিংবা বোঝার জন্য এআই নয়, আসল মানুষের কাছে যান। কারণ, একজন ব্যক্তি তাঁর আবেগ-অনুভূতি দিয়ে আপনাকে যতটুকু বুঝবেন, এআই তা কখনোই বুঝতে পারবে না।
সূত্র: এমএসএন
আরও পড়ুনছবিতে ছবিতে জেনে নিন ‘সাইয়ারা’র নায়িকা অনীত পাড্ডাকে২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এআই ব যবহ র এআইয় র সমস য ই এআই আপন র আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
অপতথ্য ও এআইয়ের অপব্যবহার রোধে আশা ও সীমাদ্ধতা, দুটিই দেখছে ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য এবং এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ ক্ষেত্রে আশা ও সীমাবদ্ধতা, দুটিই দেখছেন তিনি।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সানাউল্লাহ এ কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, তিনজন নির্বাচন কমিশনার এবং পাঁচটি দলের প্রতিনিধিরা এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।
সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী—উভয়ই নির্বাচনী আচরণবিধির আলোকে একটা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন, যেখানে তাঁরা আচরণবিধি প্রতিপালনের কথা বলেছেন। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করলে অপতথ্যের প্রভাব কমানো যাবে বলে ইসি মনে করে।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যতটুকু সক্ষমতা আমাদের আছে, এর পাশাপাশি সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে আমরা ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) যে প্ল্যাটফর্মটা আছে, সেটাও ব্যবহার করছি। তবে এটা খুব একটা সহজ কাজ নয় বর্তমান বিশ্বে। আমি ইসির পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইলেকটোরাল ম্যানেজমেন্ট বডির (নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা পর্ষদ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই উদ্বেগ এখন এটা যে কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপপ্রয়োগ, অপব্যবহার, এআইয়েরর অপব্যবহার রোধ করা হবে। তবে আমরা যদি সবাই সচেতন থাকি, তাহলে কিছুটা অবশ্যই করা সম্ভব।’
‘প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে’
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যের প্রবাহ থামানো যাবে না। কারণ, ৫০ শতাংশের বেশির উৎস ট্রেসই (শনাক্ত) করা সম্ভব নয়; কোত্থেকে উৎপত্তি হচ্ছে, এটাই বের করা যাবে না। এটা একটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। প্রায় ৫০ শতাংশের উৎস দেশের বাইরে। মেটাসহ (ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান) যতগুলো প্রোভাইডার আছে, এরা যে মানদণ্ডে একটা জিনিসকে সরিয়ে দেয়, সেই মানদণ্ডে বেশির ভাগই পড়ে না। তার মানে, চাইলেও সে সরাবে না কন্টেন্টটা।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথমত ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়িয়ে খারাপ তথ্যকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।...আমরা ভালো তথ্যের প্রবাহ বাড়াব, যেগুলো খারাপ তথ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেটা সরানো সম্ভব, তা সরানো, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তার পরিবর্তে একটা সঠিক তথ্য যথাযথ সময়ে তুলে ধরা; যাতে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কাজগুলো করব।’
ভোটার তালিকা ১৮ নভেম্বর
পোস্টাল ভোটিংয়ের নিবন্ধনের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার ইসি ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, একটা উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব।...যে প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই–বোনেরা ইতিমধ্যে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন, তাঁরা চাইলে ভোট দিতে পারবেন। পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ভোট দেওয়া যাবে।’
তবে গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হতে আবেদন করেছেন, আপাতত তাঁরা ভোট দিতে পারবেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ৩১ অক্টোবরের পর যাঁরা হচ্ছেন, তাঁদের নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, ১৮ নভেম্বর একটা ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘দেশের ভেতরে যদি কেউ এখনো বাদ পড়ে থাকেন ভোটার তালিকায়, তাঁদের জন্য সুযোগ আছে। কারণ, আমাদের তফসিল ঘোষণার পরও আমরা ভোটার তালিকার একটা ফাইনাল ইভেন্ট (সংস্করণ) বের করব। তখন পর্যন্ত আমরা কাউকে পেলে নিয়ে নেব।’